এ বারের আইপিএলে বেঙ্গালুরু যে ক’টি ম্যাচে জিতেছে, প্রায় সব ক’টিতেই বিরাট কোহলি এবং ফিল সল্ট ভাল খেলেছেন। এই ওপেনিং জুটির উপর ভরসা করে অন্তত চারটি ম্যাচ জিতেছে বেঙ্গালুরু। তবে যে দিন এই দু’জনের ব্যাট চলবে না, সে দিন যে দলকেও হারতে হবে তা আরও এক বার বোঝা গেল। শুক্রবার ঘরের মাঠে পঞ্জাবের কাছে পাঁচ উইকেটে হারল বেঙ্গালুরু। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে হারের হ্যাটট্রিক।
আইপিএলে বেঙ্গালুরু বরাবরই তারকা ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের উপর নির্ভরশীল। সে ব্যাটিং হোক বা বোলিং। ক্রিস গেল, কোহলি থাকার সময় তাঁদের উপর নির্ভর করে ম্যাচ জেতার চেষ্টা করত বেঙ্গালুরু। কোহলি থেকে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গীর নামগুলোই পাল্টে গিয়েছে। কখনও এবি ডিভিলিয়ার্স, কখনও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কখনও আবার ফাফ ডুপ্লেসি এসেছেন।
গত দু’-তিনটি মরসুমে ডুপ্লেসিস-কোহলি ওপেনিং জুটির উপর ভরসা করে অনেক ম্যাচ জিতেছে বেঙ্গালুরু। পরের দিকে নেমে খেলে দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। এ বার ডুপ্লেসি এবং ম্যাক্সওয়েল কাউকেই রাখেনি। তবু ওপেনিংয়ে সল্টের মতো প্রতিভাকে পেয়েছে তারা, যিনি ধরে রেখেছেন কেকেআরের ফর্মই।
চলতি আইপিএলে সল্ট-কোহলি ওপেনিং জুটির দাপট কেমন সেটা কয়েকটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। কলকাতার বিরুদ্ধে ৮.৩ ওভারে ৯৫, চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ৫ ওভারে ৪৫, দিল্লির বিরুদ্ধে ৩.৫ ওভারে ৬১, রাজস্থানের বিরুদ্ধে ৮.৪ ওভারে ৯২। দিল্লি বাদে প্রতিটি ম্যাচেই জিতেছে বেঙ্গালুরু। কিন্তু যে দিন এই দু’জনেই ব্যর্থ হবেন, সে দিন? স্পষ্ট উত্তর, বেঙ্গালুরুকে ভুগতে হবে।
আইপিএলে প্রতিটি দলই চায় পাওয়ার প্লে-র মধ্যে যতটা সম্ভব রান তুলতে। ১০০-র বেশি রান তুলে দেওয়ার নজিরও বেশ কয়েকটি রয়েছে। সল্ট এ বার ঠিক সেই কাজটাই করছেন। প্রথম বল থেকে চালাতে শুরু করছেন। ব্যাটে-বলে হলে তাঁকে আর আটকানো যাচ্ছে না। মাঠের চারধারে উড়ে যাচ্ছে বল। কোহলি শুরু থেকে একটু ধীর গতিতে খেলছেন। সল্ট আউট হলে বা তাঁর রানের গতি কমলে তখন কোহলি চালিয়ে খেলছেন। বেঙ্গালুরুর এই ফর্মুলা মোটামুটি সফল হচ্ছে। তবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে হল না।
প্রথম বলেই চার মেরে সল্ট শুরুটা করেছিলেন ভাল। তবে সব বলে চালানো যায় না। বোলার অনুপাতে সেটা বোঝার সময় এসেছে বেঙ্গালুরু ব্যাটারের। চতুর্থ বলেই জশ ইংলিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন। কোহলি প্রথম দু’ওভারে একটিও বল খেলার সুযোগ পাননি। তৃতীয় ওভারে প্রথম বল খেললেন। সেই ওভারেই চতুর্থ বলে মার্কো জানসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট।
রজত পাটীদার বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক হতে পারেন। তবে একার হাতে দলকে টানার মতো ক্ষমতা এখনও তাঁর হয়নি। তা ছাড়া, বেঙ্গালুরুর পিচ এ দিন তাঁকে বড় শটও খেলতে দেয়নি। লিয়াম লিভিংস্টোন, জিতেশ শর্মার মতো নাম বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং অর্ডারে থাকলেও তাঁরা ব্যর্থ।
অদ্ভুত বেঙ্গালুরুর কৌশলও। দেবদত্ত পাড়িক্কলকে কেন নামানো হল না তার কোনও যুক্তি নেই। পরের দিকে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে মনোজ ভান্ডাগে পর্যন্ত নামলেন। তবু নেই পাড়িক্কল। শেষ ওভারে তিনটি ছয় মেরে অর্ধশতরান করে বেঙ্গালুরুর রান তবু ভদ্রস্থ জায়গায় আনলেন টিম ডেভিড (অপরাজিত ৫০)। তবে ডেভিডের প্রতি অতিরিক্ত ভরসা করলে ভুল করবে বেঙ্গালুরু। তিনি কোন দিন খেলবেন আর কোন দিন ব্যর্থ হবেন তা কেউ জানেন না।
আরও পড়ুন:
বেঙ্গালুরুতে শুক্রবার বিকেল থেকে বৃষ্টি নেমেছিল। এক সময় বোঝাই যাচ্ছিল না খেলা হবে কি না। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের উন্নতমানের নিকাশি ব্যবস্থা এবং পবনদেবের করুণায় ম্যাচ শুরু হল রাত ৯.৪৫ মিনিটে। তবে আম্পায়ারেরা জানালেন, প্রতি ইনিংস হবে ১৪ ওভারের। টসে হেরে আগে ব্যাট করে বেঙ্গালুরু তুলল ৯৫/৯।
কম রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই বেশি ক্ষণ লড়াই সম্ভব নয়। তবে বেঙ্গালুরু ভালই লড়াই করল পিচের সহায়তা পেয়ে। এ দিন দুই ইনিংসের পিচ মন্থর ছিল। স্পিনারেরা যেমন সাহায্য পাচ্ছিলেন তেমনই পেসারদের বল থমকে ব্যাটে আসছিল। রান তোলা কখনওই সহজ ছিল না। বেঙ্গালুরুর পর ভুগেছে পঞ্জাবও। প্রিয়াংশ আর্য (১৬), শ্রেয়স আয়ার (৭) ব্যর্থ হন। জশ ইংলিস ফিরে যাওয়ার পর ভাল চাপে পড়েছিল পঞ্জাব। সেই চাপ কাটিয়ে দেন নেহাল ওয়াধেরা (১৯ বলে অপরাজিত ৩৩)। বলা ভাল, বেঙ্গালুরুর সুযশ শর্মাই ভুল লেংথে বল করে পঞ্জাবের কাজ সহজ করে দেন। ফলে জশ হেজ়লউডের (৩-১৪) বোলিং কাজে এল না।