১৮ বছর আগে আইপিএলের এক ম্যাচ চলাকালীন এস শ্রীসন্থকে চড় মেরেছিলেন হরভজন সিংহ। সেই ঘটনায় বিতর্ক কম হয়নি। হরভজনকে শাস্তি পেতে হয়েছিল। এত দিন বাদে সেই ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছেন ললিত মোদী। ‘বিয়ন্ড ২৩’ নামের এক পডকাস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের সঙ্গে কথা বলার সময় এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেন ললিত। সেই ভিডিয়ো সামনে আসতেই ললিত ও ক্লার্ককে নিশানা করলেন শ্রীসন্থের স্ত্রী ভুবনেশ্বরী।
সমাজমাধ্যমে ভুবনেশ্বরী লিখেছেন, “ললিত মোদী ও মাইকেল ক্লার্ক, আপনাদের লজ্জা লাগা উচিত। আপনারা মানুষ! শুধুমাত্র নিজেদের নোংরা প্রচারের জন্য ২০০৮ সালের একটা ঘটনা প্রকাশ্যে আনলেন। হরভজন ও শ্রীসন্থ দু’জনেই সেই ঘটনা ভুলে গিয়েছে। ওরা এখন সন্তানের পিতা। সেই সন্তানের স্কুলে পড়ে। আর আপনারা এখন পুরনো ঘা খুঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। আপনারা হৃদয়হীন, অমানুষ।”
এখানেই থেমে থাকেননি ভুবনেশ্বরী। তিনি জানিয়েছেন, অকারণে পুরনো ঘটনা টেনে এনে শ্রীসন্থের পরিবারকে বিড়ম্বনায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, “জীবনের কঠিন পরিস্থিতি সামলে সম্মানের সঙ্গে বাঁচা শুরু করেছে শ্রীসন্থ। ওর স্ত্রী এবং ওর সন্তানদের মা হিসাবে ১৮ বছরের পুরনো একটা ঘটনা দেখে কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের প্রচারের জন্য ধামাচাপা পড়ে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আবার আমাদের দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে কাটাতে হবে। যে সন্তানেরা এ সবের কিছুই জানে না, তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। ওদের তো কোনও দোষ নেই।” ভুবনেশ্বরীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সকলে। ললিত ও ক্লার্কের মানসিকতার সমালোচনা করেছেন তাঁরা। অনেকে তো দু’জনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপেরও দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন:
ললিত যে ভিডিয়ো প্রকাশ করেছেন তাতে দেখা গিয়েছে, ২০০৮ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ম্যাচ শেষ হওয়ার পর দু’দলের ক্রিকেটারেরা করমর্দন করছিলেন। সাধারণত যে ভাবে ক্রিকেটারেরা সৌজন্য বিনিময় করেন, সে ভাবেই লাইন করে শুভেচ্ছা বিনিময় চলছিল। শ্রীসন্থ সামনে আসতে হরভজন তাঁকে এড়িয়ে যান। করমর্দন না করে টেবল টেনিসের ব্যাকহ্যান্ড শটের মতো করে পঞ্জাবের জোরে বোলারের ডান গালে সপাটে চড় কষিয়ে দেন মুম্বইয়ের স্পিনার। পরে দু’জন পরস্পরের দিকে তেড়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। দু’দলের বাকি ক্রিকেটারেরা পরিস্থিতি সামলান তখনকার মতো। এই প্রথম চড়কাণ্ডে সম্পূর্ণ ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এল।
বিতর্কিত সেই ঘটনা নিয়ে ললিত বলেছেন, ‘‘ঘটনাটা অবশ্যই ঘটেছিল। হরভজন এবং শ্রীসন্থ যুক্ত ছিল। ম্যাচের পর দু’দলের ক্রিকেটারেরা পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিল। হ্যান্ডশেক করছিল। শ্রীসন্থ আর ভাজ্জি মুখোমুখি হল এক সময়। ভাজ্জি এক ঝলক দেখল শ্রীসন্থকে, তার পরই একটা ব্যাকহ্যান্ডার চালিয়ে দিল।’’
সেই ঘটনায় হরভজনকে আট ম্যাচের জন্য নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা হয়েছিল। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কর্তাদের একাংশ চেয়েছিলেন প্রাক্তন অফস্পিনারকে আজীবন নিলম্বিত করা হোক। ললিত বলেছেন, ‘‘ঘটনাটা গুরুতর ছিল। শ্রীসন্থ এবং হরভজন দু’জনকে নিয়ে বসেছিলাম। কথা বলেছিলাম। হরভজনকে শাস্তি না দিয়ে উপায় ছিল না। ওকে আট ম্যাচ নিলম্বিত করেছিলাম।’’ ললিত আরও বলেছেন, ‘‘তখন আমি আইপিএল কমিশনার। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে অধিকাংশ সদস্য হরভজনকে আজীবন নিলম্বিত করার দাবি তুলেছিলেন। সে বার আইপিএলের প্রথম বছর। প্রতিযোগিতা ঘিরে দারুণ আবেগ, উৎসাহ ছিল। অত কঠিন শাস্তি দিলে অন্য রকম হতে পারত। তাই শেষ পর্যন্ত আট ম্যাচের শাস্তি দেওয়া হয়।’’
এই ঘটনার পর বহু বার শ্রীসন্থের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন হরভজন। পরে অনেক জায়গায় একসঙ্গে দুই তারকাকে দেখা গিয়েছে। দু’জনেই জানিয়েছেন, সেই ঘটনা তাঁরা ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু ললিতের কারণে তা আবার শিরোনামে।