শনিবার আইপিএলে বেঙ্গালুরু বনাম চেন্নাই ম্যাচের আগে সম্প্রচারকারী চ্যানেলের তরফে একটি বিজ্ঞাপন বার বার দেখানো হয়েছিল। বিরাট কোহলি বনাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বদলে লড়াইয়ের বিষয়বস্তু ছিল ‘জেনারেশন বোল্ড’ বনাম ‘জেনারেশন ওল্ড’। সেই লড়াইয়ে জিতল জেনারেশন বোল্ডই। শনিবার টান টান লড়াইয়ে বেঙ্গালুরু দু’রানে হারাল চেন্নাইকে।
তবে ‘ওল্ড’ দলে থেকেও ‘গোল্ড’ হয়ে ওঠার বার্তা দিয়ে গেলেন আয়ুষ মাত্রে। আইপিএল কিছু দিন আগে দেখেছিল বৈভব সূর্যবংশীর শতরান। শনিবার দেখল আয়ুষকে। ছয় মেরে শতরান করতে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ের ব্যাটার। ফিরতে হল ৯৪ রানে।
‘জ়েন বোল্ড’, অর্থাৎ যে দলে সাহসী এবং তরুণ ক্রিকেটারেরা খেলেন। আইপিএলে অনেকেই বেঙ্গালুরুকে এই নামে ডাকছেন। ‘জ়েন ওল্ড’, অর্থাৎ যে দলে ভিড় বুড়োদের, যে নাম এখন সমার্থক হয়ে গিয়েছে চেন্নাইয়ের সঙ্গে। অবশ্য শনিবারের ম্যাচে দেখা গেল, দুই দলের তরুণ ক্রিকেটারেরাও যেমন ভাল খেলেছেন, তেমনই অভিজ্ঞ মুখেরাও নিজের জাত চিনিয়েছেন। বেঙ্গালুরুতে যদি ভাল খেলেন জেকব বেথেল এবং বিরাট কোহলি, তা হলে চেন্নাইয়ের হয়ে জবাব দিয়েছেন আয়ুষ এবং রবীন্দ্র জাডেজা।
আইপিএলের মাঝপথে কনুইয়ের চোটে রুতুরাজ গায়কোয়াড় ছিটকে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছিল চেন্নাইয়ের। হাতের সামনে থাকা ধোনিকে অধিনায়ক করে নেতার অভাব মেটানো গিয়েছিল বটে। কিন্তু ব্যাটার রুতুরাজের দায়িত্ব কে নেবেন? সমস্যা মেটাতে এগিয়ে এসেছিলেন সেই ধোনিই। প্রস্তাব করেছিলেন আয়ুষের নাম। তাঁকেই সই করানো হয়। শনিবার আয়ুষ প্রমাণ করে গেলেন, সঠিক ক্রিকেটারের উপরেই আস্থা রেখেছে চেন্নাই।
গত বছর মহা নিলামের আগে আয়ুষকে ট্রায়ালে ডেকেছিল চেন্নাই। তখন মনে করা হয়েছিল, রুতুরাজের সঙ্গী হিসাবে কোনও ওপেনার খুঁজছে তারা। কারণ রাচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ে, কাউকেই ধরে রাখা হয়নি। নিলামে তাঁদের কিনে ফেলায় রুতুরাজের সঙ্গী নিয়ে ভাবতে হয়নি চেন্নাইকে।
কিন্তু রাচিনের খারাপ ফর্ম, কনওয়ের দেশে ফিরে যাওয়া এবং রুতুরাজের চোট— মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে এগুলি ঘটায় চেন্নাই আবার পড়েছিল সমস্যায়। তখনই আবার ভেসে ওঠে আয়ুষের নাম। তড়িঘড়ি তাঁকে সই করানো হয়। সেই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক ছিল তা প্রমাণিত শনিবার।
আসলে ১৭ বছর বয়সী এই ব্যাটারকে পছন্দ ধোনির। গত বছর ধোনির কথাতেই ট্রায়ালে ডাকা হয়েছিল আয়ুষকে। তখন বিশেষ নজর কাড়তে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলেন তিনি। মুম্বইয়ের ব্যাটারকে মনে ধরে চেন্নাই ম্যানেজমেন্টের। তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয় মুম্বইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের চেনা পরিবেশে ৩২ রান করেন আয়ুষ। আবির্ভাবেই জাত চিনিয়ে দেন। পরের ম্যাচে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে করেন ৩০। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ৭ রানে আউট হয়ে গেলেও বেঙ্গালুরু ম্যাচে স্বমহিমায় দেখা গেল আয়ুষকে।
তবে আয়ুষ এবং জাডেজার ইনিংস দাম পেল না স্রেফ চেন্নাইয়ের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার জন্য। আইপিএলের শুরু থেকে প্রতি ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডার বদল করার ফল ভুগেছে চেন্নাই। আইপিএল থেকে বিদায় নেওয়ার পরেই ধোনি বার্তা দিয়েছিলেন, পরের মরসুমের জন্য দল তৈরির চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন:
চেন্নাই সেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত দু’টি ম্যাচে আয়ুষের সঙ্গে শেখ রশিদ ওপেন করেছেন। প্রথম বার ব্যর্থ হলেও, এ দিন দু’জনে আগ্রাসী শুরু করে বেঙ্গালুরুর বুকে কাঁপুনি ধরিয়েছিলেন। আগের ম্যাচে ভাল খেলা স্যাম কারেন এ দিন ব্যর্থ। কিন্তু চারে নেমে জাডেজা পুরনো ছন্দ ফিরে পেয়েছেন। আগের ম্যাচে তো বটেই, এ দিনও আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেন দলকে জেতানোর।
এত দিন প্রশ্ন উঠত, ধোনি কেন এত পরে নামছেন। এ দিন প্রশ্ন উঠতে পারে, ধোনি কেন আগে নামলেন? কেন আগে পাঠানো হল না শিবম দুবেকে। হয়তো আর দু’-একটি বল খেলার সুযোগ পেলে ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারতেন দুবে। জয়ের সামনে থাকা সত্ত্বেও প্রথম বলে ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের আড়াআড়ি খেলতে যাওয়াও ঠিক হয়নি। আরও ভুল হয়েছে, ডিআরএস নিতে দেরি করে ফেলায়। রিপ্লে-তে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, বল তাঁর লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। বেঙ্গালুরু যেটা করে দেখিয়েছে, সেটাই পারেনি চেন্নাই। তারা আর একটু ‘বোল্ড’ হতে পারেনি।
জয়ের ফলে আইপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে চলে গেল বেঙ্গালুরু। ১১ ম্যাচে তাদের ১৬ পয়েন্ট। প্লে-অফ প্রায় মুঠোয়। আগে ব্যাট করে ২১৩/৫ তোলার নেপথ্যে রয়েছেন বেথেল (৫৫), কোহলি (৬২)। শেষ বেলায় যদি রোমারিয়ো শেফার্ড (১৪ বলে অপরাজিত ৫৩) ঝড় না তুলতেন, তা হলে এই ম্যাচে বেঙ্গালুরুর হার নিশ্চিত ছিল। চেন্নাই লড়েছে আয়ুষ (৯৪) এবং জাডেজায় (অপরাজিত ৭৭) ভর করে। কিন্তু শেষ বেলায় মরণ কামড় দিতে ব্যর্থ।