Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Tamim Iqbal

বাংলাদেশ অধিনায়কের নাটকীয় অবসরের নেপথ্যে কি বোর্ডকর্তার মন্তব্য, না কি নিজের খারাপ ফর্ম?

বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দিলেন। তামিমের উপর কোনও মানসিক চাপ ছিল? কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? যে কারণগুলি উঠে আসছে, তার মধ্যে রয়েছে বোর্ডকর্তাদের ব্যবহার, তামিমের নিজের খারাপ ছন্দ।

Tamim Iqbal

তামিম ইকবাল। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩৫
Share: Save:

তামিম ইকবালের হঠাৎ অবসরের কারণ খুঁজছেন সকলে। বাংলাদেশের এক দিনের দলের অধিনায়ক বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দিলেন। তাঁর উপর কি কোনও মানসিক চাপ ছিল? কী কারণে বৃহস্পতিবার এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তামিম? যে কারণগুলি উঠে আসছে, তার মধ্যে রয়েছে বোর্ডকর্তার মন্তব্য এবং তামিমের নিজের খারাপ ফর্ম।

তামিম যে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন, তা বুধবারই বোঝা গিয়েছিল। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। তার মাঝেই হঠাৎ সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। কী কারণে এই সাংবাদিক বৈঠক, তা জানতে বোর্ডের কর্তারা বুধবার তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, তামিম ফোন ধরেননি। বৃহস্পতিবার সকালে ফোন ধরেন তামিম। মনে করা হচ্ছে, তখন বোর্ডের কর্তারা তাঁকে অবসর না নেওয়ার কথা বলেন। নানা ভাবে তামিমকে বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁকে অধিনায়ক রাখা হবে বলে জানানোও হয়। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে চলতি সিরিজ়ে বিশ্রাম দেওয়ার কথাও বলা হয় তামিমকে। কিন্তু তাঁর মধ্যে এতটাই অভিমান জমে রয়েছে যে, কোনও কিছুতেই টলানো যায়নি তাঁকে। চোখের জলে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম।

কিন্তু কেন অভিমানী তামিম? বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন অধিনায়কের এই সিদ্ধান্তের পিছনে সে দেশের ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের একটি মন্তব্য থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। তার আগে মঙ্গলবার চট্টগ্রামে তামিম সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন যে, তিনি পুরোপুরি সুস্থ না হলেও খেলবেন। তামিম বলেছিলেন, “আমি অবশ্যই বুধবারের ম্যাচের জন্য তৈরি। শরীর আগের চেয়ে ভাল আছে। তবে এটা বলব না যে আমি পুরোপুরি ফিট। বুধবার ম্যাচ খেলার পর ভাল করে বুঝতে পারব যে কী অবস্থায় রয়েছি। তবে এখনও পর্যন্ত আমার যা অবস্থা তাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি খেলছি।” অর্থাৎ দলের অধিনায়ক নিজেই বুঝিয়ে দেন যে, তিনি পুরোপুরি সুস্থ না হয়েও মাঠে নামছেন।

এই প্রেক্ষিতে পাপন বলেছিলেন, “এটা তো পাড়ার ম্যাচ নয়! আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এমন সিরিজে়র আগের দিন অধিনায়ক বলছে সে ফিট নয়। কিন্তু খেলবে, খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো কোনও পেশাদার ক্রিকেটারের আচরণ হতে পারে না!”

