Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
যুদ্ধের আবহে শোকের নাম অঙ্কিত

হিউজ-স্মৃতির প্রত্যাবর্তন স্তব্ধ করে দিল ওয়ার্নারকে

অঙ্কিত কেশরীর খবরটা তাঁরা সকাল-সকাল পেয়ে গিয়েছিলেন। সবাই মিলে একসঙ্গে আলোচনাটা হল পরে, টিম বাসে করে প্র্যাকটিসে যাওয়ার রাস্তায়। নাহ, আলোচনা শব্দটা বোধহয় ভুল বলা হল। কারণ তাঁরা তো বেশি কিছু বলতেই পারেননি। তাঁরা কেউ দাক্ষিণাত্যের, কেউ পশ্চিম ভারতের, কেউ রাজধানীর বাসিন্দা, অনেকে তো ভারতবর্ষেরই নন। কিন্তু সোমবারের আগে পর্যন্ত অখ্যাত এক সতীর্থের অকস্মাত্‌ মৃত্যু যেন তাঁদের নতুন করে মিলিয়ে দিয়েছে।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৮
Share: Save:

অঙ্কিত কেশরীর খবরটা তাঁরা সকাল-সকাল পেয়ে গিয়েছিলেন। সবাই মিলে একসঙ্গে আলোচনাটা হল পরে, টিম বাসে করে প্র্যাকটিসে যাওয়ার রাস্তায়।

নাহ, আলোচনা শব্দটা বোধহয় ভুল বলা হল। কারণ তাঁরা তো বেশি কিছু বলতেই পারেননি। তাঁরা কেউ দাক্ষিণাত্যের, কেউ পশ্চিম ভারতের, কেউ রাজধানীর বাসিন্দা, অনেকে তো ভারতবর্ষেরই নন। কিন্তু সোমবারের আগে পর্যন্ত অখ্যাত এক সতীর্থের অকস্মাত্‌ মৃত্যু যেন তাঁদের নতুন করে মিলিয়ে দিয়েছে।

তাঁরা সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। অঙ্কিতের অকালবিয়োগে তাঁরা সবাই স্তব্ধবাক, হতভম্ব। কেউ ভাল করে বুঝে উঠতে পারছেন না যে, তাঁদের মনের ভিতর কী চলছে। আর তাঁদের মধ্যে একজন বাকিদের চেয়ে একটু বেশি আক্রান্ত। তিনি হায়দরাবাদ অধিনায়ক। ক্রিকেট মাঠেরই আর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সবচেয়ে কাছের প্রত্যক্ষদর্শী। অপরিচিত এক তরুণের মৃত্যুসংবাদ শুনে যাঁর মনে পড়ে যাচ্ছে খুব প্রিয় বন্ধুর কথা। অঙ্কিতের খবর ডেভিড ওয়ার্নারকে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে ফিলিপ হিউজের স্মৃতি!

কে এল রাহুল তো কথাবার্তাতে তেমন ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন।

“টিম বাসে অঙ্কিতের কথা উঠতে দেখলাম ওয়ার্নার একদম চুপ করে গেল। একটা কথাও আর বলল না। হিউজের স্মৃতি মনে পড়ে গিয়েছিল হয়তো,’’ মঙ্গলবার সকালে আনন্দবাজারকে ফোন সাক্ষাৎকার দিতে দিতে বলছিলেন লোকেশ রাহুল। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কেকেআরের বিরুদ্ধে ম্যাচ। ফ্লাইট লেট করলেও যারা এ দিন সন্ধেয় টিম হোটেলে ঢুকল চ্যাম্পিয়নের মেজাজ নিয়ে। ঢুকল, দিল্লিকে দিল্লির মাঠে উড়িয়ে, চারে তিন করে। এমন মেগাপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নামতে গেলে ক্রিকেটীয় উৎকর্ষ তো বটেই, প্রয়োজন ‘খুনে’ মানসিকতারও। কিন্তু তার জন্য তো ক্রিকেটে মন বসাতে হবে।

লোকেশ রাহুলদের তো এখনও অসুবিধে হচ্ছে। ‘‘এ রকম ঘটনা তো ক্রিকেটে খুব একটা হত না। কিন্তু ইদানীং বড্ড বেশি ঘটছে,” বলছিলেন হায়দরাবাদ টিমের উঠতি প্রতিভা। সিডনির সেঞ্চুরি নিয়ে বলতে গিয়ে যাঁর কণ্ঠস্বরে ছিল উচ্ছ্বলতা, অঙ্কিত প্রসঙ্গে তাঁর গলাও তাঁর টিমের মতোই বিমূঢ়, বিহ্বল। শুধু বলে যাচ্ছেন, “ওর পরিবারের কথা ভাবলে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এত বড় একটা ধাক্কা। অনূর্ধ্ব উনিশ স্কোয়াডে ছিল, তাই না? সত্যি, কতই বা বয়স হয়েছিল ছেলেটার! কী ভাবব, কী বলব, সত্যি কিছু বুঝতে পারছি না।”

