Advertisement
০৩ মে ২০২৪
ICC Cricket World Cup

ম্যাচের পরেই মেজাজ হারালেন ৮২ রান করা শ্রেয়স, কোন প্রশ্নে রেগে গেলেন ভারতীয় ব্যাটার?

শ্রেয়স অবশ্য জানলে ভাল করবেন যে, শুধু সাংবাদিকেরা নয়। রবি শাস্ত্রী, দীনেশ কার্তিকেরাও বার বার আলোচনা করছিলেন, শর্ট বলের বিরুদ্ধে তাঁর দুর্বলতা নিয়ে।

Shreyas Iyer

শ্রেয়স আয়ার। —ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২০
Share: Save:

শ্রীলঙ্কাকে ৩০২ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে চলে যাওয়ার সুর কিছুটা হলেও তিতকুটে হয়ে থাকল রাতের ওয়াংখেড়েতে। যখন শ্রেয়স আয়ার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে শর্ট বল নিয়ে প্রশ্নের সামনে মেজাজ হারিয়ে ফেললেন। ‘‘শর্ট বলে আমার সমস্যা হচ্ছে বলতে আপনারা কী বোঝাতে চাইছেন? আপনি কি দেখেছেন, কতগুলো পুল আমি মেরেছি আর কতগুলোতে চার হয়েছে?’’ বেশ ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে জবাব দিতে থাকেন শ্রেয়স।

এখানেই থামেননি তিনি। যোগ করেন, ‘‘শট খেলতে থাকলে কখনও না কখনও আউট হতেই পারে যে কেউ। সেটা শর্ট বল হোক কী হাফভলি। দু’তিন বার বোল্ড হলে কি আপনারা বলবেন, আমি ইনসুইঙ্গার খেলতে পারি না?’’ ক্রমশ সুর চড়তে থাকে তাঁর। দেখে মনে হচ্ছিল যে, মাঠে যতই শর্ট বলের সামনে অস্বস্তিতে থাকুন, পরিকল্পনা করে এসেছেন, শর্ট বল নিয়ে প্রশ্ন হলে মাইক হাতে ওড়াবেন। ৫৬ বলে ৮২ করায় আজ তাঁর বলার দিনও। উত্তেজিত ভাবে বলে গেলেন, ‘‘ব্যাটসম্যান যে কোনও ধরনের বলে আউট হতে পারে। আপনারা বাইরে এমন একটা আবহ তৈরি করেছেন যে, আমি শর্ট বল খেলতে পারি না।’’ আরও ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘আমি মুম্বইয়ে ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছি। এখানে অন্য অনেক জায়গার থেকে বাউন্স বেশি থাকে।’’

শ্রেয়স অবশ্য জানলে ভাল করবেন যে, শুধু সাংবাদিকেরা নয়। রবি শাস্ত্রী, দীনেশ কার্তিকেরাও বার বার আলোচনা করছিলেন, শর্ট বলের বিরুদ্ধে তাঁর দুর্বলতা নিয়ে। কার্তিক এমনও বললেন যে, কোহলির থেকে শেখা উচিত শ্রেয়সের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শর্ট বলে আউট হয়েছিলেন কোহলি। শট মাটিতে রাখতে পারেননি। তার পর থেকে নিরন্তর পরিশ্রম করে গিয়েছেন কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ আনা যায় পুল বা হুক মারার সময়। কার্তিকের কথায়, ‘‘কোহলি নিয়ন্ত্রণ আনতে চেয়েছে। নিজে এত বড় ব্যাটসম্যান সেটা মাথায় রাখেনি। গ্রেট সচিন তেন্ডুলকরকে এটা করতে দেখতাম। শ্রেয়স শর্ট বল দেখলেই ছক্কা মারতে যাচ্ছে।’’ এটাও তো সকলে দেখেছে যে, কোচ রাহুল দ্রাবিড় দু’দিন ধরে শুধু তাঁকে শর্ট বলের বিরুদ্ধে লাগাতার ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করিয়ে গিয়েছেন। এমনি-এমনি করিয়েছেন নাকি?

ওয়াংখেড়েতে উপস্থিত কেউ অবশ্য শ্রেয়সের মন্তব্য নিয়ে পড়ে নেই। বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করার পঁচিশ দিনের মাথায় দু’টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ বাকি থাকতেই প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে চলে গেল ভারত। চারদিকে আনন্দের হাওয়া। মুম্বইয়ের রাস্তায় নতুন সংযোজন হয়েছে, লাইটপোস্টে জাতীয় পতাকার রঙয়ের আলো। রাস্তার ধারে সব পোস্টে গেরুয়া, সাদা, সবুজ দেখে মনে হবে যেন জাতীয় উৎসব চলছে। ওয়াংখেড়েতে এমন দাপুটে জয়ের রাতে সেই তেরঙ্গা আলো আরও মায়াবী দেখাচ্ছে। পাকিস্তান অবিশ্বাস্য ভাবে সেমিফাইনালে পৌঁছে না গেলে এখানেই খেলতে আসবেন রোহিত, কোহলিরা। পাকিস্তান উঠলে ম্যাচ হবে ইডেনে। তার আগে এই ৩০২ রানের বিশাল জয় নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে রাখল দলের। তা ছাড়া সর্বকালীন প্রেরণা, ২০১১-র ২ এপ্রিল তো আছেই। রোহিত এ দিন ম্যাচের শেষে বলে গেলেন, ‘‘আমি খুব খুশি যে, সরকারি ভাবে সেমিফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করে গেলাম। দলের প্রত্যেকের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে। যখন চেন্নাইয়ে শুরু করেছিলাম, এটাই ছিল প্রথম লক্ষ্য। সেমিফাইনালে উঠতে হবে, তার পরে অবশ্য সেমি আর ফাইনাল জেতার লক্ষ্য তৈরি হবে।’’ বোলিং বিভাগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেলেন। বিশেষ করে সিরাজের। বললেন, ‘‘নতুন বলে দারুণ সুইং করায় সিরাজ। বাইরের দিকে, ভিতরের দিকে সব রকম বল রয়েছে ওর হাতে। নৈপুণ্যের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। ও যদি নিজের দক্ষতা অনুযায়ী বল করতে পারে আমাদের কাজ সহজ হয়ে যায়।’’ যোগ করলেন, ‘‘তবে আমি সব চেয়ে খুশি দলের মনোভাবে। যে ভাবে এই সাতটা ম্যাচ আমরা খেলেছি, তাতে।’’ পাশে দাঁড়ালেন শ্রেয়সেরও। ‘‘আমরা জানি শ্রেয়স কী করতে পারে। মানসিক ভাবে খুব শক্তিশালী। আজ সকলে তো সেটা দেখেই নিতে পারল।’’

সচিন তেন্ডুলকর ও মুথাইয়া মুরলীধরন পাশাপাশি বসে খেলা দেখলেন। ২০১১-র সেই ফাইনালে প্রতিপক্ষ। সচিন ফিরলেন জয়ের হাসি নিয়ে। আর মুরলীর থমথমে মুখ দেখে মনে হল, এত লজ্জিত আর কখনও হননি। ২ এপ্রিলের সে রাতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি স্বপ্নভঙ্গ ঘটিয়েছিলেন। তবু তাঁরা লড়েছিলেন। কুশল মেন্ডিসের দল তো শিরদাঁড়াটাই দেখাতে পারল না। শুনলাম, নিজের দেশের সাংবাদিকদের কাছে মুরলী ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন যে, একেবারে অনভিজ্ঞ দল পাঠিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনা হয়েছে। প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্বকাপে এত হেলাফেলা করে দল বাছব কেন? বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার মাঠে দেশ ৫৫ অলআউটের লজ্জা গায়ে মেখে ফিরছে। দেখে কার মাথা ঠিক থাকবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ICC Cricket World Cup Shreyas Iyer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE