এক দিকে অজিঙ্ক রাহানে, অপর দিকে যশস্বী জয়সওয়াল। দু’জনেই মুম্বইয়ের ক্রিকেটার। কিন্তু আইপিএলে তাঁরা কেউ মুম্বইয়ের হয়ে খেলেন না। যশস্বী দীর্ঘ দিন ধরে খেলেন রাজস্থান রয়্যালসে। রাহানেকে এ বার নিলামে কিনে অধিনায়ক করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। রবিবার ইডেন গার্ডেন্সে মুখোমুখি তাঁরা। কিন্তু দলের লড়াই ছাপিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে রাহানে ও যশস্বীর লড়াই নিয়ে। কয়েক মাস আগে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে যে ঘটনা ঘটেছিল তা ভুলে কি নামতে পারবেন দুই ক্রিকেটার? না কি ব্যক্তিগত সেই লড়াই দেখা যাবে ইডেনের সবুজ গালিচায়?
এই বছর রঞ্জি ট্রফির গ্রুপ পর্বে মুম্বই বনাম জম্মু-কাশ্মীর ম্যাচের সময় রাহানের কিটব্যাগে যশস্বী লাথি মেরেছিলেন বলে খবর। তরুণ বাঁহাতি ওপেনারের অভিযোগ, জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে রঞ্জিতে হারের জন্য যশস্বীকে দায়ী করেছিলেন অধিনায়ক রাহানে এবং কোচ ওমকার সালভি। সেই ম্যাচে যশস্বী প্রথম ইনিংসে করেন ৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬। জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ১২০ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল মুম্বই। দ্বিতীয় ইনিংসেও ২৯০ রানের বেশি করতে পারেনি। সকলকে চমকে দিয়ে পাঁচ উইকেটে হেরে যায় তারা।
সূত্রের খবর, ম্যাচে শেষে রাহানে এবং সালভি প্রশ্ন তুলেছিলেন যশস্বীর দায়বদ্ধতা নিয়ে, যা শুনে রেগে যান তরুণ ওপেনার। সেই সঙ্গে মুম্বইয়ের প্রধান নির্বাচক সঞ্জয় পাতিলের বক্তব্য শুনে যশস্বীর মনে হয়, তাঁকে ইচ্ছাকৃত ভাবে লক্ষ্য করে আক্রমণ করা হচ্ছে। পাতিল বলেছিলেন, “জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে হার নিয়ে হতাশ। এটা মুম্বইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জার হার। ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের দলে নিতে গিয়ে মুম্বইয়ের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের বাদ দিতে হয়েছে। মুম্বইয়ের এমন ক্রিকেটার প্রয়োজন, যারা ম্যাচ জেতাতে পারে। সেটা এই ম্যাচে ছিল না। ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের বোঝা উচিত তারা শুধু এই ম্যাচ খেলতে হয় বলে খেলতে আসেনি। মুম্বই সব সময় মাঠে নিজেদের ১০০ শতাংশ দেয়। এটাই মুম্বইয়ের সংস্কৃতি।” তার পরেই রাহানের কিটব্যাগে যশস্বী লাথি মারেন বলে জানা গিয়েছে।
এ বারের রঞ্জি ট্রফি শেষ হওয়ার পরেই যশস্বী জানান, মুম্বই ছেড়ে গোয়ার দলে যোগ দিচ্ছেন তিনি। আগামী মরসুম থেকে সেখানেই খেলবেন। যশস্বীর মুম্বই ছাড়ার কারণ হিসাবে অনেকে রাহানেকে দায়ী করেছিলেন। এর আগে ২০২২ সালের দলীপ ট্রফির ম্যাচে যশস্বীকে মাঠ থেকে বার করে দিয়েছিলেন রাহানে। সেই ম্যাচে বিপক্ষের ক্রিকেটার রবি তেজাকে কটূক্তি করেছিলেন যশস্বী, যা পছন্দ হয়নি রাহানের। সেই কারণেই তিনি যশস্বীকে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। নিজের দলের ক্রিকেটারকে এই ভাবে মাঠ থেকে বার করে দেওয়ার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। রাহানের সঙ্গে তার পর থেকেই যশস্বীর সম্পর্ক খারাপ হয় বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
এ বারের আইপিএলে যশস্বী ব্যাট হাতে ভাল খেললেও দল ভাল খেলতে পারেনি। রাজস্থানের প্লে-অফের দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছে। রাহানে অবশ্য কমলা টুপির দৌড়ে চার নম্বরে রয়েছেন। ১১টি ম্যাচে ৪৩৯ রান করেছেন তিনি। পাঁচটি অর্ধশতরান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ৪৩.৯০ গড় ও ১৫৪.০৩ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি। রাজস্থানের হয়ে সর্বাধিক রানের মালিক তিনি। বাকি তিনটি ম্যাচ তাঁর কাছে সম্মানরক্ষার লড়াই। সেই লড়াইয়ে সফল হতে চাইবেন তিনি।
অন্য দিকে কেকেআরের হয়ে এ বার সর্বাধিক রান করেছেন রাহানে। ১০টি ম্যাচে ২৯৭ রান করেছেন তিনি। ৩৭.১৩ গড় ও ১৪৯.২৪ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি। তিনটি অর্ধশতরান করেছেন রাহানে। তবে যশস্বীর থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ব্যাটার রাহানে। কেকেআরও খুব ভাল জায়গায় নেই। প্লে-অফের দৌড়ে বাকি চারটি ম্যাচই জিততে হবে তাদের। একটি হারলেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে রাহানেদের। অর্থাৎ, বদলার সুযোগ রয়েছে যশস্বীর কাছে। রাহানেদের আইপিএল থেকে ছিটকে দেওয়ার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। এ বার প্রথম বারের সাক্ষাতে গুয়াহাটির মাঠে কলকাতার কাছে হারতে হয়েছিল রাজস্থানকে। সেই হারের বদলা নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে যশস্বীদের। এখন দেখার, রাহানে-যশস্বী লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসেন।