দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দিশেহারা দেখাল শাকিব, মুশফিকুরদের। ছবি: আইসিসি।
বিশ্বকাপে হেরেই চলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু করলেও শাকিব আল হাসানের দলকে ক্রমশই বেরঙিন দেখাচ্ছে। চোট সারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অধিনায়ক দলে ফিরেও রক্ষা করতে পারলেন না। মঙ্গলবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ৫ উইকেটে ৩৮২ রান। জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস ৪৬.৪ ওভারে শেষ হল ২৩৩ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল ১৪৯ রানে। পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল তারা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এডেন মার্করাম। ওপেনার কুইন্টন ডিককের আগ্রাসী শতরানের সুবাদে বড় রান তুললেন তাঁরা। এ বারের বিশ্বকাপে তিনটি শতরান করে ফেললেন ডিকক। মঙ্গলবার তাঁর ব্যাট থেকে এল ১৪০ বলে ১৭৪ রানের দুরন্ত ইনিংস। ১৫টি চার এবং ৭টি ছক্কা এল তাঁর ব্যাট থেকে। অন্য ওপেনার রেজ়া হেনড্রিকস (১২) এবং তিন নম্বরে নামা রাসি ভ্যান ডার ডুসেন (১) ব্যর্থ হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার রান তোলার গতি কখনও কমেনি। ডিকককে সঙ্গ দিলেন চার নম্বরে নামা মার্করাম এবং পাঁচ নম্বরে নামা হেনরিক ক্লাসেন। মার্করামের ব্যাট থেকে এল ৬৯ বলে ৬০ রানের ইনিংস। ৭টি চার মারলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ম্যাচের অধিনায়ক। ১০ রানের জন্য শতরান পেলেন না ক্লাসেন। ২টি চার এবং ৮টি ছক্কার সাহায্যে ৪৯ বলে ৯০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেললেন তিনি। মূলত তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংই বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য কার্যত ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে চলে যায়। শেষ দিকে ডেভিড মিলারের ১৫ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংসও চাপ বৃদ্ধি করল শাকিবের দলের উপর। শেষ ১০ ওভারের ১৪৪ রান তুললেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারেরা।
ওয়াংখেড়ের ২২ গজে বাংলাদেশের কোনও বোলারই তেমন সুবিধা করতে পারলেন না। সফলতম হাসান মাহমুদ ৬৭ রান খরচ করে পেলেন ২ উইকেট। মেহেদি হাসান মিরাজ ৯ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে ১ উইকেট পেলেন। তিনিই এ দিন বাংলাদেশের কৃপণতম বোলার। শাকিব ১ উইকেট পেলেন ৬৯ রান দিয়ে। বাংলাদেশের কোনও বোলারই বলার মতো পারফরম্যান্স করতে পারলেন না।
জয়ের জন্য ৩৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে চাপ নিতে পারলেন না লিটন দাস, তানজ়িদ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তরাও। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণের সামনে তাঁদের দিশেহারা দেখাল। ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টাও দেখা গেল না কারও মধ্যে। একাধিক ব্যাটার ভুল শট খেলে আউট হলেন। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ ব্যাটারের মিলিত অবদান ৪৩ রান। ৪২ রানে ৪ উইকেট হারানোর সঙ্গে সঙ্গেই শাকিবদের জয়ের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। লিটন (২২), তানজ়িদ (১২), শান্ত (শূন্য), শাকিব (১), মুশফিকুর রহিম (৮), মিরাজেরা (১১) উইকেটে দাঁড়াতেই পারলেন না। কিছুটা একা লড়াই করার চেষ্টা করলেন মাহমুদুল্লা রিয়াদ। কিন্তু তাতে যে কিছু হওয়ার নয়, তা বোঝার জন্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাঁর ব্যাট থেকে এল লড়াকু শতরান। এই নিয়ে বিশ্বকাপে তৃতীয় বার শতরান করলেন রিয়াদ। একই সঙ্গে তিনি সতীর্থদের দেখিয়ে দিলেন মুম্বইয়ের উইকেটে কোনও জুজু ছিল না। শেষ পর্যন্ত তিনি করলেন ১১১ বলে ১১১ রান। নিজের দায়িত্বশীল ইনিংসটি সাজালেন ১১টি চার এবং ৪টি ছক্কা দিয়ে। নাসুম আহমেদ করলেন ১৯ বলে ১৯ রান। হাসান মাহমুদ করলেন ১৫ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের ব্যাট থেকে এল ১১ রান। রিয়াদ ছাড়া বাংলাদেশের কোনও ক্রিকেটারই ২২ গজের চরিত্র বুঝে খেলার চেষ্টা করলেন না। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— ক্রিকেটের তিন বিভাগেই পিছিয়ে থাকলেন তাঁরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে সফলতম জেরাল্ড কোয়েটজ়ি। তিনি ৬২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন। ৩৯ রানে ২ উইকেট মার্কো জানসেনের। ৫৬ রান খরচ করে ২ উইকেট নিলেন লিজ়াড উইলিয়ামস। ৪২ রানে ২ উইকেট কাগিসো রাবাডার। তবে শেষ দিকে রিয়াদের শতরান আটকানোর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের নেতিবাচক মানসিকতা কিছুটা ম্যাচের ছন্দ নষ্ট করল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy