কার্যত নিঃশব্দে শুরু হয়ে গেল মহম্মদ শামির প্রত্যাবর্তন অভিযান। প্রায় সকলের চোখের আড়ালে তিনি মঙ্গলবার পৌঁছে গিয়েছেন বেঙ্গালুরুতে দলীপ ট্রফি খেলতে। সেখানে পূর্বাঞ্চল বনাম উত্তরাঞ্চল ম্যাচ রয়েছে আগামীকাল অর্থাৎ, ২৮ থেকে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত। আরও এক দীর্ঘ বিরতির পরে এই ম্যাচে ফের বল হাতে দেখা যাবে সুইংয়ের সুলতানকে।
বেঙ্গালুরু পৌঁছে মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চল দলের সঙ্গে অনুশীলনও করেছেন শামি। অনেক ওজন কমিয়ে, পাতলা হয়ে এসেছেন বলে শোনা গেল। তাঁকে দেখে নাকি অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছেন। পূর্বাঞ্চলের নেটে বেশ কিছুক্ষণ ধরে বোলিং, ব্যাটিং দুই-ই করেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, একদম ফিট দেখাচ্ছে তাঁকে। ক্রিকেটে ফেরার জন্য তিনি সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি বলেই মনে করছেন পূর্বাঞ্চলশিবিরের প্রতিনিধিরা।
শুধু তাই নয়, বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্যও সুখবর অপেক্ষা করছে। জানা গিয়েছে, শামি বাংলার হয়ে প্রথম দু’টি রঞ্জি ম্যাচে খেলতে পারেন। এতদিন ধরে নানা ধোঁয়াশা চলছিল তাঁর খেলা, না-খেলা নিয়ে। আশা করা হয়েছিল, বাংলার প্রস্তুতি শিবিরে তিনি যোগ দেবেন। কিন্তু আসেননি। চোটের পরিচর্যা চলছিল বলেই যে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হচ্ছিল, তা এখন পরিষ্কার। সম্পূর্ণ ফিট হয়ে যেতেই শামি পৌঁছে গিয়েছেন পূর্বাঞ্চলের হয়ে দলীপ খেলতে এবং সব কিছু ঠিকঠাক চললে বাংলার জার্সিতেও তাঁকে দেখা যাবে। ২০২৫-’২৬ মরসুমের রঞ্জি ট্রফি শুরু হচ্ছে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে। প্রথম দিনেই উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু বাংলার। দ্বিতীয় ম্যাচ ২৫ অক্টোবর থেকে গুজরাতের বিরুদ্ধে। এই দু’টি ম্যাচে খেলার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছেন শামি। তবে এই সময়েই অস্ট্রেলিয়ায় সাদা বলের সফর রয়েছে ভারতের। তিনটি এক দিনের ম্যাচ ও পাঁচটি টি-টোয়েন্টি রয়েছে। এক দিনের সিরিজ়ে ফিরতে দেখা যাবে বিরাট, রোহিতদের। ১৯ অক্টোবর ক্যানবেরায় প্রথম ওয়ান ডে। শামিকে যদি রঞ্জিতে পরীক্ষা দিয়ে ভারতীয় দলে ফিরতে হয়, তা হলে এই সফরেই হয়তো দরজা খুলবে না। সে ক্ষেত্রে বাংলার হয়ে রঞ্জিতে নামার সম্ভাবনা বাড়বে। আর যদি নির্বাচকেরা দলীপে দেখা তাঁর ফিটনেস, বোলিংয়ে সন্তুষ্ট হয়ে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যেতে চান, তা হলে রঞ্জিতে খেলা কঠিন হবে। যদিও এত তাড়াতাড়ি নির্বাচক বা দল পরিচালন সমিতির ভোট ফের জিতে নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।
দলীপে উত্তরাঞ্চল দলে প্রাথমিক ভাবে অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন শুভমন গিল। দারুণ একটা উপভোগ্য দ্বৈরথ সে ক্ষেত্রে দেখার সুযোগ ঘটত ক্রিকেট ভক্তদের।গিল বনাম শামি। কিন্তু গিল দলীপে খেলছেন না। এ দিকে, পূর্বাঞ্চল দলের অধিনায়ক বাছা হয়েছিল ঈশান কিষনকে। তিনিও চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন। নেতৃত্ব দেবেন বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরন। সহ-অধিনায়ক রিয়ান পরাগ। পূর্বাঞ্চল পেস বোলিংয়ের নেতৃত্ব দেবেন বাংলার দুই পেসার শামি ও মুকেশ কুমার। উত্তরাঞ্চলে গিল না থাকলেও শক্তিশালী দল। তাদের হাতেও আরশদীপ সিংহ ও হর্ষিত রানা রয়েছে। ব্যাটিংয়ে আয়ুষ বাদোনি আছেন। শামির আগমন দ্বৈরথের আঁচ অনেক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শামিকে ভারতের জার্সিতে শেষ বার দেখা গিয়েছে এ বছরের ৯ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে ট্রফি জয়ের সেই ম্যাচে তিনিই ছিলেন ভারতের একমাত্র প্রকৃত পেস বোলার। বরুণ চক্রবর্তী, কুলদীপ যাদব, অক্ষর পটেল ও রবীন্দ্র জাডেজা— চার স্পিনারে বোঝাই করে দল নামিয়েছিলেন রোহিত শর্মা-গৌতম গম্ভীররা। শামির সঙ্গে নতুন বলে শুরু করেছিলেন হার্দিক পাণ্ড্য, তিন ওভারে ৩০ রান দেন। দুবাইয়ের পিচে ৯ ওভার বল করে ৭৪ রানে এক উইকেট নেন শামি। তার পর ফের চোট-আঘাতের ধাক্কায় ভারতীয় দল থেকে ছিটকে যেতে থাকেন। ইংল্যান্ডে যেতে পারেননি। শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০২৩-এর জুনে, ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল। অনেকেই মনে করেন, চোট আতঙ্কে যশপ্রীত বুমরার অনিয়মিত হয়ে পড়ার মধ্যে মহম্মদ সিরাজের সঙ্গে যদি মহম্মদ শামি থাকতেন, তা হলে ইংল্যান্ড থেকে ড্র নয়, সিরিজ় জিতেও ফিরতে পারত গিলের ভারত।
জীবনে বহু যুদ্ধের সামনে হার-না-মানা তিনি, মহম্মদ শামি কি আরও এক বার দেশের হয়ে দুর্ধর্ষ প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারবেন? সময়ই তার উত্তর দেবে। তবে ‘বড়ে নবাব’ যে সাড়ে পাঁচ মাস পরে ওজন ঝরিয়ে, ফিট হয়ে মাঠে ফিরছেন, তাতে সামান্য হলেও মেঘ সরিয়ে রোদ্দুরের দেখা তোপাওয়া গেল!
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)