Advertisement
E-Paper

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচনা, বিশ্বের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ অনেক কিছু হারানো পাকিস্তানের

আট বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফিরিয়ে এনেছে আইসিসি। প্রায় তিন দশক পর পাকিস্তানে হচ্ছে বড় মাপের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। একাধিক সেরা বোলারের অনুপস্থিতিতে কি জমবে মিনি বিশ্বকাপ?

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩১
Share
Save

পোশাকি নাম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে মিনি বিশ্বকাপ। টি-টোয়েন্টি জমানার আগে ক্রিকেটকে নতুন নতুন দেশে জনপ্রিয় করতে এই প্রতিযোগিতা ছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) মাস্টার স্ট্রোক। লক্ষ্য ছিল টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলিকে ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতায় লড়িয়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন। আইসিসির অ্যাসোসিয়েটস দেশগুলিতে ক্রিকেটের উন্নতির জন্য সেই অর্থ খরচ করা। প্রথম দু’বার আয়োজক ছিল বাংলাদেশ (১৯৯৮) এবং কেনিয়া (২০০০)। কোনও দেশেই আইসিসির পূর্ণ সদস্য ছিল না সে সময়। বাংলাদেশ আবার আয়োজনের দায়িত্ব পেলেও খেলার সুযোগ পায়নি! এ বার আয়োজক পাকিস্তান। বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি পাকিস্তান এবং নিউ জ়িল্যান্ড।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তানের ক্রিকেটে নিয়ে আসতে পারে টাটকা বাতাস। ২০০৯ সালের ৩ মার্চ লাহোরে সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হয় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। তার পর দীর্ঘ দিন পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ ছিল। নিরাপত্তার কারণে কোনও দেশ দল পাঠাতে চাইত না। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে খেলতে হত পাকিস্তানকে। সন্ত্রাসের ভয় কাটিয়ে ২০১৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে পাকিস্তানে ফিরতে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সুষ্ঠু ভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করা তাই পিসিবির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। ক্রিকেট বিশ্বের সামনে পাকিস্তানের সম্মান রক্ষার পরীক্ষা। সে দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক ইনজামাম উল হক বলেছেন, ‘‘অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনার জন্য ১০ বছর শাস্তি পেতে হয়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেটকে। আমাদের ক্রিকেটকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে সেই ঘটনা। সন্ত্রাসবাদের দুঃস্বপ্ন ভুলে ঘুরে দাড়াতে চাইছি আমরা। এখন আবার স্কুল-কলেজ, বাড়ি, অফিস, বাজার সর্বত্র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’’

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রাক্তন চেয়ারম্যান রামিজ রাজাও উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেছেন, ‘‘এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সামনে নিজেদের প্রমাণ করার একটা সুযোগ। সব মিলিয়ে আমাদের সার্বিক ভাবমূর্তির জন্য এটা খুব প্রয়োজন ছিল।’’ চেনা ক্রিকেট আবহ ফিরে আসায় খুশি সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরাও। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর শ্রীলঙ্কার পতাকা উড়িয়ে ছিলেন হাজি আবদুল রজ্জাক। ৭৭ বছরের ব্যবসায়ী উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে নতুন জন্ম হল আমার। খুব আনন্দ হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ আমাদের কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়েছিল। আবার এমন একটা প্রতিযোগিতা আমাদের হচ্ছে, বিশ্বাসই করতে পারছি না।’’

এক দিনের ক্রিকেটে জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। প্রতিযোগিতা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই আইসিসির মূল আশায় জল ঢেলে দেয় ২০ ওভারের ক্রিকেটের রমরমা। জনপ্রিয়তায় ৫০ ওভারের ক্রিকেটকে অনেক পিছনে ফেলে দেয় টি-টোয়েন্টি। ক্রিকেট মহলের একাংশ এক দিনের ম্যাচের ভবিষ্যৎ নিয়েই সন্দিহান। এই পরিস্থিতিতে আইসিসি আবার ফিরিয়ে এনেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০১৭ সালের পর ২০২৫। আট বছর পর আবার হচ্ছে এক দিনের ক্রিকেটের এই প্রতিযোগিতা।

শেষ বার ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। এ বার সেই পাকিস্তানই মূল আয়োজক। ১৯৯৬ সালে এক দিনের বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক ছিল পাকিস্তান। প্রায় তিন দশক পর আবার বিশ্বমানের কোনও প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে পিসিবি। সুষ্ঠু ভাবে প্রতিযোগিতা আয়োজনের লক্ষ্য লাহোর, করাচি এবং রাওয়ালপিন্ডির তিনটি স্টেডিয়াম নতুন করে সাজিয়ে তুলেছেন পিসিবি কর্তারা। সব রকম চেষ্টা করেও দেশের মাটিতে গোটা প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারছেন না পাকিস্তানের ক্রিকেট কর্তারা। ভারতের আপত্তিতে অন্তত চারটি ম্যাচ হবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে।

পাকিস্তানের আশা, আয়োজনে কিছুটা জল ঢেলে দিয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সম্পর্ক বন্ধ। বহুদলীয় প্রতিযোগিতা ছাড়া মুখোমুখি হয় না দু’দল। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠানো। ২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ খেলতে বাবর আজ়ম, মহম্মদ রিজ়ওয়ানেরা ভারতে আসেন। কিন্তু সে বছরই এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যাননি রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। হাইব্রিড মডেলে হয়েছিল প্রতিযোগিতা। ভারতের ম্যাচগুলি হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। এ বারও ব্যতিক্রম হয়নি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য পাকিস্তানে দল পাঠাতে রাজি হয়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। বাধ্য হয়ে হাইব্রিড মডেলে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেছে আইসিসি। একক আয়োজনের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে পাকিস্তানের।

মিনি বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে পড়শি দু’দেশে ক্রিকেট বোর্ডের স্নায়ুযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের প্রভাব দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের মাঠগুলিতে। আয়োজক পাকিস্তান-সহ অংশগ্রহণকারী সব দেশের পতাকা রয়েছে স্টেডিয়ামগুলিতে। রয়েছে আইসিসির পতাকাও। অনুপস্থিত শুধু ভারতের জাতীয় পতাকা। প্রথা অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী সব দেশের পতাকাই থাকার কথা। ভারতে গত এক দিনের বিশ্বকাপের সময়ও সব মাঠে ছিল পাকিস্তানের পতাকা। ভারতের খেলতে না যাওয়ার জবাব কি এ ভাবে দিল পাকিস্তান? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জাতীয় পতাকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় পিসিবির দাবি, “আইসিসির নির্দেশ অনুযায়ী ম্যাচের দিন চারটি পতাকা টাঙানো যাবে। আয়োজক পাকিস্তান, উদ্যোক্তা আইসিসি এবং যে দু’টি দেশ খেলছে তাদের।” ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর সঙ্গে অবশ্য পিসিবির যুক্তি মিলছে না।

ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি মানেই আলাদা উত্তাপ। ক্রিকেটারদের রেষারেষি রাজনীতির রোষে অতীত। সেই শূন্যস্থান খানিকটা ভরাট করেছে দুই বোর্ডের স্নায়ুর লড়াই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘিরেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। কাকতালীয় হলেও আইসিসির শেষ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় ভারত এবং পাকিস্তানকে এক গ্রুপে দেখা গিয়েছে। অন্তত একটি করে ম্যাচ হলেও মুখোমুখি হয়েছে দু’দেশ। বার বার এমন সূচির নেপথ্যে আইসিসির ব্যবসায়িক স্বার্থ সুরক্ষিত করার অঘোষিত প্রয়াস থাকতে পারে। কারণ যাই হোক, লাভবান হন ক্রিকেটপ্রেমীরা। দীর্ঘ ব্যবধানে হলেও ২২ গজে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের উত্তেজনা উপভোগ করার সুযোগ পান তাঁরা।

এ বার ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ এবং নিউ জ়িল্যান্ড। অন্য গ্রুপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আফগানিস্তান। গত বছর অগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারত-বাংলদেশ ম্যাচ ঘিরেও বাড়তি উৎসাহ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এক দিনের ক্রিকেটে নিউ জ়িল্যান্ডের পারফরম্যান্সও বেশ ভাল। অন্য গ্রুপে আবার মুখোমুখি চির প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। রয়েছে গত এক দিনের বিশ্বকাপের চমক আফগানিস্তান। হেলাফেলা করা যায় না দক্ষিণ আফ্রিকাকেও। বিশ্বের সেরা আটটি দলকে নিয়ে এই প্রতিযোগিতা জমে যেতে পারে গ্রুপ পর্ব থেকেই।

ক্রিকেটারদের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। ট্রফি, আর্থিক পুরস্কার ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যদের জন্য থাকে বিশেষ ব্লেজ়ার। সাদা রঙের ব্লেজ়ার ক্রিকেটজীবনের অন্যতম সেরা স্মারক হিসাবে রাখতে পারেন তাঁরা।

মাঠের বাইরের আয়োজন, রাজনীতি, উত্তেজনা সব রয়েছে। কিন্তু ২২ গজের লড়াই কি জমবে? সাদা বলের ক্রিকেট এখন এমনিতেই ব্যাটারদের খেলা হিসাবে চিহ্নিত। অধিকাংশ নিয়মও তাঁদের অনুকূলে। তবু যেটুকু ব্যাট-বলের লড়াই দেখা যায়, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। জসপ্রীত বুমরাহ, প্যাট কামিন্স, জস হেজ়লউড, মিচেল স্টার্ক, অনরিখ নোখিয়ে, লকি ফার্গুসনের মতো বোলারেরা নেই। বিশ্বের সেরা বোলারদের অনুপস্থিতি ২২ গজের লড়াইয়ে ম্যাড়মেড়ে করে তুলতে পারে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের আরও একটি বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এখন আর এক দিনের ক্রিকেট তেমন খেলে না কোনও দলই। খেলার মান সার্বিক ভাবে কেমন হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ সন্দিহান।

প্রায় আইসিইউতে চলে যাওয়া এক দিনের ক্রিকেটকে নতুন জীবন দিতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফিরিয়ে এনেছে আইসিসি। প্রতিযোগিতা শুরুর মূল উদ্দেশ্য এখন টি-টোয়েন্টির দখলে। তবু লাভবান হতে পারে পাকিস্তান। আর্থিক চাপে থাকা পিসিবির কিছু সুরাহা হতে পারে। পাক বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নকভি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখবেন গ্যালারিতে বসে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের সঙ্গে। নিজের জন্য বরাদ্দ ভিআইপি হসপিটালিটি বক্স বিক্রি করে দিতে বলেছেন নকভি। ৩০ আসন বিশিষ্ট সেই বক্সের ভাড়া চার লক্ষ দিরহাম বা ৯৪ লক্ষ টাকা।

Pakistan ODI PCB

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}