Advertisement
E-Paper

পিঠে ১০, নামে সচিন, কাজে ধোনি! বিশ্বকাপ মাতালেন ভারতের ছোট ‘তেন্ডুলকর’

সচিন তেন্ডুলকরের নাম অনুসারে তাঁর নামকরণ করেছেন বাবা। কিন্তু ক্রিজে নেমে সচিনের ভূমিকার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। সেই সচিনের হাত ধরে ট্রফি ভারতের।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৭
cricket

সচিন ধাস। ছবি: এক্স।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে রানার্স হল ভারত। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও ভারত ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারত না যদি একজন না থাকতেন। তিনি সচিন ধাস। সুপার সিক্স এবং সেমিফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে যিনি ভারতকে ফাইনালে তুলতে ভূমিকা নিয়েছেন। সচিন তেন্ডুলকরের নাম অনুসারে তাঁর নামকরণ করেছেন বাবা। কিন্তু ক্রিজে নেমে সচিনের ভূমিকার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির।

বাবা সঞ্জয় ধাসের ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। সেই ইচ্ছা তিনি পূরণ করতে পারেননি। কিন্তু ছেলে যাতে ক্রিকেটার হয় সেটা মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন। সচিনের জন্মের আগেই ঠিক করে নিয়েছিলেন ছেলেকে ক্রিকেটার বানাবেন। সেই মতো প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেন। মহারাষ্ট্রের বীড়ের মতো ছোট জায়গা থেকে ছেলেকে ক্রিকেটার বানানো ছিল শক্ত। কিন্তু সচিন চোখে পড়ে যান কোচ শেখ আজহারের। তাঁর পরামর্শেই উঠে আসা।

বিশ্বকাপের প্রথম চারটি ম্যাচে সচিন বেশি রান করতে পারেননি। কারণ ব্যাট করারই সুযোগ পাননি। চার ম্যাচে মাত্র ৫৬ রান ছিল। কিন্তু নেপালের বিরুদ্ধে শতরান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৯৬ রানের ইনিংস তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। এখন ভারতীয়দের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাঁরই। কোচ আজহার বলেছেন, “আমাদের এখানে (বীড়) পিচ বলে তো কিছু নেই। আধা পিচ বলা যেতে পারে। সচিনের বাবা ওকে এখানে নিয়ে এসেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে পর্যন্ত অর্ধেক পিচেই অনুশীলন করেছে ও।”

সচিনের বাবার পছন্দের ক্রিকেটার ছিলেন সুনীল গাওস্কর। কিন্তু ছেলের নাম রাখেন সচিনের নামে। তাঁর মতে, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা গাওস্করের খেলা দেখেনি। তাঁর সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারবে না। তাই সচিন সব দিক থেকেই শ্রেষ্ঠ। সংবাদ সংস্থাকে সঞ্জয় বলেছেন, “২০০৫ সালে জন্মের সময় সচিনের নামেই ওর নাম রেখেছিলাম। আমি নিজেও সচিনের বিরাট সমর্থক। কিন্তু সচিন আবার বিরাট কোহলিকে বেশি পছন্দ করে।” সঞ্জয়ের সংযোজন, “সচিনের কোনও বন্ধু নেই। আমিই ওর বন্ধু। কোনও দিন বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যায়নি। ক্রিকেট থেকে ফোকাস নড়ে যায় এমন কোনও কাজ ওকে করতে দিইনি। যে হেতু ওর মা পুলিশে চাকরি করে তাই শৃঙ্খলা আগে থেকেই রয়েছে।”

সচিন ছ’নম্বরে ব্যাট করেন। এই পজিশনে ব্যাটারেরা সাধারণত স্লগ ওভারে বড় শট খেলার চেষ্টা করেন। ফলে নামে সচিন থাকলেও ভূমিকাটা ধোনির মতোই। বিশ্বকাপে প্রথম চার ম্যাচে সেটাই করতে হয়েছিল। কিন্তু আরও একটি দায়িত্ব রয়েছে। কোনও ম্যাচে টপ অর্ডার ধসে গেলে সেটা সামাল দিতেও হয়। এই জিনিসই দেখা গিয়েছে নেপাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে। চাপের মুখে সসম্মানে উত্তীর্ণ সচিন। যদিও ফাইনালে রান পাননি।

পেসারদের বিরুদ্ধে যেমন পুল শট মেরেছেন, তেমনই স্পিনারদের বিরুদ্ধে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে স্লগ সুইপ মেরেছেন সচিন। এক ঝলক দেখলে মনে হতে পারে খুবই সহজ কাজ। কিন্তু বছরের পর বছর অধ্যবসায়ের সাহায্যেই এই জিনিস রপ্ত করেছেন সচিন। বীড়ের মতো আধা পিচে খেলতে হওয়ায় বাকিদের মতো ভাল পরিষেবার সুযোগও ছিল না। তাতেই সফল হয়েছেন তিনি।

মায়ের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। মা সুরেখা ধাস এখন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর পদে কর্মরতা। ছেলে ক্রিকেটার হোক চাননি প্রথমে। কিন্তু স্বামীর জেদের কাছে হার মেনেছেন। সেই ছেলেই অবশ্য পরবর্তী কালে তাঁর জীবনে এনে দিয়েছে বাড়তি খ্যাতি। কাজের জন্য ম্যাচে হাজির থাকতে পারেন না। সব ম্যাচ দেখতেও পারেন না। পাশে থেকে সাহায্যও করতে পারেন না সব সময়। তবে সব অভাব ঢেকে দিয়েছেন বাবা।

তিনি বলেছেন, “আমার স্ত্রী পুলিশ অফিসার হওয়ায় কাজের সময়ের ঠিক থাকে না। কখনও উনি চাননি সচিন ক্রিকেটার হোক। এখন অবশ্য ছেলেকে নিয়ে গর্বিত। আমি জানতাম ছেলে ক্রিকেটার হবেই। ওর মা ধীরে ধীরে সব মেনে নেন। এখন কাজের ফাঁকে সময় পেলেই মোবাইলে ছেলের খেলা দেখেন।”

কখন অনুশীলন করেন সচিন? বাবার উত্তর, “সকালে চার ঘণ্টা এবং বিকেলে সাড়ে তিন ঘণ্টা। তার মধ্যে জিমও থাকে। অর্থাৎ দিনে সাড়ে সাত ঘণ্টা অনুীলন করে। ওর কোচ আজহারকে ধন্যবাদ দেব। আজহার না থাকলে এই দিন আমরা কখনও দেখতে পেতাম না।”

বিশ্বকাপের পরে কি সিনিয়র দলে ছেলেকে দেখতে চান? সঞ্জয় এখনও ততটা আশাবাদী নন। বলেছেন, “অনেক কঠিন পরীক্ষায় ওকে পাশ করতে হবে। ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং বাকিদের প্রার্থনা থাকলে আমার ছেলে একদিন ঠিক জাতীয় দলের হয়ে খেলবে।”

U19 World Cup Sachin Dhas BCCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy