Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Sri Lanka

Sri Lanka Vs Australia: ‘শত্রু’র হলুদে সাজল গ্যালারি, তিক্ত অতীত ভুলে ফিঞ্চদের কৃতজ্ঞতা লঙ্কাবাসীর

সঙ্কট কাছাকাছি আনতে পারে যুযুধান দু’পক্ষকে। অনেক যদি-কিন্তু নিয়ে শ্রীলঙ্কায় পা রাখা ফিঞ্চরা শ্রীলঙ্কার গ্যালারির নীল রং মুছে করে দিলেন হলুদ।

অস্ট্রেলিয়া দলকে এ ভাবেই ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটপ্রেমীরা।

অস্ট্রেলিয়া দলকে এ ভাবেই ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটপ্রেমীরা। ছবি: টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ ১৫:০৪
Share: Save:

আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত, অশান্ত শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেট খেলতে আসা নিয়ে দ্বিধায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তান পাশে থাকার বার্তা দিয়ে শ্রীলঙ্কায় বেশি ম্যাচ খেলতে চেয়েছিল। তার দরকার হয়নি। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের আশ্বাসে খেলতে আসেন প্যাট কামিন্স, অ্যারন ফিঞ্চরা।

অস্ট্রেলীয়রা এলেন। খেললেন। এক ম্যাচ বাকি থাকতে এক দিনের সিরিজ হারলেন। তাও শ্রীলঙ্কার মানুষের বিপুল সমর্থন, ভালবাসা পেলেন! শ্রীলঙ্কার মানুষ সেই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের ধন্যবাদ জানালেন, যে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাঁদের দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক শীতল। নতুন নয়। কয়েক দশকের পুরনো এই শীতলতা।

সেই ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কায় বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে যায়নি অস্ট্রেলিয়া। নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে শ্রীলঙ্কায় বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজও। আইসিসির বহু অনুরোধেও কাজ হয়নি। দু’পয়েন্টের বিনিময়ে নিজেদের সিদ্ধান্তেই অনড় ছিল দু’দেশ। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালেই মার্ক টেলরের দলকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অর্জুন রণতুঙ্গার দল। সেটাই প্রথম। এবং শেষও।

শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট-সম্পর্কে কালি রয়েছে আরও। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের আগেই জানুয়ারি মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একটি এক দিনের ম্যাচের ঘটনা। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন অফ স্পিনার মুথাইয়া মুরলিথরনকে বল ছোড়ার অভিযোগে নো ডাকেন অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার রস এমারসন। আম্পায়ার হিসাবে সেটাই ছিল এমারসনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ক্ষুব্ধ রণতুঙ্গা দল তুলে নিতে চেয়েছিলেন। আইসিসির বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সামনে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল মুরলিথরনকে। তিন বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাতে পারেননি এমারসনও ফিরে আসার পর বল ছুড়ছেন সন্দেহে মুরলিথরনকে আবার নো ডাকেন তিনি। আবারও নতুন করে উত্তাপ ছড়ায়।

সেই অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর উচ্ছ্বাসে শ্রীলঙ্কার মানুষ মেতে উঠলেও অবাক হওয়ার ছিল না। কিন্তু অতীতের তিক্ততা মুছে দিল ২০২২। সঙ্কটের শ্রীলঙ্কায় নানা সমস্যা হতে পারে জেনেও খেলতে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সকলকে অবাক করে পরাজিত কামিন্সদেরই কুর্নিশ জানাল শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট জনতা। পঞ্চম এক দিনের ম্যাচে গলের গ্যালারিতে দেখা গেল অসংখ্য ব্যানার, টিফো। শ্রীলঙ্কার বহু সমর্থকের গায়ে ছিল অস্ট্রেলিয়ার হলুদ রঙের পোশাক। অনেকের হাতে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পতাকাও। পরাজিত দলকে এ ভাবেই ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার মানুষ। দাসুন সনকার দল আগেই সিরিজ জিতে দেশবাসীর মানসিক ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিয়েছিল। সনকারা সুযোগই পেতেন না ফিঞ্চরা না এলে।

শ্রীলঙ্কাবাসীর ধন্যবাদ জ্ঞাপনে আপ্লুত অজি ক্রিকেটাররাও। উচ্ছ্বসিত গ্লেন ম্যাক্সওয়েল তো বলেই দিয়েছেন, ‘‘আগের সফরগুলোয় আমাদের সাধারণত শত্রু হিসাবেই বিবেচনা করা হত। গ্যালারিতে কিছু অস্ট্রেলীয় সমর্থক থাকলেও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটপ্রেমীরা কখনই আমাদের সমর্থন করতেন না। এ বারের সফরে নতুন অভিজ্ঞতা হল। এই অভিজ্ঞতা অসাধারণ। দলের সকলেরই অন্য রকম অনুভূতি হয়েছে। বিদেশের মাটিতেও যে ভাবে আমাদের সমানে উৎসাহিত করা হয়েছে, সেটা অনবদ্য।’’

শুক্রবার ম্যাচের পর সারা মাঠ ঘুরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটপ্রেমীদের পাল্টা ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফিঞ্চ, কামিন্স, ম্যাক্সওয়েলরা। সনকারা হয়তো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলেন। কিন্তু ফিঞ্চরা জিতে নিলেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়। যে হৃদয়ের রং নীল নয়, হলুদ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE