Advertisement
০৮ মে ২০২৪
ICC T20 World Cup

পার্‌থের বাউন্সেই বেহাল, রাহুলকে আর কত সুযোগ

অপ্রত্যাশিত ঘটনা হল, বিরাট কোহলির ক্যাচ ছাড়া। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার ডিপ মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে মার্করামের সহজ একটা ক্যাচ ছেড়ে দিল।

বিধ্বংসী: হার্দিককে আউট করে এনগিডির উচ্ছ্বাস। চার উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যাচের সেরা।

বিধ্বংসী: হার্দিককে আউট করে এনগিডির উচ্ছ্বাস। চার উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যাচের সেরা। ছবি পিটিআই।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ০৯:১৭
Share: Save:

রবিবার পার্‌থে দু’টো ঘটনা ঘটতে দেখলাম। একটা প্রত্যাশিত ছিল। অন্যটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আর এই দু’টো ঘটনাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে হারিয়ে দিল ভারতকে।

প্রত্যাশিত ঘটনা ছিল, পার্‌থের পিচের বাউন্স। সূর্যকুমার যাদব ছাড়া যা আর কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যান সামলাতে পারেনি। তবে একই কথা বলা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের সম্পর্কেও। ওরাও কিন্তু ভারতীয় পেসারদের খেলতে সমস্যায় পড়ে যাচ্ছিল।

অপ্রত্যাশিত ঘটনা হল, বিরাট কোহলির ক্যাচ ছাড়া। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার ডিপ মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে মার্করামের সহজ একটা ক্যাচ ছেড়ে দিল। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঝের সারির এই ব্যাটসম্যান তখন ৩৫ রানে। ওই সময়ই দক্ষিণ আফ্রিকা আাক্রমণ শুরু করেছিল। মার্করামের উইকেট কিন্তু বড় চাপে ফেলে দিতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকাকে। মার্করাম আউট হয় ৫২ রান করে। তত ক্ষণে মিলারের সঙ্গে জুটিতে ম্যাচটাকে ধরে নিয়েছে।

এর পরে রোহিতও একটা সহজ রান আউট ফস্কাল মার্করামের। ব্যাটসম্যান মাঝ পিচে। তিনটে স্টাম্প দেখতে পাচ্ছিল রোহিত। অনেক সময় পেয়েছিল। আন্ডারআর্ম থ্রো করে ও। যেটা উইকেটে লাগানো আরও সহজ। কিন্তু ওখান থেকেও রান আউট করতে পারল না রোহিত। ম্যাচের পরে দেখলাম ভারত অধিনায়ক বলছে, একটা বিভাগে খারাপ খেলার জন্য হেরে গেল দল। ফিল্ডিং।

টস জিতে পার্‌থের উইকেটে ব্যাটিং নিয়েছিল ভারত। জানতাম, ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আগুনে বোলিং সামলাতে হবে। ভাল করে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই পাঁচ ওভারের মধ্যে দু’উইকেটে ২৬। ফিরে গিয়েছেদুই ওপেনার।

কে এল রাহুল এই বিশ্বকাপে একেবারেই ছন্দে নেই। তিনটে ম্যাচেই পাওয়ার প্লে-র মধ্যে আউট হল। এ দিন ওয়েন পার্নেলের করা প্রথম ওভারটাই মেডেন দিল রাহুল। যার ফলে ভারতের ম্যাচ হয়ে দাঁড়াল ১৯ ওভারের। এর পরে লুনগি এনগিডির বাউন্স সামলাতে না পেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেল। রাহুল যে ভাবে খেলছে, তাতে ভারতের মাঝের সারির ব্যাটসম্যানরা চাপে পড়ে যাচ্ছে। এর পরে আর কত সুযোগ দেওয়াহবে রাহুলকে?

