Advertisement
E-Paper

Sourav Ganguly: লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যেতে নেই, শিখিয়েছে জাদুকর সৌরভই

সৌরভ কেমন ক্রিকেটার ছিল, তা বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা আমার নেই। আমি সৌরভের ভক্ত হয়ে উঠেছি ওর হার-না-মানা মানসিকতা দেখে।

পি সি সরকার (জুনিয়র)

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২২ ০৬:২৬
স্মরণীয়: লর্ডসে ন্যাট ওয়েস্ট ট্রফি জয়ের পরে সৌরভ।

স্মরণীয়: লর্ডসে ন্যাট ওয়েস্ট ট্রফি জয়ের পরে সৌরভ।

বিশ্বাস করুন, আমার সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই অর্থে আলাপই নেই। মুখোমুখি দেখা হয়েছে কয়েকবার। একই সংবর্ধনা মঞ্চে দুই প্রান্তে দু’জনে বসে থেকেছি। দৃষ্টি বিনিময়ের সময়ে স্মিত হেসেওছি। কিন্তু কথা বলার কখনও সুযোগ হয়নি। তবুও সৌরভ বরাবরই আমার প্রিয়। ক্রিকেট কেন, কোনও খেলাই আমি ঠিক খুব একটা ভাল বুঝি না। কিন্তু সৌরভের প্রতি ভীষণ ভাবেই দুর্বল।

পটৌডির নবাব মনসুর আলি খানের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক ছিল। আমরা একসঙ্গে প্রচুর আড্ডা দিয়েছি। মজা করতে করতে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। সচিন তেন্ডুলকরের বিয়েতে গিয়ে ম্যাজিক করে খাবার-দাবার ভ্যানিশ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার শহরের কিংবদন্তি সৌরভের সঙ্গেই কখনও কথা হয়নি। দু’টো চলন্ত ট্রেন পাশাপাশি সাই সাই করে যাওয়ার মতো শুধু একে অপরকে কয়েক ঝলক দেখেছি। টেলিভিশনে ওর গেম শো দেখি। মুগ্ধ করে সৌরভের বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের বিস্তৃতি। এর সঙ্গে যখনই স্মৃতিতে ফিরে আসে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ন্যাট ওয়েস্ট ট্রফি জেতার পরে লর্ডসের বারান্দায় ভারতীয় দলের জার্সি খুলে ওর ওড়ানোর দৃশ্য, বাঙালি হিসেবে গর্বে বুক ফুলে ওঠে আমার। সৌরভের কোটি কোটি ভক্তের ভিড়ে আমিও যে এক জন।

ক্রিকেট খেলা আমি ঠিক সেই অর্থ বুঝি না। তাই সৌরভ কেমন ক্রিকেটার ছিল, তা বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা আমার নেই। আমি সৌরভের ভক্ত হয়ে উঠেছি ওর হার-না-মানা মানসিকতা দেখে। অদম্য লড়াইয়ের কাহিনি পড়ে।

১৯৯২ সালে মাত্র একটা ওয়ান ডে খেলার পরে সৌরভকে ভারতীয় দল থেকে ছেটে ফেলা হল। উদ্ধত তকমা লাগিয়ে দেওয়া হল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, একটা বাঙালি ক্রিকেটারের জীবনটাই শেষ হয়ে গেল। চার বছর পরে জাতীয় দলে শুধু প্রত্যাবর্তনই ঘটায়নি, লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে বুঝিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটকে শাসন করতেই এসেছে। কোনও প্রতিকূলতাই ওকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির পরে সৌরভের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল, এই দিনটার জন্যই তো নীরবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল। সৌরভের মতো সুদর্শন বাঙালি আমি খুব বেশি দেখিনি। কিন্তু ওর মানসিকতা একেবারে যোদ্ধার মতো।

সারা বিশ্বে জাদু দেখাতে ব্যস্ত থাকায় সৌরভের খেলা দেখার সুযোগ কম পেতাম। কিন্তু ওর সমস্ত খবরই রাখতাম। গড়াপেটার অভিযোগে বিপর্যস্ত ভারতীয় ক্রিকেটকে কী ভাবে অন্ধকার থেকে বার করে এনেছে। কী ভাবে একঝাঁক প্রতিভাবান তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ‘টিম ইন্ডিয়া’ গড়ে তুলেছে। সৌরভ শুধু অধিনায়কই নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের সংস্কারকও ছিল। এত কিছুর পরেও যখন গ্রেগ চ্যাপেল অন্যায় ভাবে ভারতীয় দল থেকে ওঁকে ছেঁটে ফেলেছিলেন, প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল। তবে জানতাম, এ ভাবে সৌরভের মতো যোদ্ধাকে থামানো যাবে না। নিজেকে প্রমাণ করে আবার দলে ফিরবেই।সৌরভ ফিরেছিল চেনা মেজাজেই।

ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়কের সঙ্গে এখন আমার প্রায়ই দেখা হয় স্বপ্নে! ওকে আমি ক্রিকেটের জাদুকর বলে বুকে জড়িয়ে ধরি। আর চিৎকার করে বলি, তোমার কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। তুমি ফের প্রমাণ করেছ, বাঙালি ভিতু নয়। বাঙালিও পারে যুদ্ধ করে অধিকার ছিনিয়ে নিতে। পঞ্চাশতম জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা সৌরভ তোমাকে।

(সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন)

P. C. Sorcar Jr. Sourav Ganguly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy