বেঙ্গালুরুর আইপিএল জয়ের আনন্দ বদলে গিয়েছে বিষাদে। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১ জনের। আহত ৫০-এর বেশি। জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার ঠিক পরে আহতদের প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। উল্টে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল!
হাসপাতালের বদলে আহতদের কেন নিয়ে যাওয়া হল স্টেডিয়ামে?
যে সমর্থকেরা রাস্তায় আহত হয়ে পড়ে ছিলেন তাঁদের প্রথমে স্টেডিয়ামের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ, অ্যাম্বুল্যান্স চিন্নাস্বামীর ভিতরেই ছিল। কিন্তু মাত্র দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স থাকায় অনেককেই নেওয়া যায়নি। যাঁদের তোলা যায়নি তাঁদের কাঁধে বা কোলে নিয়ে স্টেডিয়াম থেকে বেরোন নিরাপত্তারক্ষীরা। লক্ষ্য ছিল, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানো হবে এবং আহতদের সেই গাড়িতে হাসপাতালে পাঠানো হবে। কিন্তু সেখানেও হয় সমস্যা। স্টেডিয়ামের আশেপাশে সব রাস্তাই অনুষ্ঠানের জন্য দুপুর থেকে বন্ধ ছিল। তাই কাঁধে বা কোলে করে আহতদের প্রায় ৫০০ মিটার নিয়ে যেতে হয়। সেখান থেকে গাড়ি করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশের কথা শোনেনি মানুষ
প্রায় তিন লক্ষ মানুষের জমায়েত সামলাতে পারেনি পুলিশ। মুহূর্তের মধ্যে ভিড় বেলাগাম হয়ে যায়। বেঙ্গালুরুর এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, তাঁরা অনবরত মাইকে ঘোষণা চালিয়ে গিয়েছেন। স্টেডিয়ামের বাইরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কেউ কোনও কথা শোনেননি। বরং কে আগে স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকতে পারেন, সেই নিয়ে লড়াই চলছিল। একটি দল এগিয়ে যেতে থাকে কাবন পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে ১৩ নম্বর গেটের দিকে। আর এক দল ১৩ নম্বর গেট থেকে ১ এবং ২ নম্বর গেটের দিকে এগোতে থাকে। মাঝে ছিলেন প্রচুর সমর্থক যাঁরা রাস্তা আটকে নাচছিলেন, গাইছিলেন। স্টেডিয়ামে ঢোকার পথও ছিল সরু। ফলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। পাস বা টিকিট ছাড়া ঢোকার অনুমতি ছিল না। কিন্তু একটা বড় অংশের কাছে কোনও পাস বা টিকিট ছিল না। তাঁরা এসেছিলেন স্রেফ উৎসবে শামিল হতে। সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিশ। তা ছাড়া উপস্থিত মানুষের তুলনায় পুলিশকর্মীর সংখ্যাও ছিল অত্যন্ত কম। চারদিকে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ভিড়ের চাপে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন প্রচুর মানুষ। তাঁদের মাড়িয়ে এগিয়ে যান অনেকে।
শোভাযাত্রার ঘোষণা এবং আরসিবি-র টুইট
প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল বিধান সৌধ থেকে চিন্নাস্বামী পর্যন্ত হুডখোলা বাসে শোভাযাত্রা আয়োজন করা হবে। সেই বাসে ট্রফি হাতে থাকবেন ক্রিকেটারেরা। তবে পুলিশের পরামর্শে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়। তার পরেও যে এত মানুষের সমাগম হবে এটা প্রত্যাশা করা যায়নি। ভিড় আরও বেড়ে যায় আরসিবি-র একটি টুইটে। বুধবার দুপুর ৩.১৪ নাগাদ তারা ঘোষণা করে, ৫টা থেকে শোভাযাত্রা হবে। সেই শোভাযাত্রা কোথা থেকে, কী ভাবে হবে তার কোনও ঘোষণা ছিল না। ফলে স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে বিধান সৌধ, চতুর্দিকে থিকথিকে ভিড় হয়ে যায়। প্রচুর মানুষ জোর করে স্টেডিয়ামে ঢুকতে যান। অনেকেই সফল হননি। দুর্ঘটনার মুখে পড়েছেন তাঁরাই।
আরও পড়ুন:
-
গত বারের ফাইনালিস্টকে হারিয়ে ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে জোকোভিচ, শেষ চারে সামনে সিনার
-
পদপিষ্ট-কাণ্ড: তুলনা না টেনেও কুম্ভ প্রসঙ্গ টানলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী, ‘কুম্ভে সেল্ফি তোলা হচ্ছিল না’, খোঁচা দিল বিজেপি
-
আইপিএল ট্রফি জয়ের উৎসবে ১১ জনের মৃত্যু, প্রথম প্রতিক্রিয়া দিলেন কোহলি, মুখ খুলল আরসিবি-ও, কী বললেন বিরাট
মেট্রোর গাফিলতি
গাড়ি রাখার জায়গা নেই বলে স্টেডিয়ামমুখী সমর্থকদের মেট্রোয় আসতে বলা হয়েছিল। প্রতিটি মেট্রোতেই ছিল বিপুল ভিড়। স্টেশনে দাঁড়ানোর জায়গাও ছিল না। ওই সময়েই মেট্রো বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করে স্থানীয় পুলিশ। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ সেই সিদ্ধান্ত নেন অনেক দেরিতে। তত ক্ষণে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।