Advertisement
১১ মে ২০২৪
india cricket

India Vs West Indies: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০০ পেরোয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারতের বিরুদ্ধে ৩০৫, ৩১১! কী ভাবে

বদলে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০০ করতে না পারা পুরানরা ভারতের বিরুদ্ধে দু’ম্যাচেই ৩০০-র বেশি রান করলেন। কী ভাবে?

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে কালঘাম ছুটল ভারতের

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে কালঘাম ছুটল ভারতের ছবি: পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ ১৪:৫৮
Share: Save:

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনটি এক দিনের ম্যাচে ১৪৯, ১০৮ ও ১৭৮ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কোনও ম্যাচেই পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেননি নিকোলাস পুরানরা। তিনটি ম্যাচই বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তামিম ইকবালরা। সাত দিন পরে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই বদলে গেল। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম দু’টি এক দিনের ম্যাচেই ৩০০-র বেশি রান করেছে তারা। দু’টি ম্যাচ ভারত জিতলেও তার জন্য কালঘাম ছুটে গিয়েছে শিখর ধবনদের। শেষ ওভারে হয়েছে ম্যাচের ফয়সালা।

কী ভাবে এতটা বদলে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ? সত্যিই কি তাদের খেলার মান ভাল হয়েছে? না কি বাংলাদেশের থেকে খারাপ ক্রিকেট খেলেছে ভারত? তার ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনেক ভাল দল দেখাচ্ছে। কী কী কারণ থাকতে পারে এই বদলের পিছনে?

বাংলাদেশ ও ভারতের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একই দল খেলেছে। কিন্তু বিপক্ষ দুই দলের ছবিটা আলাদা। শাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া প্রথম একাদশের প্রায় সবাইকে নিয়ে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলী, লোকেশ রাহুল, ঋষভ পন্থ, হার্দিক পাণ্ড্য, রবীন্দ্র জাডেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরার মতো প্রথম দলের ক্রিকেটাররা ভারতীয় দলে নেই। বিশেষ করে বোলিং বিভাগে যুজবেন্দ্র চহাল ছাড়া বাকিদের অভিজ্ঞতা অনেক কম।

বদল হয়েছে মাঠেও। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে হয়েছিল তিনটি ম্যাচ। সেখানে উইকেটের দু’দিকে বাউন্ডারির দূরত্ব ৮০ ও ৭৮ মিটার। অন্য দিকে ভারতের বিরুদ্ধে ত্রিনিদাদের কুইন’স পার্ক ওভালে খেলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই মাঠ অপেক্ষাকৃত ছোট। উইকেট থেকে দু’দিকের বাউন্ডারির দূরত্ব ৬২ ও ৭০ মিটার। বড় মাঠে চার-ছয় মারা কঠিন। ভারতের বিরুদ্ধে মাঠ ছোট হওয়ায় সেই সমস্যা হয়নি নিকোলাস পুরানদের।

তফাত রয়েছে উইকেটেও। প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের পিচ স্পিন সহায়ক। বাংলাদেশের স্পিনাররা তিন ম্যাচে বিপক্ষের মোট ২১টি উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশ নিজেদের দেশেও স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলে। সে দেশে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো বড় দলও সমস্যায় পড়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে নিজেদের পছন্দের উইকেটে কামাল করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজরা। অন্য দিকে কুইন’স পার্কে স্পিনারদের জন্য সামান্য সুবিধা থাকলেও সুইং নেই। পাটা উইকেটে বল করতে সমস্যায় পড়েছেন ভারতীয় পেসাররা।

প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে মোট ২৫টি এক দিনের ম্যাচ হয়েছে। বাংলাদেশ সিরিজের আগে এই মাঠে শেষ ২০১৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেট খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই মাঠে এক ইনিংসে সর্বাধিক রান ৩০৯। সর্বনিম্ন রান ৯৮। প্রথম ইনিংসের গড় রান ২১৬। অন্য দিকে কুইন’স পার্কে হয়েছে ৭০টি এক দিনের ম্যাচ। এক ইনিংসে সর্বাধিক রান ৪১৩। সর্বনিম্ন ৭৫। প্রথম ইনিংসের গড় রান ২৬৫। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে গায়ানার তুলনায় ত্রিনিদাদের মাঠে রান করা অপেক্ষাকৃত সহজ। সেটা দেখা গিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলায়।

পরিস্থিতি, পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন, মাঠে ক্রিকেটাররা যে রকম খেলবেন তেমনটাই ফল করবে তাঁদের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে লজ্জার হারের পরে বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম হুঙ্কার দিয়েছিলেন, এক দিনের ক্রিকেটে ছবিটা বদলাবে। সেটা দেখা গিয়েছে। জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপিয়েছেন তামিমরা। স্পিনাররা দুর্দান্ত বল করেছেন। নিরাশ করেননি ব্যাটাররা। ফলে সহজেই সিরিজ জিতেছেন তাঁরা।

এমন কথাই বললেন বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার দেবাং গাঁধী। আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, “ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা বোঝা মুশকিল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওরা খারাপ খেলেছে বলেই ভারতের বিরুদ্ধে খারাপ খেলবে এমন মানে নেই। পরিবেশ-পরিস্থিতি আলাদা ছিল। অন্য মাঠে খেলা হয়েছে। সেখানেও কিছুটা তারতম্য রয়েছে। ফলে অনেক কিছু নির্ভর করে। মাঠের কারণে পারফরম্যান্সে বদল হতেই পারে। এর মধ্যেও ভারত জিতেছে। সেটাই আসল।”

অন্য দিকে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক নিকোলাস পুরান জানিয়েছিলেন, এটি তাঁদের কাছে নিছক সিরিজ নয়, বাঁচার লড়াই। বাংলাদেশের কাছে যে অসম্মান হয়েছে, সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার লড়াই। সেই লড়াই দেখা গিয়েছে তাঁদের খেলায়। বদলে গিয়েছে শরীরী ভাষা। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন তাঁরা। তাই তো মাত্র তিন রানে প্রথম এক দিনের ম্যাচ জেতার পরে পুরান বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে যেন আমরাই জিতেছি।’’ ২ উইকেটে দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচ হারের পরে বিধ্বস্ত দেখিয়েছে পুরানকে। বলেছেন, ‘‘খুব পরিশ্রম করেছিলাম। জেতাটা খুব দরকার ছিল।’’

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভাল খেলতে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ হলেও ভারতীয় বোলারদের আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁরা আইপিএলে দেখেছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটাররা লেংথ বলে কতটা পারদর্শী। তার পরেও ক্রমাগত লেংথে বল করে গিয়েছেন শার্দুল ঠাকুর, মহম্মদ সিরাজরা। স্পিনাররা উইকেট থেকে কিছুটা সাহায্য পেলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করতে পারেননি চহাল, অক্ষররা। চার-ছক্কা খেলে উইকেট তোলার নয়, বাঁচার চেষ্টা করেছেন ভারতীয় বোলাররা। তারই খেসারত দিতে হয়েছে তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE