Advertisement
E-Paper

শতরানের পরের সকালেই কোচের ধমক! মাঠে গিয়ে আর প্রিয়াংশের খেলা দেখতে চান না বাবা পবনও

গৌতম গম্ভীরের কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজের হাতে তৈরি প্রিয়াংশ আর্য। ছোট থেকেই বড় শট খেলতে ভালবাসেন। ছাত্রের ইচ্ছাকে দমিয়ে দেননি সঞ্জয়। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে তাঁকে ধারালো করেছেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ২১:২৩
Picture of Priyansh Arya

প্রিয়াংশ আর্য। ছবি: বিসিসিআই।

চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ৪২ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলে আলোচনায় উঠে এসেছেন পঞ্জাব কিংসের প্রিয়াংশ আর্য। ৭টি চার এবং ৯টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ইনিংস আইপিএলের মঞ্চে আরও এক ভারতীয় তরুণ আগ্রাসী ব্যাটারকে উপস্থিত করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের দরবারে। তবু শতরান করার পরের দিন কোচের কাছে ধমক খেয়েছেন তিনি। প্রিয়াংশের বাবা জানিয়েছেন, তিনি আর মাঠে গিয়ে ছেলের খেলা দেখবেন না।

আইপিএলের আগে দিল্লি প্রিমিয়ার লিগ এবং মুস্তাক আলি ট্রফিতে ব্যাট হাতে নজর কেড়েছিলেন প্রিয়াংশ। আইপিএলের নিলামে নাম লেখানোর সময় দিল্লির ২৩ বছরের ব্যাটার নিজের দাম রেখেছিলেন ৩০ লাখ টাকা। দিল্লি ক্যাপিটালস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সঙ্গে লড়াই করে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকায় প্রিয়াংশকে কেনে পঞ্জাব। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উপযোগী বড় শট নেওয়ার দক্ষতাই নিলামে প্রিয়াংশকে নিয়ে আগ্রহ তৈরি করেছিল দলগুলির। সেই আগ্রহ যে অমূলক ছিল না, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন প্রিয়াংশ।

গৌতম গম্ভীরের কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজের হাতে তৈরি প্রিয়াংশ ছোট থেকেই বড় শট খেলতে ভালবাসেন। ছাত্রের ইচ্ছাকে দমিয়ে দেননি সঞ্জয়। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে তাঁকে ধারালো করেছেন। মঙ্গলবার রাতে শতরানের ইনিংস খেলার পর বুধবার সকালেই কোচকে ফোন করেন প্রিয়াংশ। কোচকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘স্যার, আমি কি ভাল খেলেছি?’’ ধমক দিয়ে সঞ্জয় বলেছেন, ‘‘কিসের ভাল! সবে একটা ম্যাচে ভাল খেলেছিস। এতেই সন্তুষ্ট?’’ প্রিয় ছাত্রের যাতে মাথা ঘুরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন কোচ। ধমক খাওয়ার পর প্রিয়াংশ আর কথা বাড়াননি। পরের প্রায় ১০ মিনিট ফোনে কোচ যা বলেছেন, তার উত্তরে শুধু ‘হ্যাঁ স্যর’ বা ‘না স্যর’ বলেছেন। সঞ্জয় বলেছেন, ‘‘প্রিয়াংশকে বলেছি, তুই শুধু হাতের জোরে খেললে শ্রমিক ক্রিকেটার হয়ে যাবি। শুধু বুদ্ধি খাটিয়ে খেললে ভাল ক্রিকেটার হতে পারবি। আর হাত এবং মাথা এক সঙ্গে ব্যবহার করে খেললে শিল্পী ক্রিকেটার হতে পারবি। যে দিন এই দুইয়ের সঙ্গে হৃদয়ও যোগ করতে পারবি, সে দিন দক্ষ শিল্পী হতে পারবি।’’

গম্ভীর এবং প্রিয়াংশের মাঝে সঞ্জয়ের হাতে তৈরি হয়েছেন অমিত মিশ্র, যোগিন্দর শর্মা, নীতীশ রানা, উন্মুক্ত চন্দের মতো ক্রিকেটারেরা। প্রিয়াংশের আগ্রাসী শতরান দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সঞ্জয়। তিনি বলেছেন, ‘‘ও শুধু বল দেখেছে আর ব্যাট চালিয়েছে। জায়গা দিলেই ও ব্যাট চালাবে। একমাত্র খলিল আহমেদ পিচ থেকে কিছুটা সাহায্য পেয়েছে। কিন্তু ওর বলেও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সেই সুবিধাটা পেয়েছে প্রিয়াংশ। সব ম্যাচে এমন হবে না।’’

ভারতীয় দলের কোচ গম্ভীর যখন সঞ্জয়ের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতেন, তখন প্রিয়াংশ ছোট। সবে ক্রিকেট শিখতে শুরু করেছেন। সামনে থেকে ব্যাট করতে দেখেছেন গম্ভীরকে। ভারতীয় দলের কোচের ব্যাটিংয়ের প্রভাব রয়েছে তাঁর মধ্যে। ঘরোয়া ক্রিকেটে গম্ভীরের শেষ মরসুমে রঞ্জি ট্রফির জন্য দিল্লির প্রাথমিক দলে ছিলেন প্রিয়াংশ। সে সময়েও গম্ভীরের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে কথা বলার সুযোগ তেমন পাননি। অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটে ২৭১ রানের ইনিংস খেলার পর অবশ্য গম্ভীরের নানা পরামর্শ সমৃদ্ধ করেছে প্রিয়াংশকে। গত ছ’সাত বছর ধরে প্রিয়াংশের ক্রিকেটের দেখভাল করছেন ভারতীয় দলের কোচ। প্রিয়াংশের বাবা পবন আর্য বলেছেন, ‘‘গম্ভীর প্রিয়ংশকে বলেছেন, যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলার চেষ্টা করতে। যেখানেই খেলার সুযোগ পাবে, সেখানেই খেলতে। যত খেলবে তত উন্নতি হবে। গম্ভীর দিল্লির অনেক ছেলেকে প্রচুর সাহায্য করেছেন। উন্মুক্ত, আয়ুষ বদোনী, নবদীপ সাইনি, নীতীশদের কথা বলতে পারি।’’

আইপিএলে প্রিয়াংশের ইনিংসের পর বুধবার সকাল থেকে দিল্লির অশোক বিহারের বাড়িতে অতিথিদের ভিড়। পরিস্থিতি সামলাতে ছুটি নিতে হয়েছে পবনকে। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রিয়াংশকে প্রথম বার আইপিএলে খেলতে দেখে খুব আনন্দ হয়েছিল। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচটা দেখতে চণ্ডীগড় গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম বলেই আউট হয়ে গিয়েছিল। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে শতরানের ইনিংসটা বাড়িতে বসে টেলিভিশনে দেখেছি। ঠিক করেছি, আর কখনও মাঠে গিয়ে ছেলের খেলা দেখব না। মনে হচ্ছে আমিই ওর দুর্ভাগ্যের কারণ।’’

দিল্লি প্রিমিয়ার লিগ এবং আইপিএলের আগে ভোপালে সঞ্জয়ের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতেন প্রিয়াংশ। তা নিয়ে সঞ্জয় বলেছেন, ‘‘দিনে ১২ ঘণ্টা অনুশীলন করত প্রিয়াংশ। সেই ১২ ঘণ্টা ফোন ব্যবহার করতে দিতাম না। দিনে মাত্র ১ ঘণ্টা মোবাইল দিতাম। সকাল সাড়ে ৬টায় অনুশীলন শুরু করত। বিভিন্ন পর্যায় ছিল। সন্ধে ৬টায় শেষ হত। তার মধ্যে বিশ্রামের কোনও সুযোগ থাকত না। সাধারণ ঘরোয়া খাবারের বাইরে আর কিছু খাওয়ার অনুমতি ছিল না।’’ তাঁর আশা, ঈশ্বর চাইলে প্রিয়াংশও এক দিন বড় ক্রিকেটার হতে পারবে। ছাত্রের মধ্যে সেই সম্ভাবনা এবং প্রতিভা আছে বলেই মনে করেন ভারতীয় দলের কোচের কোচ।

Priyansh Arya Sanjay Bhardwaj Gautam Gambhir Punjab Kings
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy