Advertisement
E-Paper

রেকর্ড গড়তে চান? নেমন্তন্ন করে আনুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে! দু’টি টেস্টে এক ডজন নজির ভারতের!

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সহজতম প্রতিপক্ষ কি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ই? দু’টি টেস্টে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা একগুচ্ছ রেকর্ড গড়েছেন। সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে তো রেকর্ড গড়তে চাইলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে ডেকে আনা যায়!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৩৯
Ravindra Jadeja, Kuldeep Yadav, Yashasvi Jaiswal, Shubman Gill

(সামনে) রবীন্দ্র জাডেজা। (মাঝে, বাঁ দিকে) কুলদীপ যাদব, (ডান দিকে) যশস্বী জয়সওয়াল)। (পিছনে) শুভমন গিল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম

ক্রিকেটে মোটামুটি গাছ থেকে পাতা পড়লেও রেকর্ড হয়। অমুক ক্রিকেটার দেশের মাটিতে প্রথম হিসাবে অমুক রেকর্ড গড়লেন, তমুক ক্রিকেটার বিদেশের মাটিতে প্রথম হিসাবে তমুক রেকর্ড গড়লেন। অমুক ক্রিকেটার বাঁ-হাতি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে অমুক রেকর্ড গড়লেন তো তমুক বোলার ডানহাতিদের মধ্যে পরপর তিন ম্যাচে তাঁর স্পেলের প্রথম বলে উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়লেন। চোখের পলক ফেলার আগে ক্রিকেটে রেকর্ডের পাতা উল্টে যায়।

এ একেবারেই আশ্চর্য নয় যে, সদ্যসমাপ্ত ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দু’টেস্টের সিরিজ়েও রেকর্ডের ছড়াছড়ি। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা ব্যক্তিগত নজির গড়েছেন মোট ১০টি। তার মধ্যে অধিনায়ক শুভমন গিল একাই সাতটি। ভারত দলগত ভাবেও এক জোড়া নজির গড়েছে। সব মিলিয়ে এক ডজন! সেই সূত্রেই রসিকজনেরা বলছেন, তা হলে রেকর্ড গড়তে এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্ট বাড়াতে সহজতম প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে নেমন্তন্ন করাই ভাল।

তা-ই কি? বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য তা মনে করেন না। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমত, চাইলেই ক্যারিবিয়ানদের সঙ্গে খেলা সম্ভব নয়। আর ভারতের এখন যা দল, তাতে রেকর্ড গড়তে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের সঙ্গে খেলার দরকার নেই। ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ়েও ভারত দারুণ খেলেছিল। শুভমন একাই চারটে সেঞ্চুরি করেছিল।’’ স্নেহাশিসের বক্তব্য, ‘‘এটা ঠিকই যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় আগের মতো শক্তিশালী নেই। তা বলে একেবারে হেলাফেলাও করা যায় না। আইসিসি তো ওদের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে রেখেছে।’’ উদাহরণ দিয়ে বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা বর্তমান ক্রিকেট প্রশাসক বলছেন, ‘‘ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। মনে রাখতে হবে, একটা সময়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও আমাদের ক্রিকেটারেরা অনেক রেকর্ড করত। তার পর সেই শ্রীলঙ্কাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সব দলেরই উত্থান-পতন হয়।’’

বাংলা রঞ্জি দলের বর্তমান সদস্য অনুষ্টুপ মজুমদারও তাঁর পূর্বসূরি স্নেহাশিসের মতোই বলছেন, ‘‘কোনও ম্যাচে ওরা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ়) চমকে দিতেই পারে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ় একটা সময় বিশ্বের অন্যতম সেরা দল ছিল। জোরে বোলিংয়ে তো বটেই, ব্যাটিংয়েও বেশ শক্তিশালী ছিল। এখনকার দলের মান সে তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। কিন্তু তার মানে এমন নয় যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে এখন ভাল ক্রিকেটার নেই। বেশ কয়েক জন আছে। কিন্তু তারা টেস্ট খেলে না। বিভিন্ন দেশে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে। আইপিএল দেখলেই বোঝা যাবে।’’ অনুষ্টুপের মতে, সেই ক্রিকেটারেরা টেস্ট খেললে অন্য রকম ফল হতেও পারে। তাঁর কথায়, ‘‘সেরা ক্রিকেটারদের টেস্ট খেলানোর দায়িত্বটা সেই দেশের বোর্ডের। তা ছাড়া চাইলেই তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের সঙ্গে খেলা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সূচি আছে।’’

দেশের হয়ে খেলা বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার অধুনা রাজনীতিক অশোক ডিন্ডাও ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের সহমর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ই তো একটা সময়ে রাজত্ব করেছে। খারাপ সময় আসে। আসলে ওদের টেস্ট খেলার মানসিকতাটাই এখন আর নেই। ভারত জানত, দুটো টেস্টই হেলায় জিতবে। ভারতের এ বা বি দলও ওদের হারিয়ে দেবে।’’

স্নেহাশিস-অনুষ্টুপ-অশোক যা বলেছেন, তা যে কোনও পেশাদার ক্রিকেটারই বলবেন। সমস্ত খেলার মতোই ক্রিকেটেও নির্দিষ্ট দলের উত্থান-পতন থাকে। যেমন থাকে যে কোনও ক্রীড়াবিদের কেরিয়ারে। এখন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা যা ছুঁচ্ছেন, তা-ই সোনা হয়ে যাচ্ছে। তবে দিল্লি টেস্টে ততটাও সহজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারাতে পারেনি ভারত। অহমদাবাদের মতো হেলাফেলায় তো নয়ই। অহমদাবাদের টেস্ট গুটিয়ে গিয়েছিল আড়াই দিনে। দিল্লি টেস্ট পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। জয়ের রান তুলতে গিয়ে একাধিক উইকেটও খুইয়েছে ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের দু’জন ব্যাটার শতরান করেছেন।

ভারতের বিরুদ্ধে এই সিরিজ় দিয়েই কি টেস্ট ক্রিকেটে ‘প্রত্যাবর্তন’ শুরু হল একদা বিশ্বত্রাস ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের? সে কথা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু তথ্য বলছে, এই সিরিজ়ে তাদের বিরুদ্ধে সবমিলিয়ে সাত দিনে ক্রিকেট খেলে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা ১২টি রেকর্ড বাগিয়ে নিয়েছেন।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম

১) বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের সর্বোচ্চ রান শুভমনের (২৮৩৯)। টপকে গিয়েছেন ঋষভ পন্থকে (২৭৩১)। এর পরে রোহিত শর্মা (২৭১৬), বিরাট কোহলি (২৬১৭), রবীন্দ্র জাডেজা (২৫০৫), যশস্বী জয়সওয়াল (২৪২৮) এবং লোকেশ রাহুল (২০৪৭)।

২) অধিনায়ক হিসাবে ১৭টি ইনিংসে ১০০০ রানের মাইলফলকে শুভমন। ভারতীয়দের মধ্যে তৃতীয় দ্রুততম। রেকর্ড আছে কোহলি এবং সুনীল গাওস্করের। দু’জনেই ১৫টি ইনিংসে এই মাইলফলকে পৌঁছেছিলেন। গিলের ঠিক পিছনে মহম্মদ আজহারউদ্দিন (১৬ ইনিংস)।

৩) বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ১০টি শতরান শুভমনের। ভারতীয় রেকর্ড। টপকে গেলেন রোহিতকে (৯)। তৃতীয় স্থানে যশস্বী (৭)।

৪) এক ক্যালেন্ডার বছরে অধিনায়ক হিসাবে ৫ শতরান শুভমনের। ভারতীয় রেকর্ড ছুঁলেন কোহলির সঙ্গে। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কোহলি পাঁচটি করে শতরান করেছিলেন। ২০২৫ সালে শুভমনেরও পাঁচটি শতরান হয়ে গেল।

৫) অধিনায়ক হিসাবে পঞ্চম টেস্ট শতরান করে শুভমন ছুঁলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং মনসুর আলি খানকে পটৌদীকে। শীর্ষে কোহলি (২০)।

৬) ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েই অর্ধশতরান শুভমনের। ভারতীয় ক্রিকেটে এমন ঘটনা ঘটল ৪৭ বছর পরে। স্পর্শ করলেন গাওস্করের কীর্তি। গাওস্কর ১৯৭৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে অর্ধশতরান করেছিলেন ঘরের মাঠে অধিনায়ক হিসাবে অভিষেক টেস্টে।

৭) টেস্ট ক্রিকেটে জাডেজার ৮০টি ছক্কা। টপকে গেলেন ধোনিকে (৭৮)। ভারতীয়দের মধ্যে জাডেজার আগে রয়েছেন পন্থ (৯০), বীরেন্দ্র সহবাগ (৯০) এবং রোহিত (৮৮)।

৮) ওপেনার হিসাবে দশম শতরান কেএল রাহুলের। টপকে গেলেন রোহিত এবং গৌতম গম্ভীরকে (৯)। রাহুলের আগে রয়েছেন গাওস্কর (৩৩), সহবাগ (২২) এবং মুরলি বিজয় (১২)।

৯) টেস্টে যশস্বীর পাঁচটি ইনিংসেই ১৫০ বা তার বেশি রান। এই শতাব্দীতে যশস্বীই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি ২৩ বছর বয়সে টেস্টে পাঁচটি ১৫০ বা তার বেশি রানের ইনিংস খেললেন। সব মিলিয়ে শীর্ষে অবশ্য ডন ব্র্যাডম্যান (৮টি)। যশস্বীর পরে রয়েছেন জাভেদ মিয়াঁদাদ, গ্রেম স্মিথ এবং সচিন (৪টি)।

১০) পঞ্চম বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন কুলদীপ যাদব। ১৫টি টেস্ট খেলে। আগের রেকর্ড ছিল জনি ওয়ার্ডলের। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন বাঁহাতি স্পিনার ২৮টি টেস্ট খেলে পাঁচ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন।

১১) প্রথম টেস্টে ইনিংস এবং ১৪০ রানে জিতেছে ভারত। ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম। রেকর্ড ২০১৮ সালে রাজকোটে ইনিংস এবং ২৭২ রানে জয়। ২০২৩ সালে রোসেউয়ে ইনিংস এবং ১৪১ রানে জয় দ্বিতীয় বৃহত্তম।

১২) দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতের প্রথম পাঁচটি জুটিতেই ৫০ বা তার বেশি রান হয়েছে। ৬৪ বছর ১০ মাস পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে কোনও দল এমন কীর্তি গড়ল। ১৯৬০ সালে গাব্বার টাই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া এই কীর্তি গড়েছিল।

India Vs West Indies Test Series Records
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy