Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Team India

‘ডেথ ওভার’-ই মৃত্যুফাঁদ! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে চিন্তা বাড়ছে রোহিতদের

শেষ চার ওভারেই বার বার বিপদে পড়ছে ভারত। ১৯তম ওভারে বার বার রান দিয়ে ফেলছেন ভুবনেশ্বর কুমার। যশপ্রীত বুমরা না থাকায় তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনটি ম্যাচেই হারতে হল ভারতকে।

 টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ডেথ ওভার চিন্তার কারণ রোহিতের।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ডেথ ওভার চিন্তার কারণ রোহিতের। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:২৮
Share: Save:

বার বার ডেথ ওভারে বিপদে পড়ছে ভারত। এশিয়া কাপের পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ম্যাচ, ভুগতে হচ্ছে ডেথ ওভারে এসেই। বিরাট রান তুলেও ম্যাচ হারতে হচ্ছে রোহিত শর্মাদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যা চিন্তার কারণ ভারতীয় দলের।

রাহুল দ্রাবিড় কোচ এবং রোহিত শর্মা অধিনায়ক হওয়ার পর ভারতের সব থেকে বড় চিন্তা ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটিং। সেই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ফেলেছে দল। রোহিত, বিরাট, লোকেশ রাহুলরা রান পাচ্ছেন। হার্দিক পাণ্ড্য নিয়মিত রান করছেন। চার নম্বরে দলের ভরসা হয়ে উঠেছেন সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু এ সব কিছুর পরেও ভারত ম্যাচ জিততে পারছে না। বোলিং হয়ে উঠছে চিন্তার কারণ। পরে বোলিং করে ভারত এমন তিনটি ম্যাচ হেরেছে, যেখানে শেষ চার ওভারে ৫৪, ৪২ এবং ৪১ রান হাতে ছিল। প্রথমে ব্যাট করে ভারত বিশাল রান তুলেছিল। কিন্তু তাতেও ম্যাচ জেতা সম্ভব হয়নি।

এই ব্যাপারে বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লর মত, ‘ভারতীয় পেসারদের দেখে মনে হয়নি, ওরা চাপ তৈরি করতে পারে। সেই এশিয়া কাপ থেকে সমস্যাটা চলছে। গত চার-পাঁচ বছরে ভুবনেশ্বরের সেই সাফল্যটা নেই। বিশেষ করে শেষ দিকে তো ভীষণই মার খাচ্ছে। তা হলে শামি কেন বাইরে? যে আন্তর্জাতিক এবং আইপিএল— দু’ধরনের ক্রিকেটেই সফল।’ বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ীরও একই মত। তিনিও মনে করেন যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা থাকা আর না-থাকার তফাতটা বোঝা গেল। হর্ষল পটেলকে দেখে তিনি হতাশ।

এই তিন ম্যাচেই খেলেননি যশপ্রীত বুমরা। ডেথ ওভারে ভারতের সেরা বোলার মনে করা হয় তাঁকে। বুমরা না থাকায় ডেথ ওভারে দায়িত্ব সামলানোর ভার দেওয়া হয় ভুবনেশ্বর কুমারকে। এই তিন ম্যাচে ১৯তম ওভারে বল করতে এসে তিনি দেন ১৬, ১৪ এবং ১৯ রান। সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল তা বলা যাবে না। কারণ বুমরা না থাকায় তিনিই দেশের সেরা ডেথ বোলার। তাঁকেই ১৯তম ওভারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তিন ম্যাচে ১৯তম ওভারে বল করতে এসে ভুবনেশ্বর দেন ১৬, ১৪ এবং ১৯ রান।

তিন ম্যাচে ১৯তম ওভারে বল করতে এসে ভুবনেশ্বর দেন ১৬, ১৪ এবং ১৯ রান। —ফাইল চিত্র

টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারে ১৯তম ওভারে বল করতে এসে ভুবনেশ্বর সব থেকে বেশি রান এই তিন ম্যাচেই দিয়েছেন। ডেথ ওভারে ভুবনেশ্বরের সাফল্য এক সময় অবাক করত অনেককে। তাঁর বলে ১৪০ কিলোমিটার গতি নেই, বাঁহাতিদের মতো দুরূহ কোণ তৈরি করতে পারেন না, বোলিংয়ে কোনও অদ্ভুত ভঙ্গি নেই, তবুও ডেথ ওভারে তাঁর বিরুদ্ধে রান করতে পারতেন না কেউ। পরিকল্পনা এবং তার সঠিক প্রয়োগ ভুবনেশ্বরকে খেলা কঠিন করে দিত।

মোহালিতে মঙ্গলবার সেটারই অভাব দেখা গেল। ম্যাথু ওয়েড একই জায়গা দিয়ে রান করে গেলেন ভুবনেশ্বরের বলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম বার ৫০ রানের উপর দিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে থাকা ভুবনেশ্বরকে নিয়ে চিন্তা থাকবে ভারতীয় দলের। চোট সারিয়ে দলে ফিরে হর্ষল পটেলও চার ওভারে দিলেন ৪৯ রান। এর মধ্যে ১৮তম ওভারে তিনি দিলেন ২২ রান। মন্থর গতির শর্ট বল তাঁর প্রধান অস্ত্র। ওয়েড যে বলকে অনায়াসে মাঠের বাইরে পাঠালেন। মোহালির পিচে বাউন্স ছিল, অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশের সঙ্গে যা অনেকটাই মেলে। সেই মাঠেই ভারতীয় বোলিং কুপোকাত। আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যা স্বস্তি দিচ্ছে না রোহিতকে।

ম্যাচ শেষে রোহিত বলেন, “আমরা ভাল বোলিং করতে পারিনি। দু’শো রানটা অনেক। সেই রান করে জেতা উচিত ছিল। ফিল্ডিংয়ের সময় আমরা একাধিক সুযোগ হারিয়েছি। ব্যাটাররা ভাল খেলেছে, কিন্তু বোলাররা নিজেদের কাজটা করতে পারেনি। রোজ রোজ দু’শো রান হবে না। তার জন্য ভাল ব্যাটিং করতে হবে। হার্দিক ভাল ব্যাটিং করেছে আমাদের এই স্কোরে পৌঁছে দিতে। আগামী ম্যাচের আগে বোলিংয়ে উন্নতি প্রয়োজন।”

শিশির কোনও সমস্যা তৈরি করেনি বলে জানিয়েছেন হার্দিক। তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়াকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। ওরা দুর্দান্ত খেলেছে। নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারিনি আমরা। ঠিক জায়গায় বল করতে পারিনি।”

টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের মধ্যে ফারাক খুব সূক্ষ্ম। একটা ভুল ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পারে। টস ভাগ্য বদলে দিতে পারে অনেক সময়। অনেক সময় ভাল খেলেও হারতে হতে পারে। ম্যাচের ফলাফল দিয়ে একটি দলকে ভাল খারাপ বলা সব সময় সম্ভব হয় না। কিন্তু জেতা এবং হারার মাঝখানে ব্যবধানটা অনেক সময় মাত্র ছ’ফুটের।

শেষ ২৪ বলে বাকি ৫৫ রান। তার পরেও ব্যাটিং দল চার বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নিচ্ছে। এটা অবশ্যই বোলিং দলের জন্য খুব ভাল বিজ্ঞাপন নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে মোহালির ম্যাচ শিক্ষা দিয়ে গেল রাহুল দ্রাবিড়দের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE