শুক্রবার ভারতীয় সময় দুপুর ৩টেয় হেডিংলেতে শুভমন গিল যখন টস করতে নামবেন, তখন কী চলবে তাঁর মাথায়? টসের ফল, নিজের ব্যাটিং, দলের পরিকল্পনা, হেডিংলের আবহাওয়া, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির না থাকা— এই সবই ঘুরপাক খাবে। প্রথম বার এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকবেন তিনি। হয়তো বুঝবেন এত বছর ধরে কোহলি ও রোহিতকে কী কী সামলাতে হয়েছে। তাতে কি চাপে পড়বেন শুভমন? নাকি সেখান থেকে সহজেই বেরিয়ে আসবেন তিনি? তার জবাব পাওয়া যাবে আগামী পাঁচ দিনে। তবে এটা বলা যেতে পারে শুক্রবার থেকে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে শুভমনকে। এক কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তাঁর সামনে।
২০২০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে তাঁর ৩২টা টেস্টের মধ্যে ১০টা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছেন শুভমন। রান করেছেন ৫৯২। গড় ৩৭। দুটো শতরান ও তিনটে অর্ধশতরান রয়েছে। দেখে মনে হবে, ছোট টেস্ট কেরিয়ারে এই রেকর্ড খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ইংল্যান্ডের মাটিতে যে তিনটে টেস্ট শুভমন খেলেছেন তাতে মাত্র ৮৮ রান করেছেন তিনি। গড় মাত্র ১৪.৬৬। একটা অর্ধশতরানও নেই সেখানে। তাই ইংল্যান্ডে অধিনায়ক শুভমনের পাশাপাশি ব্যাটার শুভমনের পরীক্ষা।
আইপিএলের মাঝে রোহিত টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর যে শুভমনই নতুন টেস্ট অধিনায়ক হবেন তা নিশ্চিত ছিল। আইপিএলের মাঝেই কোচ গৌতম গম্ভীর ও নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকরের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। জানা গিয়েছিল, সেই সময় থেকেই লাল বলের ক্রিকেটে অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে সাংবাদিক বৈঠকে শুভমন জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি তৈরি। কে আছে, কে নেই, তা ভাবছেন না। ইংল্যান্ডে গিয়েও একই কথা বলেছেন ভারত অধিনায়ক। রোহিত, কোহলিকে ছাড়াই জিততে নামবেন তিনি। শুভমন বলেন, “গত বছর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে সিরিজ় খেলেছিলাম সেটা আমার খেলা অন্যতম সেরা সিরিজ়। সেখানেও আমাদের প্রথম একাদশের অনেক ক্রিকেটার ছিল না। কিন্তু তার পরেও ইংল্যান্ডকে ৪-১ হারিয়েছিলাম। সেটা থেকেই বোঝা যায় আমাদের ক্রিকেটারদের মান কত ভাল। গত বারের ফল এ বারও করে দেখাতে চাই। রোহিত, কোহলিকে ছাড়াই আমরা জিতব।”
আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন শুভমন। রোহিত ও কোহলির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের পরামর্শ নিয়েছেন। পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। সেই পরিকল্পনমা কাজে লাগাতে চান তিনি। শুভমনের কথায়, “আইপিএলের সময় দু’জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা ওদের ইংল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা আমাকে বলেছে। এখানে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয় সেটা জানিয়েছে। ওদের শিক্ষা এখানে কাজে লাগাতে চাই।” তবে তাতে শুভমনের কাজটা সহজ হয়ে যাচ্ছে না।
তার সবচেয়ে বড় কারণ ইংল্যান্ডের পরিবেশ। সেখানে সারা দিন বল সুইং করে। আকাশে মেঘ থাকলে পেসারদের সামলানো কঠিন। ভারতের যে দল ইংল্যান্ডে গিয়েছে সেখানে শুভমন ছাড়া লোকেশ রাহুল, ঋষভ পন্থ, করুণ নায়ার ও রবীন্দ্র জাডেজার এই দেশে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাকিদের প্রথম সফর। তাই লাল ডিউক বল সামলাতে সমস্যায় পড়তে পারেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে শুভমনকে। সেই কারণেই হয়তো তিন নম্বর ছেড়ে কোহলির চার নম্বরে খেলবেন শুভমন। যাতে রাহুলের পরে মিডল অর্ডার সামলানোর জন্য কেউ থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:
তবে একটা সুবিধা পাবেন শুভমন। ইংল্যান্ডের প্রথম সারির বোলারদের প্রায় কেউই নেই প্রথম টেস্টে। মার্ক উড, ওলি স্টোন, গাস অ্যাটকিনসন, জফ্রা আর্চার না থাকায় কিছুটা হলেও সুবিধা হবে ভারতীয় ব্যাটারদের। সেটা তাঁরা কতটা কাজে লাগাতে পারেন, তার উপর নির্ভর করছে ভারতের সাফল্য।
ভারতের বোলিং আক্রমণে এ বার মহম্মদ শামি নেই। জসপ্রীত বুমরাহও চোট সারিয়ে ফিরছেন। মহম্মদ সিরাজ অনেক দিন লাল বলের ক্রিকেট খেলেননি। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের অভিজ্ঞতা কম। অর্শদীপ সিংহের প্রথম সফর। ফলে বোলারদের সামলানোও বড় চ্যালেঞ্জ শুভমনের সামনে। অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট গত কয়েক বছরে অনেক তারকা তৈরি করেছে। আইপিএলের দৌলতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলার জন্য আগে থেকেই তৈরি থাকেন ক্রিকেটারেরা। সেই সুবিধা পাবেন শুভমন। পাশাপাশি গত তিনটে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ইংল্যান্ড এমন কিছু ভাল ফল করেনি। ভারত সেখানে দু’বার ফাইনাল খেলেছে। তাই কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস বেশি থাকবে তাদের। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরুটা ভাল করতে চাইছে ভারত।
শুক্রবার ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে ৩টে থেকে শুরু ভারত-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট। সরাসরি খেলা দেখা যাবে সোনি স্পোর্টস চ্যানেল ও জিয়োহটস্টার অ্যাপে।