তামিমের এই ‘চোট নিয়েও খেলব’ বক্তব্য ভাল ভাবে নেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যানেজমেন্টও। বাংলাদেশ সংবাদমাধ্যমের খবর, অধিনায়কের উপর রেগে যান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহ। বুঝিয়ে দেন, এক জন ক্রিকেটার পুরো ফিট না হলে তাঁকে খেলতে নামানোর পক্ষপাতী তিনিও নন। তাঁর মতে, ছোট চোট নিয়ে খেলতে নামলে যে কোনও সময় তা বেড়ে যেতে পারে। তখন মাঠে সেই ক্রিকেটারের থেকে ১০০ শতাংশ পাওয়া যায় না। সেটা দলের কাছে সমস্যার কারণ হয়ে যেতে পারে। সেই কারণেই তিনি এমন খেলোয়াড়কে দলে রাখতে রাজি নন।

কিন্তু তামিম অধিনায়ক বলে তাঁকে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন হাথুরুসিংহ। সেই সঙ্গে তামিম নিজেও খেলতে নাছোড়বান্দা ছিলেন। মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণাও করে দেন যে, তিনি খেলবেন, চোট থাকলেও খেলবেন।

তামিমের যে চোট রয়েছে তা সকলেরই জানা। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে খেলেননি। অনুশীলনেও পিঠের চোট ভোগাচ্ছিল তাঁকে। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে এলেও ব্যাটিং বা ফিল্ডিং করেননি। অধিনায়ক না হলে তাঁকে বাদ দিয়েই নামত বাংলাদেশ। কোচ হাথুরুসিংহ এই ব্যাপারটি বোর্ড প্রধান পাপনকে জানান। এরপর পাপন অধিনায়ককে পরিষ্কার করে জানাতে বলেন তাঁর চোট কতটা। সাধারণত, কোনও ক্রিকেটারের চোট আছে কি না সে বিষয়ে মতামত জানান দলের চিকিৎসক বা ফিজ়িয়ো। কিন্তু তামিম তার ধার ধারেননি। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন তাঁর চোট আছে কি নেই। আবার মাঠে নেমে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করেছেন। এই ধরনের কার্যকলাপে বোর্ডের খুশি হওয়ার কথা নয়। আবার প্রকাশ্যে তাঁকে নিয়ে বোর্ডপ্রধান বক্তব্য রাখায় অধিনায়কও অসন্তুষ্ট বলে মনে করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ জনেরা। তামিমের আচমকা অবসরের সিদ্ধান্তের পিছনে এটা একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ৩৪ বছর বয়সি তামিম ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। সেই অভিমান থেকেই হঠাৎ অবসর বলে মনে করছেন অনেকে।

সেই সঙ্গে রয়েছে তামিমের হারানো ফর্ম। এক দিনের ক্রিকেটে দু’বছর আগে শেষ শতরান করেছিলেন তিনি। সেটাও আবার জ়িম্বাবোয়ের মতো কম শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে। শেষ ১০টি ম্যাচে অর্ধশতরান করেছেন একটি। তা-ও আয়ারল্যান্ডের মতো দুর্বল দলের বিরুদ্ধে ৬৯ রানের ইনিংস। বাকি কোনও ম্যাচেই তেমন রান নেই। অনেকেই মনে করছিলেন যে, তামিম দলের বোঝা হয়ে যাচ্ছিলেন। তামিমের জায়গায় ফর্মে থাকা নাজমুল হাসান শান্ত ওপেন করতে পারেন। তাঁকে তিন নম্বর থেকে তুলে আনা যেতে পারে লিটন দাসের সঙ্গে ওপেন করতে। এক ধাপ এগিয়ে শাকিব আল হাসান তিন নম্বরে ব্যাট করতে পারেন। তোহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমদেরও এক ধাপ করে উপরে তুলে এনে নীচের দিকে এক জন বাড়তি ব্যাটার বা বোলারকে সুযোগ দিতে পারে বাংলাদেশ।

অবসর ঘোষণার সময় তামিম বিতর্কে জড়াতে চাননি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে অবসরের কথা ঘোষণা করে তিনি বলেন, “দয়া করে এই ঘটনা নিয়ে আর বিতর্ক বাড়াবেন না। এই বিষয়কে এখানেই শেষ করে দিন। আমি সব সময় বলেছি, দেশ অনেক আগে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাশে থাকুন।” তামিম যাই বলুন, বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tamim Iqbal Bangladesh Cricket BCB
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE