চ্যাম্পিয়ন: ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার পরে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। শনিবার অ্যান্টিগায়। এই নিয়ে পঞ্চমবার এই বিশ্বকাপ জিতল ভারত। বিসিসিআই।
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সূর্যোদয় ভারতীয় ক্রিকেটের। অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডকে চার উইকেটে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে নিল ভারত।
এই জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছে রবি-রাজের যুগলবন্দি। অর্থাৎ, দুই পেসার রবি কুমার এবং রাজ বাওয়ার বিধ্বংসী বোলিং। ফাইনালে রাজের সংগ্রহ পাঁচ উইকেট, রবির চার। এই দুই পেসারের দাপটে ইংল্যান্ড শেষ হয়ে যায় ১৮৯ রানে। ব্যাট করতে নেমে ৪৭.৪ ওভারে ওই রান তুলে দেয় ভারত। ব্যাট হাতেও অবদান রেখে যায় রাজ (৩৫)। আর শেষ দিকে অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে ট্রফি এনে দিল নিশান্ত সিন্ধু। যে ছেলেটা কয়েক দিন আগেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল।
ম্যাচ শেষে অ্যান্টিগায় স্যর ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে যশ ধুল-রবি কুমারদের আনন্দ করতে দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল ১৯৯৮ সালের কথা। সে বার আমিও যুব বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলাম। কিন্তু সে বার পাকিস্তানকে হারিয়েও রান রেটে পিছিয়ে থাকায় আমরা ছিটকে যাই। তাই যখনই ভারত এই ট্রফিটা জেতে, একটা আলাদা তৃপ্তি হয়। শনিবার যেমন হল।
ফাইনালটা মনে থেকে যাবে রবি-রাজের যুগলবন্দির জন্য। শুরুটা করেছিল বাংলার পেসার রবি কুমার। আর প্রথম পরিবর্ত হিসেবে বল করতে এসে ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটা ভেঙে দিল রাজ বাওয়া।
রাজ ছেলেটা একটা ক্রীড়া পরিবার থেকে এসেছে। ওর ঠাকুর্দা তারলোচন বাওয়া ১৯৪৮ সালের অলিম্পিক্সে ভারতের সোনাজয়ী হকি দলের সদস্য ছিলেন। যুবরাজ সিংহের মতো ক্রিকেটারকে কোচিং করিয়েছেন ওর বাবা সুখবিন্দর। ফলে খেলাটা রাজের রক্তে।
যুবরাজের খুব বড় ভক্ত রাজ। ওদের পরিবারও চণ্ডীগড়ে চলে এসেছিল। দিন কয়েক আগে রাজের একটা সাক্ষাৎকারে পড়ছিলাম, যুবরাজকে দেখে ও বাঁ-হাতে ব্যাটিং করা শুরু করে। এই বিশ্বকাপে একটা রেকর্ডও করেছে রাজ। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছে ও। যখন উগান্ডার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্যায়ে অপরাজিত ১৬২ রানের ইনিংস খেলে।
তবে বলটা করে ডান হাতে। আর সেই ডান-হাতি পেসেই এ দিন সমস্যায় ফেলে দিল ইংল্যান্ডকে। একটা সময় রাজের স্পেলটা ছিল এ রকম: ৬-১-১৪-৪। শেষ পর্যন্ত ৩১ রানে পাঁচ উইকেট নিল। রবি শেষ করল ৩৪ রানে চার উইকেট নিয়ে। জেমস রিউয়ের ৯৫ রানের দৌলতে ইংল্যান্ড লড়াইয়ের মতো জায়গায় পৌঁছেছিল। রিউকে আউট করে ইংল্যান্ডের প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ে বড় ধাক্কা মারে বাংলার রবিই। রাজের সেরা ডেলিভারি ছিল যে বলে ও জর্জ বেলকে ফিরিয়ে দিল। গুডলেংথ স্পটের একটু আগে পড়া বলটা সাপের ফণা তুলে ছোবল মারার মতো করে বেলের গ্লাভসটা ছুঁয়ে উইকেটকিপারের হাতে চলে গেল। পরপর দু’বলে দু’উইকেট নিয়ে ওই সময় হ্যাটট্রিকের সামনে চলে এসেছিল রাজ।
এই মাঠে চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা খেলতে নেমেছিল ভারত। ফাইনালে টস জিতে ব্যাট নেয় ইংল্যান্ড অধিনায়ক টম প্রেস্ট। সেটা অবশ্য স্বাভাবিক। এই রকম বড় ম্যাচে স্কোরবোর্ডের চাপটা নিতে চায় না অনেক দলই। টসের পরে ইংল্যান্ড অধিনায়ক প্রেস্ট দেখলাম, সে কথাটা বলে গেল।
কত রানের লক্ষ্য মাথায় নিয়ে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেছিল ইংল্যান্ড? আমার মনে হয়, কম করে আড়াইশো ওদের লক্ষ্য ছিল। কারণ এই মাঠেই আগের ম্যাচে পাকিস্তান তিনশোর উপরে রান তুলে দিয়েছিল। যে কারণে প্রথম থেকেই বড় শটের দিকে ঝুঁকছিল ওদের ওপেনাররা।
কিন্তু নতুন বলে রবি কুমার আর তার পরে রাজ এসে ইংল্যান্ড ব্যাটিংকে বিধ্বস্ত করে দেয়। এই বিশ্বকাপের শুরুর দিকে রবি কিন্তু সে ভাবে ভিতরে ঢুকে আসা বলটা করতে পারছিল না। যেটা যে কোনও বাঁ-হাতি পেসারের বড় অস্ত্র। কিন্তু খেলা যত গড়িয়েছে, তত ওর ইনসুইংটা ধারালো হয়েছে। আর সেটাই সাহায্য করছে উইকেট পেতে। বাঁ-হাতি ওপেনার জেকব বেথেল ও রকমই একটা ছোট্ট সুইং ফস্কে পায়ে বল লাগিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যায়। অধিনায়ক প্রেস্ট ব্যাটের কানায় বলটা লাগিয়ে উইকেটে টেনে আনল।
রাজও গতির সঙ্গে ভাল সুইং পেয়েছে। আর যেটা পেয়েছে, সেটা হল বাড়তি বাউন্স। যে বাউন্সের সামনে বেসামাল হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। কোনও সন্দেহ নেই, ভারতের বোলিং শক্তি মূলত স্পিন নির্ভর। কিন্তু এই বিশ্বকাপে পেসাররা চমকে দিচ্ছে। কখনও রবি, কখনও রাজ, কখনও বা রাজ্যবর্ধন হাঙ্গারগেকর। এ দিন অবশ্য হাঙ্গারগেকর শুরুতে একটু মার খেয়ে গেল লাইন-লেংথে সমস্যা হওয়ায়। কিন্তু রাজ ও রবির যুগলবন্দিতে ম্যাচের রাশ চট করে নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
গত কয়েক বছর ধরে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটটাকে দেখে গিয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়। ও চলে যাওয়ার পরে ব্যাটন এখন ভিভিএস লক্ষ্মণের হাতে। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান হিসেবে লক্ষ্মণের কাজটা হবে এই সাফল্য ধরে রাখা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy