১৭ দিন আগে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন লোকেশ রাহুল। সেটা ছিল তাঁর ঘরের মাঠ। দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠেই পতাকা পুঁতে দেওয়ার মতো ভঙ্গি করেছিলেন ব্যাট দিয়ে। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু তাঁর মাঠ। রবিবার সেই বদলা নিলেন বিরাট কোহলি। দিল্লি তাঁর ঘরের মাঠ। রবিবার সেই মাঠে দলকে জেতালেন কোহলি। বেঙ্গালুরু জিতল ৬ উইকেটে।
বেঙ্গালুরু যেমন রাহুলের ঘরের মাঠ, দিল্লি তেমন কোহলির। ভারতের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটারের জন্ম এবং কর্ম ক্ষেত্র যদিও আলাদা। দিল্লির ছেলে হয়ে কোহলি আইপিএলে খেলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। আর রাহুলের জন্ম বেঙ্গালুরুতে হলেও আইপিএলে তাঁর দল দিল্লি ক্যাপিটালস। রবিবার লড়াই ছিল তাঁদের মধ্যেও। বেঙ্গালুরুতে জিতেছিলেন রাহুল। রবিবারের ম্যাচ শেষে হাসি কোহলির মুখে।
দিল্লি প্রথমে ব্যাট করে ১৬২ রান করে। রাহুল ৪১ রান করলেও ৩৯টি বল খেললেন। স্বাভাবিক ছন্দে রান করতে পারছিলেন না তিনি। মাত্র তিনটি চার মারেন রাহুল। তাঁর ঘরের মাঠ বেঙ্গালুরুতে যে দাপট দেখা গিয়েছিল, রবিবার সেটার অভাব ছিল। কোহলি বরং খেলছিলেন নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই। রান তাড়া করতে নেমে বেঙ্গালুরু পর পর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে দলকে টেনে বার করেন কোহলি। তাঁর ইনিংস সাজানো চারটি চার দিয়ে। ৪৭ বলে ৫১ রান করে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। কোহলি আউট হওয়ার সময় বেঙ্গালুরুর বাকি ছিল মাত্র ১৮ রান। জিততে কোনও অসুবিধা হয়নি।
আরও পড়ুন:
কোহলি দিল্লির ছেলে হলেও শেষ কয়েক বছরে সে ভাবে এই শহরে খেলতে দেখা যায়নি তাঁকে। রঞ্জি ট্রফিতে ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছিলেন এই বছর। তার পর আবার খেলতে নামলেন এ বারের আইপিএলে। ভারতের যে কোনও মাঠেই কোহলি ভক্তেরা পৌঁছে যান। দিল্লি তাঁর ঘরের মাঠ। সেখানে বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলতে নামলেও কোহলির জন্য চিৎকার ছিলই।
বেঙ্গালুরুর জয়ের নেপথ্যে যদিও শুধু কোহলি নন, ক্রুণাল পাণ্ড্যও আছেন। ব্যাট হাতে কোহলির সঙ্গে তাঁর ১১৯ রানের জুটিই বেঙ্গালুরুকে জেতাল। ক্রুণাল অপরাজিত রইলেন ৭৩ রানে। কোহলি যখন একটা দিক ধরে রেখেছিলেন, তখন পাল্টা মারের খেলাটা শুরু করেন ক্রুণালই। শেষ দিকে টিম ডেভিড ৬ বলে ১৯ রান করে ম্যাচটা সহজে জিতিয়ে দেন।
টস জিতে দিল্লিকে ব্যাট করতে পাঠান বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক রজত পটীদার। তাঁর মনে হয়েছিল, দিল্লির পিচ খুব একটা বদলাবে না। সেই কারণেই পরে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রথম দিকে বেঙ্গালুরুর বোলারেরা যে এতটা সাহায্য পাবেন, সেটা ভেবেছিলেন কী?
শুরুতেই বাংলার অভিষেক পোড়েল ঝড় তুলেছিলেন। ১১ বলে ২৮ রান করে যান তিনি। ফিল্ডিং করার সময় তিনি ক্রুণালের একটি ক্যাচ ফেলেন। ম্যাচটাও ওখানেই ছেড়ে দেন অভিষেক। হতাশ মিচেল স্টার্ককে যথেষ্ট বিরক্ত দেখায়।
দিল্লি ব্যাট করার সময় পর পর উইকেট হারায় তারা। অভিষেক আউট হওয়ার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই পরের ওভারে করুণ নায়ার (৪) আউট হয়ে যান। ক্রিজ়ে তখন বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন অধিনায়ক ফ্যাফ ডু’প্লেসি। নায়ার আউট হওয়ার পর তাঁর সঙ্গী হন লোকেশ রাহুল। যিনি বেঙ্গালুরুতে প্রায় একাই জিতিয়েছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালসকে। বেঙ্গালুরুর দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার মিলে যদিও ২৮ রানের বেশি করতে পারেননি। ২২ রান করে আউট হয়ে যান ডু’প্লেসি। তিনি ক্যাচ দেন কোহলির হাতে।
কৃতিত্ব দিতে হবে বেঙ্গালুরুর বোলারদের। সুযশ শর্মা কোনও উইকেট না নিলেও ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দেন। মিডল ওভারে দিল্লির রান আটকে রাখার কাজটা করেন তিনিই। ক্রুণাল পাণ্ড্যও ৪ ওভারে দেন মাত্র ২৮ রান। একটি উইকেটও নেন তিনি। ভুবনেশ্বর কুমার ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে তুলে নেন তিনটি উইকেট। তাঁদের কৃপণ বোলিং গোটা ইনিংসেই চাপে রাখে দিল্লিকে। ফলে ১৬২ রানের বেশি করতে পারেনি তারা। ৯ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় বেঙ্গালুরু।