এ দিন পার্‌থের বাউন্স আর দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের গতির সামনে বার বার সমস্যায় পড়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। রোহিত, বিরাট এবং হার্দিক— তিন জনই পুল-হুক মারতে গিয়ে ফিরে গেল। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে শর্ট বল যে ভাবে মুখের সামনে উঠে এসেছিল, ব্যাটসম্যানের পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন ছিল। ডিপ ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে দু’টো দারুণ ক্যাচ ধরল কাগিসো রাবাডা। তার মধ্যে হার্দিকের ক্যাচটা তো আমি বলব এই বিশ্বকাপের এখনও পর্যন্ত সেরা ক্যাচ। বলটা নিচু হয়ে পড়ে যাচ্ছিল। রাবাডা সামনে শরীর ছুড়ে মাটি ঘেঁষে ক্যাচটা তুলে নিল। দু’দলের ফিল্ডিংই জয়-পরাজয়ের মধ্যে ফারাকটাকরে দিল।

এ দিন পার্‌থের পিচের কথা মাথায় রেখে বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলিয়েছিল ভারত। কিন্তু ঋষভ পন্থকে না নিয়ে দীপক হুডাকে কেন খেলানো হল, এটা মাথায় ঢুকছে না। হুডাকে দেখে মনে হল, খেলার মধ্যে না থাকার ছাপটা পড়েছে ব্যাটিংয়ে। অনেক বাইরের একটা বল মারতে গিয়ে আউট হল। ৮.৩ ওভারে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় পাঁচ উইকেটে ৪৯। যার মধ্যে চারটি উইকেটই এনগিডির। হুডাকে শুধু আউট করে অনরিখ নখিয়া।

ওই সময় মনে হচ্ছিল, ভারত একশোও করতে পারবে না। কিন্তু অসাধারণ ব্যাটিং করে গেল সূর্যকুমার। আমার দেখা ওর অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস। ৪০ বলে ৬৮ করল ছ’টা চার, তিনটে ছয়ের সাহায্যে। দক্ষিণ আফ্রিার বাঁ-হাতি স্পিনার কেশব মহারাজকে মারা সোজা একটা ছয় এবং এনগিডিকে ফ্লিক করে পাওয়া বাউন্ডারিটা ভোলা যাবে না।

এর পরে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে আরশদীপ সিংহ। এই ছেলেটা কিন্তু কয়েকটা মাসের মধ্যে ভারতের নির্ভরযোগ্য বোলার হয়ে উঠেছে। দু’দিকেই বল মুভ করাতে পারে এই বাঁ-হাতি পেসার। এ দিন যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে আউট করল একটা আউটসুইং আর একটা ইনসুইংয়ে। ডি’ককের বলটা বাইরে গেল। রাইলি রুসোর বলটা ভিতরে এল। শুধু নতুন বলে নয়, শেষ দিকেও ভাল বল করতে পারে আরশদীপ। ও সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে চলেছে।

এ দিন দুই দলের পেসাররাই খুব ভাল বল করে গেল। সমস্যা পড়ে যায় স্পিনাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার কেশব মহারাজকে আক্রমণ করল সূর্য। আর ভারতের অফস্পনার আর অশ্বিনকে মিলার। শেষ তিন ওভার যখন বাকি, মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার এবং অশ্বিনের একটা করে ওভার বেঁচে। রোহিত ১৮তম ওভার অশ্বিনকে দিল। রান বাকি ছিল ২৫। প্রথম দু’টো বলে দু’টো ছয় মেরে ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে নিয়ে গেল মিলার। রোহিত দেখলাম পরে বলছে, অশ্বিনকে দিয়ে শেষ ওভার করানোর ঝুঁকি নেয়নি। আমার মতে এটা ঠিক সিদ্ধান্ত নয়। ১৮ ও ১৯ ওভারে দুই পেসার এসে যদি মিলারকে ফিরিয়ে দিতে পারত, ম্যাচ ভারতের হাতেচলে আসত।

এ বার বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতকে জিততে হবে। সে জন্য কিন্তু দলে একটা বদল খুব দরকার। কে এল রাহুলের জায়গায় ওপেন করানো হোক ঋষভ পন্থকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ICC T20 World Cup India vs South Africa 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE