আইপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স থেকে অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে সরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে যে রাজনীতি রয়েছে, তার আভাস আগেই দিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। সেই একই কথা শোনা গেল পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মুখে। তাঁর অভিযোগ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার লক্ষ্যেই রাজ্যের ক্রীড়াপ্রেমীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকে পাশে নিয়ে সরাসরি কেন্দ্র ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে রাজনীতির অভিযোগ করেছেন অরূপ। কেন রাজ্য সরকার রাজনীতির অভিযোগ তুলছে, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বেশ কিছু উদাহরণও দেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী।
আগামী ৩ জুন আইপিএলের ফাইনাল। ইডেন থেকে তা সরে যাওয়ার পরে বুধবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ম্যাচ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবারই তার জবাব দেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)-এর একটি বিবৃতি তুলে ধরে জানান, বোর্ড স্পষ্ট জানিয়েছে, খেলা সরানোর নেপথ্যে আবহাওয়া রয়েছে, বাংলার সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। রাজনীতির স্বার্থে বিষয়টি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সুকান্ত।
আইপিএল ফাইনাল সরানো নিয়ে অরূপের সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সকালে সুকান্ত একটি পোস্টে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং মমতাকে জড়িয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্ট কেন মুছে দেওয়া হল? নেপথ্য কারণ কী? যদিও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আনন্দবাজার ডট কম-এর তরফে সুকান্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু যোগাযোগ করা যায়নি। পরে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।
বৃহস্পতিবার আসরে নামেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ। সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ কমিশনার মনোজকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক কারণে আইপিএলের প্লে-অফ ও ফাইনাল ইডেন থেকে সরানো হয়েছে (প্লে-অফ ম্যাচের নির্ধারিত দিন ১ জুন)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনীতি করছেন করুন, কিন্তু বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে সরানো হয়েছে। উনি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছেন। কারণ, বিসিসিআই বলছে আবহাওয়ার কারণে খেলা সরানো হয়েছে।”
ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতি ‘বঞ্চনা’কে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, সড়ক যোজনায় কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র সঙ্গে জুড়ে দেখাতে চেয়েছেন অরূপ। তাঁর অভিযোগ, “সব ক্ষেত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, অন্যান্য খাতের ন্যায্য বকেয়া টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। ১ লক্ষ ৮৭ কোটি টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। সব জায়গায় রাজনীতি হচ্ছে। এ বার ক্রিকেটপ্রেমীদেরও বঞ্চিত করা হল।”
ইডেনে খেলার আয়োজনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা যে কোনও অন্তরায় হতে পারে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অরূপ। এই প্রসঙ্গে গ্রুপ পর্বের সাতটি ম্যাচের উদাহরণ টেনেছেন। অরূপ বলেন, “ইডেনে আইপিএলের সাতটা ম্যাচ হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটা ম্যাচে গড়ে ৬০-৬৫ হাজার দর্শক খেলা দেখেছেন। তা হলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।” অরূপের কথাকে সমর্থন করেন মনোজ। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বলেন, “ইডেনে সাতটা ম্যাচ হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সবাই ভাল ভাবে খেলা দেখেছেন। শুধুমাত্র রামনবমীর দিন নিরাপত্তার কারণে একটা ম্যাচ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। সেটাও কলকাতাতেই হয়েছে। কেউ আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অভিযোগ করেনি। সাতটা ম্যাচই ভাল ভাবে হয়েছে।”
আরও পড়ুন:
ইদানীং অন্তরীক্ষে স্থাপিত আধুনিক উপগ্রহের সুবাদে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি অনেকটাই নিখুঁত ভাবে আগাম বলা যায়। কিন্তু তা বলা যায় সাত দিন আগে। অন্তত আলিপুরের আবহাওয়া দফতরের তেমনই বক্তব্য। কোনও শহরের ক্ষেত্রেই দীর্ঘকালীন পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। খুব প্রয়োজনে আঞ্চলিক পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের মৌসম ভবন ছ’দিনের পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের কাছে খবর, আগামী ৩ জুন কলকাতায় বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬৫ শতাংশ। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই খবরের উৎস আমেরিকার একটি বেসরকারি অ্যাপ। তাদের উপর ভিত্তি করেই বোর্ড কলকাতা থেকে আইপিএল ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অরূপ। রাজ্য সরকারের তরফে বোঝানো হয়েছে, আবহাওয়া বা আইনশৃঙ্খলা— সবই আসলে ছুতো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই ‘দিদি’র রাজ্য থেকে মোদীর রাজ্য গুজরাতে আইপিএল ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অরূপ এ-ও প্রশ্ন তুলেছেন, বোর্ডে কি এখন কোনও আবহওয়াবিদ কাজ করেন? অরূপের কথায়, “ইডেনের ড্রেনেজ সিস্টেম (নিকাশি ব্যবস্থা) দেশের মধ্যে সেরা। মুষলধারে বৃষ্টি হলেও, তা থামার এক ঘণ্টার মধ্যে খেলা শুরু করে দেওয়া যায়। আলিপুর আবহাওয়া দফতর ১২ মে জানিয়েছিল জুনের প্রথম সপ্তাহের কোনও পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি। তার পরেও এই সিদ্ধান্ত হল। অহমদাবাদে যে বৃষ্টি হবে না, সেটা কে বলতে পারে? ২০২৩ সালের আইপিএল ফাইনালে বৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে রিজ়ার্ভ ডে ছিল। পরের দিন খেলা হয়েছিল। তা হলে এ ক্ষেত্রেও তা হতে পারত।’’ বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘বিসিসিআই আমেরিকার আবহাওয়াবিদদের কথা বিশ্বাস করে ভারতীয় আবহাওয়াবিদ ও বিজ্ঞানীদের অপমান করেছে।” এর নেপথ্যে রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু দেখছেন না অরূপ। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে আটকাতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এটা করা হয়েছে। ৯৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ইডেন থেকে ম্যাচ সরানো হল। গত ৪ বছরে অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে তিনটে ফাইনাল হয়েছে। কেন? সুকান্ত মজুমদার জবাব দেবেন?”