Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Kumar Kartikeya

Kumar Kartikeya: বাড়ি থেকে পালিয়ে স্বপ্নপূরণ! ন’বছরের লড়াইয়ের গল্প শোনালেন কার্তিকেয়র মা

ন’বছর পরে মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে কুমার কার্তিকেয়র। এই ন’বছর ছেলেকে ছেড়ে কেমন কেটেছে তাঁদের। জানালেন কার্তিকেয়র মা সুনিতা সিংহ।

মায়ের সঙ্গে কার্তিকেয়

মায়ের সঙ্গে কার্তিকেয় ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২২ ১৫:১০
Share: Save:

মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। চোখে স্বপ্ন, বুকে সাহস নিয়ে দিল্লিতে পা দিয়েছিলেন। তার পর গত ন’বছর শু‌ধুই লড়াই। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেট বোলার হিসাবে শুরু করে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছেন। রঞ্জিতে মধ্যপ্রদেশকে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। স্বপ্ন পূরণ করে অবশেষে ন’বছর পরে বাড়ি ফিরেছেন কার্তিকেয়। এই ন’বছর কেমন কেটেছে তাঁর মায়ের। ছেলের সাফল্য ভুলিয়ে দিয়েছে তাকে ছেড়ে থাকার যন্ত্রণা। সেই কাহিনি শোনালেন সুনিতা সিংহ।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কার্তিকেয়কে নিয়ে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে। সেখানে সুনিতা বলেছেন, ‘‘ও বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর আমাকে ফোন করেছিল। ওর বাবাকে কিছু বলার সাহস পায়নি। ওর বাবা রেগে বলেছিল, জীবনে কিছু করতে পারলে তবেই বাড়ি ফিরতে। কার্তিকেয় সেটা করে দেখিয়েছে। এই ন’বছর শুধুই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছি যাতে ও জীবনে সফল হয়। নইলে ওর সঙ্গে দেখাই হত না। এটা ওর লড়াই। আমাদের তো এটুকু ত্যাগ করতেই হত।’’

ছেলে বাড়ি ফেরায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বাবা শ্যাম নাথ সিংহ। কানপুর স্টেশনে কার্তিকেয় ট্রেন থেকে নামার পরে তাঁকে জড়িয়ে ধরে শুধু কেঁদেছেন। মধ্যপ্রদেশের রঞ্জি দলে সুযোগ পেয়ে বাবাকে ফোন করেছিলেন কার্তিকেয়। শ্যাম বলেন, ‘‘ছ’বছর পর ও আমাকে ফোন করেছিল। বলল, রঞ্জি দলে সুযোগ পেয়েছে। খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। ওর মাকে ছুটে গিয়ে বলেছিলাম। আসলে জীবনে সফল হওয়ার পথ সহজ নয়। অনেক লড়াই করতে হয়। কার্তিকেয় সেই লড়াইটা করেছে। ওর জন্য গর্বিত।’’

কার্তিকেয়র বাবা-মা চাইতেন ছেলে পড়াশোনা করুক। ভাল চাকরি করুক। তবে ক্রিকেট খেলায় তাঁরা বাধা দেননি। কিন্তু উৎসাহও দেননি। কিশোর কার্তিকেয় চাইত ক্রিকেট খেলেই বড় হতে। বাবা-মা, রাজ্য, দেশের নাম উজ্জ্বল করতে। খানিকটা বাবা-মায়ের অমতেই বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে কিছু করতে পারলে তবেই আবার বাড়ি ফিরবেন। সেই কার্তিকেয় বাড়ি ফিরলেন ন’বছর তিন মাস পর। নেটমাধ্যমে মায়ের সঙ্গে ছবি দিয়ে কার্তিকেয় লিখেছেন, ‘আমার পরিবার এবং মায়ের সঙ্গে ন’বছর তিন মাস পর দেখা হল। এই অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।’

ফেলে আসা ন’বছরে নিজেকে ঘষে-মেজে চকচকে করেছেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কর্মীর ছেলে। রোজগারের জন্য গাজিয়াবাদের এক কারখানায় কাজ নেন কার্তিকেয়। বয়স ১৮ না হওয়ায় আইনের চোখ এড়াতে কাজ করতে হত রাতে। তাতে সুবিধাই হয় কার্তিকেয়র। সারারাত কাজ করার পর সকালে চলে যেতেন ক্রিকেট শিখতে। সর্বত্রই যেতেন হেঁটে। তাতে দিনে ২০-২৫ টাকা বাঁচানো যেত। ওইটুকু সাশ্রয়তেও হত না। দিল্লিতে থাকা, খাওয়ার খরচ যোগাতেই হিমশিম খেতেন কার্তিকেয়। খরচ সামলাতে তাই প্রথম এক বছর দুপুরে কিছু খেতেন না।

দিল্লিতে ক্রিকেট শিখতেন সঞ্জয় ভরদ্বাজের কাছে। ভাল বোলিং করার সুবাদে সঞ্জয়ের অন্যতম প্রিয় ছাত্র ছিলেন কার্তিকেয়। কিন্তু তিনিও জানতেন না ছাত্রের জীবন সংগ্রামের কথা। এক বছর পর বিষয়টি জানার পর সঞ্জয় নিজের অ্যাকাডেমিতে কার্তিয়ের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অ্যাকাডেমির রাঁধুনির সঙ্গে এক ঘরেই থাকতেন। ক্রিকেট শেখানোর জন্য আর টাকা নিতেন না তিনি। অ্যাকাডেমির রাঁধুনি প্রথম যে দিন কার্তিয়েককে দুপুরে ভাত খেতে দিয়েছিলেন, সেদিন খেতে পারেননি কিশোর ক্রিকেটার। শুধু কেঁদেছিলেন। হাউ হাউ করে কেঁদেছিলেন। বহু দিন পর তাঁর সামনে কেউ দুপুরের খাবার দিয়েছিল সে দিন।

গত বারের আইপিএলের নিলামে প্রথমে তাঁকে কোনও দল কেনেনি। পরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের আরশাদ খান চোটের কারণে ছিটকে গেলে তাঁকে দলে নেওয়া হয়। দলের নবম ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই সঞ্জু স্যামসনকে আউট করেন কার্তিকেয়। বিপক্ষে ছিলেন এ বারের সব থেকে বিধ্বংসী ব্যাটার জস বাটলার। কার্তিকেয়র সামনে তিনিও বিশেষ কিছু করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন এই বাঁ হাতি স্পিনার। আইপিএলের অভিজ্ঞতা নিয়ে কার্তিকেয় বলেছেন, ‘‘সচিন তেন্ডুলকর আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। রোহিত শর্মা সব সময় সাহস দিতেন। ওঁদের সঙ্গে সময় কাটানোর পর আমি এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE