বিশ্বকাপ ফাইনালে আয়াবঙ্গা খাকার রান আউটটা মনে আছে? পুরুষদের ক্রিকেটে হলে লেগ আম্পায়ার নিশ্চিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন না। তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি ২-৩ মিনিট ধরে বিভিন্ন ক্যামেরায় সেই মুহূর্ত দেখতেন। একাধিক ক্যামেরায় দেখতেন। কয়েক বার ফাস্ট ফরোয়ার্ড বা রিওয়াইন্ড করাতেন। তার পর সিদ্ধান্ত দিতেন।
অভিযোগ, পুরোটাই বিজ্ঞাপন আদায়ের জন্য। এই ২-৩ মিনিট সময়ের মধ্যে টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠত একাধিক বিজ্ঞাপন। স্টেডিয়ামের ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডেও আউট-নট আউটের উত্তেজনা তৈরি করা হত। কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনালের আম্পায়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের জ্যাকলিন উইলিয়ামস তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে শুধু জেনে নেন, শ্রী চরণী ‘নো’ বল করেছেন কি না। নিশ্চিত হয়ে আউটের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন উইলিয়ামস। পরে দেখা গিয়েছে, রান আউট হওয়ার মুহূর্তে খাকার ব্যাট পপিং ক্রিজ়ের লাইন থেকে বড়জোর এক ইঞ্চি বাইরে ছিল!
পুরুষ বনাম মহিলা
পার্থক্য আরও আছে। রোহিতেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ১২৫ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। এত টাকা হয়তো সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার (এআইএফএফ) তহবিলেও নেই! হরমনপ্রীতদের বেলায় ৫১ কোটি।
যদিও এর কারণ, পুরুষ ও মহিলাদের ক্রিকেট থেকে বোর্ডের আয়ের তারতম্য। যদিও মোবাইলে এ বারের মহিলাদের বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং ২০২৪ সালে ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের দর্শকসংখ্যা (সাড়ে ১৮ কোটি) সমান, কিন্তু শুরুর দিকে এমনকি ভারতের ম্যাচগুলিতেও মাঠে বা মোবাইলে তেমন দর্শক হয়নি। ফলে মহিলাদের ক্রিকেট থেকে এখনও বোর্ডের আয় তুলনায় কম। আগ্রহ হয়তো বাড়ছে, আরও বাড়বে, কিন্তু তা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় না পৌঁছোলে এই ১২৫ কোটি-৫১ কোটির পার্থক্যটা থাকবেই।
এটা অনেকটা টেনিসের মতো। রজার ফেডেরার, নোভাক জোকোভিচ, কার্লোস আলকারাজ়দের ম্যাচ নিয়ে যে আগ্রহ থাকে, আমান্ডা আনিসিমোভা-কোকো গফদের মহিলা টেনিস নিয়ে সেই আগ্রহ এখনও নেই। সেরিনা উইলিয়ামসের মতো আকর্ষণীয় চরিত্র থাকলে আলাদা কথা। মহিলাদের ক্রিকেটেও একজন বিরাট কোহলি দরকার, কোনও সন্দেহ নেই। সেটা যত ক্ষণ না হচ্ছে, বোর্ডের কিছু করার নেই।
বিসিসিআই কোহলি-রোহিতদের মতো বার্ষিক চুক্তি করে হরমনপ্রীত-মন্ধানাদের সঙ্গেও। সেখানেও ফারাক রয়েছে। এবং সেটা বাণিজ্যিক কারণেই। পুরুষদের মতো ‘এ প্লাস’ ক্যাটেগরি নেই মহিলাদের ক্ষেত্রে। ‘এ প্লাস’ ক্যাটেগরিতে থাকলে কোহলি-রোহিতেরা বছরে পান ৭ কোটি টাকা। ‘এ’ ক্যাটেগরিতে থাকলে ক্রিকেটারেরা পান বছরে ৫ কোটি টাকা। ‘বি’ ক্যাটেগরির ক্রিকেটারেরা বছরে ৩ কোটি টাকা পান। ‘সি’ ক্যাটেগরিতে থাকা ক্রিকেটারেরা বছরে পান ১ কোটি টাকা। হরমনপ্রীত-মন্ধানারাও টাকা পান বিসিসিআইয়ের কাছ থেকে। তাঁদের জন্য বরাদ্দ ১০ ভাগের এক ভাগ। ‘এ’ ক্যাটেগরিতে থাকলে তাঁরা বছরে পান ৫০ লাখ টাকা। ‘বি’ ক্যাটেগরিতে থাকলে পান ৩০ লাখ টাকা। আর ‘সি’ ক্যাটেগরিতে থাকলে পান ১০ লাখ টাকা।
তবে সাম্য রয়েছে ম্যাচ ফির ক্ষেত্রে। টেস্ট, এক দিনের ম্যাচ এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললে ম্যাচ ফি হিসাবে রোহিত-হরমনপ্রীতেরা পান যথাক্রমে ১৫ লাখ, ৬ লাখ এবং ৩ লাখ টাকা করে। সমকাজে সমবেতন। নারী-পুরুষ বৈষম্য এ ক্ষেত্রে করেন না বোর্ডকর্তারা। সবটাই দেখা হয় ব্যবসায়িক দিক থেকে। কোহলি-রোহিতদের ক্রিকেটে ব্যবসা বেশি, তাই পুরস্কারমূল্য বা বার্ষিক চুক্তির টাকাও বেশি। ব্যবসার মূলে জনপ্রিয়তা। মেয়েরা বিশ্বকাপ জেতার আগে পর্যন্ত ক্রিকেটপাগল ভারতীয়দেরও মাতামাতি ছিল শুধু কোহলি-রোহিতদের নিয়ে। হরমনপ্রীত-মন্ধানারাও একই খেলা খেলেন। একই পরিশ্রম করেন। পার্থক্য বলতে, বিশ্ব পর্যায়ে এত দিন তাঁদের বলার মতো সাফল্য ছিল না। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ১৯৩২ সালে প্রথম টেস্ট খেলা ভারতের পুরুষ ক্রিকেটারদেরও প্রথম বড় সাফল্য পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৫১ বছর।
২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। ছবি: পিটিআই
আগে দরকার সাফল্য
সাফল্যই জনপ্রিয়তা নির্ধারণ করে। তার পিছু নেয় ব্যবসা। কপিল দেব, সুনীল গাওস্করেরা ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ, ১৯৮৫ সালে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ ক্রিকেট জেতার পর এ দেশে ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়েছে। ঠিক যেমন ইংল্যান্ডের মহিলা ফুটবল। ২০২২ সালে লে উইলিয়ামসন, ক্লো কেলিরা ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বদলে গিয়েছে ব্রিটেনের মহিলা ফুটবলের ছবি। তাঁরা এখন আর শুধু ফুটবলার নন। ফুটবলপ্রেমীরা কাছে তাঁরা সিংহী, ‘লায়নিজ়’। আগ্রহী হয়েছেন ক্রীড়া সংগঠকেরা। বহুজাতিক সংস্থাগুলিও আগের চেয়ে অনেক বেশি বিনিয়োগ করছে। ফল? ২০১৬-১৭ মরসুমে ইংল্যান্ডে নথিভুক্ত মহিলা ফুটবল দলের সংখ্যা ছিল ৫৬৩২টি। ২০২৩-২৪ মরসুমে সেই সংখ্যা ১২,১৫০। সাত বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে মহিলাদের নথিভুক্ত ফুটবল দলের সংখ্যা। এই সাত বছরে ইংল্যান্ডের প্রথম ১৫টি মহিলাদের ফুটবল দলের আয় বেড়েছে গড়ে ৬১ শতাংশ। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবও এখন মহিলাদের ফুটবলে বিনিয়োগ করতে কার্পণ্য করে না। মহিলা ফুটবলারদের আয় বেড়েছে কয়েক গুণ। দর্শকসংখ্যায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার দিকে দৌড়োচ্ছে মহিলাদের ফুটবল লিগ। দলের সংখ্যা ১৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২। ২০ বছর আগে ছিল আট।
উৎসাহ বেড়েছে ছোট মেয়েদেরও। গত সাত বছরে কয়েক হাজার মেয়েকে ফুটবল খেলতে পাঠিয়েছেন বাবা-মায়েরা। সবাই ভাল ফুটবলার হতে না পারলেও মেয়েদের সার্বিক শারীরিক সক্ষমতা এবং ফিটনেস বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে ইংল্যান্ডের কিশোরীদের বড় অংশ।
বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে ভারতীয় দল। ছবি: পিটিআই
গত সাত বছরে ছবি বদলালেও পুরুষদের ফুটবলের চেয়ে এখনও অনেক পিছিয়ে মহিলাদের ফুটবল। জনপ্রিয়তা, বিনিয়োগ, মুনাফা, সম্প্রচারস্বত্ব— সব ক্ষেত্রেই। তবু এফএ বিপুল আয় করছে। অথচ এই এফএ ৫১ বছর ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ করে রেখেছিল মহিলাদের ফুটবল! টাকার গন্ধ পেয়ে এখন যত্ন নিচ্ছে! প্রভাব পড়েছে জার্মানি, স্পেন, পর্তুগালের মতো দেশগুলিতেও।
বাড়ছে ব্র্যান্ড ভ্যালু
দু’দিন আগে হরমনপ্রীতের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সমাজমাধ্যমে। তাঁর টি-শার্টের পিঠে লেখা ছিল, ‘‘ক্রিকেট ইজ় আ জেন্টলম্যান’স এভরিওয়ান’স গেম।’’ লেখাটির ‘আ জেন্টলম্যান’স’ অংশটি ‘স্ট্রাইক থ্রু’ বা কাটা। নিছক মজা। বলতে চাওয়া হয়েছে, ক্রিকেট এখন আর শুধু ভদ্রলোকের খেলা নয়, সকলের খেলা।বিশ্বকাপ জিতে হয়তো এ ভাবেই বোর্ডের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।
ভুল করেননি হরমনপ্রীত। তাঁরাও যে কোহলি-রোহিতদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন, তা অনুভব করতে শুরু করেছে বিভিন্ন এনডোর্সমেন্ট এজেন্সি। বিশ্বকাপ জয়ের পর মহিলা ক্রিকেটারদের ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ বাড়তে শুরু করেছে। দলের প্রত্যেকের ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়েছে ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ। ‘বেসলাইন ভেঞ্চার’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তুহিন মিশ্র বলেছেন, ‘‘সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন সংস্থা খোঁজখবর শুরু করে দিয়েছে। সব সংস্থাই বিশ্বজয়ী দলের ক্রিকেটারদের চাইছে বিজ্ঞাপনের মুখ হিসাবে। এর মধ্যেই আমাদের মহিলা ক্রিকেটারদের এনডোর্সমেন্ট ফি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।’’ ‘জেএসডব্লিউ স্পোর্টস’-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার কর্ণ যাদব বলেছেন, ‘‘বিজ্ঞাপনের বাজারে জেমাইমা রদ্রিগেজ়ের চাহিদা সবচেয়ে বেড়েছে। অন্তত ১০-১২ রকম পণ্যের বিভিন্ন সংস্থা জেমাইমাকে প্রচার দূত করতে চায়। বাকিদের জন্যও প্রচুর ফোন আসছে। আমাদের দফতরে সমানে ফোন আসছে। জেমাইমার ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়ে গিয়েছে ১০০ শতাংশ।’’
সূত্রের খবর, জেমাইমাকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করাতে হলে অন্তত ১.৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে এখন। বিশ্বকাপের আগেও লাগত ৭৫ লাখ টাকা। মন্ধানার চাহিদা আগে থেকেই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ১৬টি সংস্থার বিজ্ঞাপনের মুখ ছিলেন তিনি। তাঁর চাহিদাও অনেক বেড়েছে। প্রতিটি বিজ্ঞাপনের জন্য এখন অন্তত ২ কোটি টাকা পেতে পারেন তিনি। যা আগে ছিল ১.৫ কোটি টাকা।
বিশ্বকাপ নিয়ে ভারতীয় দলের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই
প্রভাব পড়তে পারে মহিলাদের প্রিমিয়ার লিগেও। এত দিন পর্যন্ত সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ছিলেন মন্ধানা। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু তাঁকে ৩.৪ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছিল। একটি দল ক্রিকেটার কেনার জন্য সর্বোচ্চ খরচ করতে পারত সর্বোচ্চ ১৫ কোটি টাকা। অন্তত ১৫ জনের দল তৈরি করতে হয়। অন্য দিকে, আইপিএলে ঋষভ পন্থ পান ২৭ কোটি টাকা। দলগুলি ক্রিকেটারদের জন্য খরচ করতে পারে সর্বোচ্চ ১২০ কোটি টাকা। আশা করা হচ্ছে, বিশ্বজয়ের পর মহিলাদের প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে আগ্রহ বাড়বে। জনপ্রিয়তা বাড়বে। আরও বেশি আয়ের সুযোগ পাবেন হরমনপ্রীত-মন্ধানারা। ক্রিকেটারদের আয় বাড়তে পারে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ। কারও ক্ষেত্রে তারও বেশি।
দৃষ্টান্ত ১৯৮৩, ২০২২
বিশ্বজয়ের পরের দিন ঝুলন গোস্বামী বলেছেন, ‘‘এই একটা ট্রফি কিন্তু ভারতীয় ক্রীড়াজগতে বিপ্লব এনে দেবে। ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের দল বিশ্বকাপ জেতার পরে ভারতীয় ক্রীড়ার মানচিত্রটা বদলে গিয়েছিল। আমি নিশ্চিত হরমনপ্রীতদের এই বিশ্বকাপ জয় নতুন দিশা দেখাবে মেয়েদের। জোয়ার আসবে মেয়েদের ক্রিকেটে।’’
ইংল্যান্ডে মহিলাদের ফুটবলকে বদলে দিয়েছে ২০২২ সালের ইউরো কাপ। ভারতেও মহিলাদের ক্রিকেটকে বদলে দিতে পারে বিশ্বকাপ। ১৯৮৩ পারলে ২০২৫ কেন পারবে না? তখন সমাজমাধ্যমের অস্তিত্ব ছিল না। টেলিভিশন সহজলভ্য ছিল না। তবু জনপ্রিয় হয়েছিল ক্রিকেট। সেই ক্রিকেটই আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে হরমনপ্রীত-মন্ধানাদের হাত ধরে। ডায়না এডুলজি, পূর্ণিমা রাও, শুভাঙ্গী কুলকর্ণী, অঞ্জুম চোপড়া, মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীদের পর ভারতের মহিলা ক্রিকেট এখন হরমনপ্রীতদের হাতে। এই সাফল্য এক দিনে আসেনি। ২০০৫, ২০১৭ সালে ফাইনালে উঠেও ট্রফি জিততে পারেনি ভারত। এ বার পেরেছে। মহিলাদের ক্রিকেটের এই পরিবর্তনের বহু পর্বের সাক্ষী ঝুলন বলেছেন, ‘‘অনেক বছর ধরে মেয়েদের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে আছি বলে জানি, খেলাটা কী ভাবে বদলে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে আমরা যখন বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে দেশে ফিরে আসি, তখন আমাদের দারুণ ভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল। আমরা ট্রফি জিততে না পারলেও বুঝেছিলাম, মেয়েদের ক্রিকেট নতুন একটা দিশা পেয়েছে। এর পরে ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে ভারত। ওখানেও শেষরক্ষা হয়নি। কিন্তু মেয়েদের ক্রিকেট যে সামনের দিকে এগোচ্ছিল, তা বোঝা গিয়েছিল।’’
বিশ্বকাপ জেতার পর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি জেমাইমা রদ্রিগেজ়। ছবি: পিটিআই
ডব্লিউপিএলে দর বাড়বে
২৭ নভেম্বর মহিলাদের আইপিএলের নিলাম। সেখানে ক্রিকেটারদের দর যে গত বারের থেকে অনেকটাই বাড়বে, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নিলামের আগে রিটেনশন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে হরমনপ্রীতের দর গত তিন বছরে যেখানে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ছিল, সেখানে এ বার মুম্বই তাঁকে রেখেছে সাড়ে ৩ কোটি টাকায়। পকেট ভারী হয়েছে স্মৃতি মন্ধানারও। ১০ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে তাঁকে সাড়ে ৩ কোটি টাকায় ধরে রেখেছে বেঙ্গালুরু। ঝুলন আগেই ডব্লিউপিএল নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। এ বার আরও আশাবাদী তিনি। বলেছেন, ‘‘ডব্লিউপিএল বিশ্ব জুড়ে মেয়েদের ক্রিকেটের মানচিত্রটা বদলে দিয়েছে। আর এ বার ঘরের মাঠে এই ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় আগ্রহ আরও বাড়াবে।’’
ক্রিকেটজীবনে অধরা বিশ্বকাপটা হরমনপ্রীতের হাত থেকে পেয়ে ২ নভেম্বর রাতে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছিলেন ঝুলন। এত দিন ধরে তাঁর গলার কাছে দলা পাকিয়ে থাকা কষ্টটা মুক্তি পেয়েছিল সেই রাতে। এ বার ভারতের মহিলাদের ক্রিকেটের মুক্ত হওয়ার পালা। বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি রজার বিন্নী বলেছেন, ‘‘ভারতে মেয়েদের ক্রিকেট এমন একটা উচ্চতায় পৌঁছে গেল যে, এ বার ওদেরও প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। দীর্ঘ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল এই সাফল্য। মেয়েদেরও এ বার ছেলেদের সমতুল্য করে তুলবে।’’
’৮৩-র বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বিন্নীর মতো সকলে গর্ব অনুভব করতে পারলে, আগামী প্রজন্মকে হয়তো শেফালি বর্মার মতো ছেলে সেজে পাড়ায় খেলতে হবে না। নিজেদের পরিচয়েই পাড়ার মাঠ দাপিয়ে বেড়াতে পারবে। কেউ হয়তো তাদের বাবা-মাকে ডেকে, মেয়েকে রান্না শেখানোর পরামর্শ দেবে না। রিচা ঘোষের মতোই বাড়ির জানলার সব কাচ ভাঙার লাইসেন্স পাবে তারা। এই পরিবর্তনটাই আগে প্রয়োজন। তা হলে বাকিগুলি আপনা-আপনিই সম্ভব হবে।
বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি এন শ্রীনিবাসন এক বার বলেছিলেন, ক্ষমতা থাকলে মেয়েদের ক্রিকেটই বন্ধ করে দিতেন। ভাগ্যিস তাঁর হাতে সব ক্ষমতা ছিল না। থাকলে, ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে ঝুলনের কান্নাটা দেখা হত না।
৩৬ বছরের হরমনপ্রীত পারলেন। একটা সময় পর্যন্ত বিসিসিআইয়ের কাছে দুয়োরানি হয়ে থাকা মহিলাদের ক্রিকেটারেরা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মহাতারকা হওয়ার।