বেঙ্গালুরুর পদপিষ্ট-কাণ্ড নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করতে এসে কুম্ভমেলার প্রসঙ্গ টানলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। মনে করিয়ে দিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলাতেও বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে একই সঙ্গে তিনি বললেন, দু’টি ঘটনার মধ্যে তুলনা টানতে চান না তিনি।
দীর্ঘ ১৭ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে ১৮ তম আইপিএল জিতেছে রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। বিরাট কোহলিদের সঙ্গে উৎসবে শামিল হতে বুধবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম এবং তার বাইরে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে ধাক্কাধাক্কিতে পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সামনে ১১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৩৩ জন। স্টেডিয়ামের লোকধারণ ক্ষমতা মাত্র ৩৩ হাজার। কিন্তু সেখানে দু’লক্ষের বেশি মানুষ প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। তার ফলে স্টেডিয়ামের ছোট দরজা ভেঙে যায়। তৈরি হয় পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি। এই ঘটনায় বিজেপির তোপের মুখে পড়েছে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার। পদ্মশিবিরের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দাগতেই সিদ্দারামাইয়া সুকৌশলে কুম্ভমেলার প্রসঙ্গ টানলেন কি না, তা নিয়ে কর্নাটকের রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে এসে সিদ্দারামাইয়া বলেন, “এই ধরনের ঘটনা বহু জায়গায় ঘটেছে। আমি সেগুলির তুলনা টেনে ঘটনার সমর্থনে কথা বলতে চাইছি না। কুম্ভমেলাতেও ৫০-৬০ জন মারা গিয়েছেন। আমি কিন্তু সমালোচনা করিনি।” এ ক্ষেত্রে দলের সঙ্গে নিজের অবস্থানকেও পৃথক করে নিয়েছেন কর্নাটকের প্রবীণ এই রাজনীতিক। তিনি বলেন, “কংগ্রেস যদি সমালোচনা করে থাকে (কুম্ভমেলার ঘটনা নিয়ে) তা হলে আলাদা বিষয়। কিন্তু আমি কি সমালোচনা করেছি?” একই সঙ্গে সিদ্দারামাইয়া জানান, তিনি পদপিষ্ট-কাণ্ড নিয়ে রাজনীতি করতে চান না।
তবে সিদ্দারামাইয়া রাজনীতি করতে চান না বললেও বিতর্ক থামার কোনও ইঙ্গিত নেই। কর্নাটকের প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে কুম্ভের তুলনা চলে না। কুম্ভের ঘটনার সময় অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়েছিল। কেউ সেল্ফি তুলছিল না।” পুলিশ অনুমতি না-দেওয়ার পরেও কেন এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জোশী। পদপিষ্ট-কাণ্ডের পরও কেন উৎসব চলল, তা নিয়েও তিনি প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছেন সিদ্দারামাইয়ার কংগ্রেস সরকারকে।
আরও পড়ুন:
বুধবারের ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সিদ্দারামাইয়া। তার জন্য ১৫ দিন সময় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সামনে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই কমবয়সি। আমি গভীর ভাবে শোকাহত। এই যন্ত্রণা আইপিএল জয়ের আনন্দকে মুছে দিল। যা হয়েছে, তা হওয়ার কথা ছিল না।’’ তবে সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্যে বিতর্ক থামছে না। কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারকে কটাক্ষ করে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় বুধবার সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে উৎসব দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা অনায়াসে এড়ানো যেত। প্রশাসনের কোনও দূরদর্শিতাই নেই! ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ কর্নাটক সরকার। তাদের অবহেলার কারণেই এতগুলো মানুষের প্রাণ গেল।’’