দুবাই থেকে আমদাবাদ, বিয়ের আংটিতে চুম্বন চলছে। —ফাইল চিত্র
দীর্ঘ ১২০৫ দিন পর টেস্টে শতরান। নাথান লায়নের বল স্কোয়ার লেগে হালকা হাতে মেরে এক রান নিলেন। পৌঁছে গেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭৫তম শতরানে। প্রথমে হেলমেটটি খুললেন। এক হাতে ব্যাট আর অন্য হাতে হেলমেটটি তুললেন। এর পর সেই দু’টি নামিয়ে রেখে গ্লাভস খুললেন। গলায় ঝুলতে থাকা লকেটটি বার করে আনলেন জামার ভিতর থেকে। লকেটটি বিরাট এবং অনুষ্কার বিয়ের আংটি। সেই আংটিতে চুমু খেলেন। তার পর কলার তুলে দিলেন। ডাকাবুকো বিরাটের সেই পুরনো ছবি।
গত বছর এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে শতরান করেছিলেন বিরাট। তার পরেই তাঁকে দেখা গিয়েছিল বিয়ের আংটিতে চুমু খেতে। এর পর এক দিনের ক্রিকেটে শতরান করেও একই জিনিস করেছিলেন বিরাট। অর্থাৎ প্রতিটি শতরান অনুষ্কার জন্য।
২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতরানের পর খরা শুরু হয়েছিল বিরাটের ব্যাটে। কোনও ধরনের ক্রিকেটেই শতরান পাচ্ছিলেন না। এক সময় রান পাওয়াও কমতে শুরু করল। সমালোচনা শুরু হল বিরাটকে নিয়ে। মেয়ের জন্মের সময় অনুষ্কার পাশে থাকবেন বলে সিরিজ়ের মাঝপথে দেশে ফিরে আসা নিয়েও কথা শোনাতে ছাড়েননি প্রাক্তনরা।
The Man. The Celebration.
— BCCI (@BCCI) March 12, 2023
Take a bow, @imVkohli 🫡#INDvAUS #TeamIndia pic.twitter.com/QrL8qbj6s9
কিছুতেই রানে ফিরতে পারছিলেন না বিরাট। বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, ফিরে আসছিলেন, কিন্তু রান পাচ্ছিলেন না। এর মাঝে টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব ছাড়লেন। এক দিনের ক্রিকেটের নেতৃত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। গত বছর টেস্ট ক্রিকেটের নেতৃত্বও ছেড়ে দিলেন। চাপ যে বাড়ছিল বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু মাঠের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাবের জন্য পরিচিত বিরাট কখনও ফোঁস করেননি। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে বলেছিলেন, “আমি নেতৃত্ব ছাড়ার সময় কেউ আমাকে বারণ করেনি। বরং আমার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছিল।” তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যদিও বলেছিলেন যে, তিনি নিজে বিরাটকে বারণ করেছিলেন নেতৃত্ব ছাড়তে।
ক্রমাগত আসতে থাকা মাঠের বাইরের চাপ অনুভব করতে শুরু করেছিলেন বিরাট। প্রভাব পড়ছিল মাঠে। পেসার, স্পিনার, বাঁহাতি পেসার, বাঁহাতি স্পিনার, নামী বোলার, অনামী বোলার, সকলে এসেই বিরাটের উইকেট নিয়েছেন। বিরাট মাঠে নেমেছেন। গ্যালারি তাঁর নামে জয়ধ্বনি দিয়েছে। সেই চিৎকার থামার আগেই আউট হয়ে গিয়েছেন বিরাট। চুপ করে গিয়েছে পুরো মাঠ। এই গোটা সময় বিরাট পাশে পেয়েছেন তাঁর স্ত্রী অনুষ্কাকে। তিনি কখনও বিরাটকে ছেড়ে যাননি। মাঝে ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যান বিরাট। দেড় মাস ব্যাট ধরেননি। নিজেই জানিয়েছিলেন মানসিক সমস্যার কথা। সেটা যদিও বলেছেন রানে ফিরে। অর্থাৎ আগে কাজ করে পরে মুখ খুলেছেন। সেই সময় জানিয়েছিলেন যে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ছাড়া কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার তাঁকে ফোন করেননি।
২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর বিরাট এবং অনুষ্কা বিয়ে করেন। তার আগে থেকেই প্রেম করছেন তাঁরা। বিরাটের খেলা দেখতে মাঠে যেতেন অনুষ্কা। শতরান করে মাঠ থেকে প্রেমিকাকে চুমু ছুড়ে দিতেন বিরাট। আর বিরাট রান না পেলেই দায়ী করা হত অনুষ্কাকে। বলা হত বিরাটের মন খেলা থেকে অন্য দিকে সরিয়ে দিচ্ছেন অভিনেত্রী। তাঁর জন্যই বিরাটের ব্যাট রান আসছে না। সে সবকে তোয়াক্কা করতেন না বিরাট। অনুষ্কা মাঠে আসতেন, খেলা দেখতেন। বিয়ের আগে, বিয়ের পরে, ভামিকার জন্মের পরে, অনুষ্কা মাঠে এসেছেন বার বার। খেলা দেখেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন বিরাটকে। সব সময় সঙ্গে থেকেছেন। আর বিরাট বার বার বলেছেন, অনুষ্কা কী ভাবে তাঁকে বদলে দিয়েছেন। কী ভাবে আরও পরিণত হয়ে উঠেছেন তিনি অনুষ্কাকে পেয়ে। সমালোচকদের মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন বার বার। অনুষ্কাকে এখন মাঠে খুব বেশি দেখা যায় না। তাতে যদিও বিরাট তাঁকে ছাড়েননি। দু’জনের ভালবাসার প্রতীক যে বিয়ের আংটি, সেটিকেই লকেট বানিয়ে গলায় ঝুলিয়েছেন। শতরানের পর চুমু খেয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন এই শতরান অনুষ্কার, যিনি সব সময় তাঁর পাশে থেকেছেন। বাইরে থেকে কে কী বলল তাতে বিরাটের যায়-আসে না। তিনি ওই কলার তোলা ছেলেটা, যে সব সমালোচনা সপাটে মাঠের বাইরে পাঠাতে পারেন। সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি, এক দিনের পর টেস্টে শতরান। খরা কাটিয়ে উঠলেন। তিন ধরনের ক্রিকেটেই আবার শতরান। বৃত্ত সম্পূর্ণ হল আমদাবাদে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy