চতুর্থ দিনের শেষ দিকে দেখা গেল, সাজঘরে মাথায় হাত দিয়ে বসে গৌতম গম্ভীর। ভারতের প্রধান কোচের এই ছবিই টেস্টের হাল বুঝিয়ে দিল। মনে হল, মনে মনে হার স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। বাস্তবে তা হতে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যাট করেই যাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, টেস্টের প্রথম দিন ভেবে বসেননি তো টেম্বা বাভুমারা। নইলে যে পিচে ব্যাট করা ততটাও কঠিন নয়, সেখানে কেন সময় নষ্ট করল তারা। এই পিচে ৪৫০ রানের লক্ষ্য দিলেও জেতা কঠিন ছিল ভারতের। সেখানে ৫৪৯ রানের লক্ষ্য দেওয়ার কি কোনও প্রয়োজন ছিল? তার জবাব ভারতের ইনিংসেই বোঝা গেল। এক ঘণ্টার একটু বেশি ব্যাট করল ভারত। তাতেই যে ভাবে ব্যাটারেরা কাঁপলেন, তাতে বোঝা গেল, বেশি ক্ষণ টিকে থাকা তাঁদের পক্ষে কঠিন। বোঝা গেল, বাভুমারা জানেন, ভারতের এই ব্যাটিংকে অল আউট করতে বেশি সময় লাগবে না তাঁদের।
চতুর্থ দিন প্রায় ৫ ঘণ্টা ব্যাট করল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭০ ওভারে এল ২২৬ রান। ওভার প্রতি তিন রানের একটু বেশি। তারা চাইলে দ্রুত গতিতে রান করতে পারত। সেটা করতে গিয়ে উইকেট পড়লেও কিছু হত না। কিন্তু তা না করে ট্রিস্টান স্টাবসের শতরানের অপেক্ষা করলেন বাভুমা। সেখানেই দেরি হল। শতরানও এল না। অবশেষে ২৬০ রানে ডিক্লেয়ার করল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫৪৯ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের রান ২ উইকেটে ২৭। পঞ্চম দিন জিততে আরও ৫২২ রান করতে হবে তাদের। দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে দরকার ৮ উইকেট। এখান থেকে ভারত জিতলে তা অসাধ্যসাধন হবে। ক্রিকেট যতই মহান অনিশ্চয়তার খেলা হোক না কেন, ভারতের এই ব্যাটিংয়ের উপর ভরসা কোচ গম্ভীরও করছেন না।
চতুর্থ দিন শুরু থেকেই শ্লথগতিতে ব্যাট করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার। ভারতীয় পেসারদের বল তাঁদের বিশেষ সমস্যায় ফেলতে পারেননি। তার পরেও রান তোলার গতি খুব বেশি ছিল না। স্পিনারের বল করতে আসার পর খেলার ছবিটা কিছুটা বদলাল। ৩৫ রান করে রবীন্দ্র জাডেজার বলে আউট হলেন রায়ান রিকেলটন। এডেম মার্করামকেও ২৯ রানের মাথায় আউট করলেন জাডেজা। রান পেলেন না অধিনায়ক বাভুমা। ৩ রানের মাথায় তাঁকে ফেরালেন ওয়াশিংটন সুন্দর।
সকলের নজর ছিল চা বিরতির দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকা ডিক্লেয়ার করবে কি না, সেই আলোচনা চলছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা আবার ব্যাট করতে নামল। টনি ডি জর্জি ও ট্রিস্টান স্টাবস ভাল ব্যাট করছিলেন। এ দিন স্পিনারদের বল আরও বেশি ঘুরছিল। ফলে খেলতে সমস্যা হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে ভারতের উইকেটে বিদেশি ব্যাটারদের প্রধান অস্ত্র হয় সুইপ ও রিভার্স সুইপ। সেটাই করলেন দুই ব্যাটার। ভালই খেলছিলেন তাঁরা। ডি জর্জি ৪৯ রানে আউট হলেও অর্ধশতরান করেন স্টাবস।
আরও পড়ুন:
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরেও যখন দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে নামল, তখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে, স্টাবসের শতরানের অপেক্ষা করছে তারা। সেটা বুঝতে পেরে ভারতও দেরি করতে শুরু করল। অযথা সময় নষ্ট করলেন ফিল্ডারেরা। তাতে আরও সময় গেল। শেষে বাধ্য হয়ে বড় শট খেলা শুরু করলেন স্টাবস। জাডেজার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ৯৪ রান করে আউট হলেন তিনি। যে উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা দেরি করল, সেটা পূরণ হল না।
জাডেজা, ওয়াশিংটনদের বলের ঘূর্ণি দেখে বোঝা যাচ্ছিল, এই পিচে সাইমন হারমার, কেশব মহারাজদের সামলাতে হিমশিম খাবেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। হলও তাই। তবে তার আগে পেসারদেরই সামলাতে পারলেন না যশস্বী জয়সওয়াল। মার্কো জানসেনের বলে আপার কাট করে একটি ছক্কা মেরেছিলেন। সেই জানসেনের বাইরের বলে খোঁচা মেরে ১৩ রান করে ফিরলেন তিনি। আবার উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন তিনি।
লোকেশ রাহুল পেসারদের সামলালেন বটে, তবে স্পিনার আসার পরেই তাঁর পা কাঁপতে শুরু করল। হারমারের প্রথম ওভারেই বোল্ড হলেন তিনি। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে বল গিয়ে লাগল স্টাম্পে। রাহুল যদি সোজা ব্যাটে খেলার চেষ্টা করতেন, তা হলে হয়তো আউট হতেন না। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরের বল লেগ স্টাম্পে খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন তিনি।
চার নম্বরে চমক দিলেন গম্ভীর। কুলদীপ যাদবকে নামিয়ে দিলেন। প্রথম ইনিংসে কুলদীপ সবচেয়ে বেশি ১৩৪ বল খেলায় হয়তো তাঁর উপর ভরসা দেখিয়েছে কোচ। ভরসা রাখলেন কুলদীপ। দিনের শেষ পর্যন্ত টিকে রয়েছেন তিনি। কোনও রকমে টিকে রয়েছেন সাই সুদর্শনও। বেশ কয়েক বার আউট হতে হতে বেঁচেছেন তিনি। ভারত এক ঘণ্টায় যা ব্যাট করেছে তাতে একটা গোটা দিন ব্যাট করা প্রায় অসম্ভব। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের সামনে যে ভাবে ভারতের ব্যাটারেরা কাঁপছেন তাতে পঞ্চম দিন কত ক্ষণ সামলাতে পারবেন তা বলা কঠিন।