এমনিতে অবশ্য রাহুল কথার খেই খুব একটা হারিয়ে ফেলেন না। প্রশ্ন শুনে কয়েক সেকেন্ড ভেবে নেন। তার পর গুছিয়ে, বিস্তারিত ভাবে নিজের উত্তর দেন। জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট অভিষেক নিয়ে বলতে গিয়ে যেমন এক নিঃশ্বাসে অনেক কিছু বলে ফেললেন। বললেন, দেশের হয়ে খেলার ডাক পেয়ে মনে হয়েছিল জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল। কিন্তু সেই অনুভূতিটা যে বেশি দিন টিকে থাকেনি, সেটাও বলে দিলেন খুব সহজে। মেলবোর্ন টেস্টে অভিষেকটা তাঁর মোটেও মনে রাখার মতো হয়নি। নিজের উপর চাপ বরং হু হু করে বেড়ে গিয়েছিল। চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছেন নিজেই নিজের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলে। নিজেই নিজের ক্লাস নিয়ে। ‘‘বুঝতে পারছিলাম কোথায় ভুল হচ্ছে। সেগুলো কী ভাবে সামলাতে হবে, সেটাও মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। সিডনিতে আমার প্ল্যানটা খেটে গেল। ব্যস, ওখানেই আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেলাম। অস্ট্রেলিয়া অসাধারণ শক্তিশালী টিম। ওদের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করলে কনফিডেন্স তো বাড়বেই।”

রাহুল যে স্বভাবতই আত্মবিশ্বাসী, তাঁর কথাবার্তাই বুঝিয়ে দেয়। তাঁকে যে ‘দ্য ওয়াল’-এ নতুন ইট গাঁথার কারিগর বলা হচ্ছে, তাঁর সঙ্গে যে আর এক কর্নাটকীর তুলনা উঠছে, সে সব কথা উঠলে আর পাঁচ জন তরুণের মতো উত্তেজিত হন না রাহুল। শান্ত ভাবে বলেন, “শুধু আমি কেন, রাহুল দ্রাবিড় আমাদের রাজ্যের বাকিদেরও প্রেরণা। ও সব সময় আমাদের পাশে থাকে। আমরাও সুযোগ পেলে ওর ক্রিকেটমস্তিষ্কে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করি। ক্রিকেট নিয়ে ও ভীষণ প্যাশনেট।”

আর এক ক্রিকেটারের প্যাশনও সদ্য তেইশে পা দেওয়া রাহুলকে মোটিভেট করে। তিনি, বিরাট কোহলি। সিডনিতে যাঁর নেতৃত্বে খেলেছেন রাহুল। তারও আগে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে পেয়েছেন অধিনায়ক কোহলিকে। বিরাট ব্র্যান্ডের ক্যাপ্টেন্সিতে যে তীব্রতা আছে, যে আবেগ আছে, সেটা টানে রাহুলকে। দিনে চব্বিশ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন বিরাটের যুদ্ধং দেহি মনোভাব দারুণ লাগে রাহুলের। তিনি বলে দেন, “ও খুব ভাল মোটিভেটর। নিজের উপর বিরাটের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে, আর ওর ইনটেন্সিটি আমাদেরও সমানে তাতিয়ে দেয়। সমানে ঠেলা দেয়, নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। ক্যাপ্টেন তো এ রকমই হবে!”

বিরাটের মারকাটারি ব্যাপারটা তাঁর নিজের মধ্যেও বেশ ভাল পরিমাণে বিদ্যমান। কেকেআর ম্যাচের কথা শুনলে অন্তত একটা গর্জন ওঠে। অঙ্কিত নিয়ে প্রচণ্ড মনখারাপের মধ্যেও অন্তত এটুকু বলে দিতে পারেন, ‘‘ওদের ভয় পাই না!’’

সুপার ওভারে হারল রয়্যালস

রাজস্থান রয়্যালস অবশেষে ষষ্ঠ ম্যাচে এসে প্রথম হারের স্বাদ পেল আইপিএল আটে। তা-ও সুপার ওভারে। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে যে উত্তেজক পরিসমাপ্তির জন্য শেন ওয়াটসনের দল বিখ্যাত। কিন্তু মোতেরায় এ দিন মরিসের সুপার ওভারের প্রথম বলে মিলার আউট হলেও একটি নো-বল সহ বাকি পাঁচ ডেলিভারিতে ১৫ রান তোলার পরে কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাব শেষ বলে দ্বিতীয় উইকেট হারায়। পাল্টা জনসনও একটি নো বল করলেও তাঁর প্রথম আর তৃতীয় বলে রাজস্থান ওয়াটসন আর ফকনারের জোড়া উইকেট হারানোয় বাকি তিন বল খেলার আর সুযোগ ঘটেনি। রানও পাঁচের বেশি ওঠেনি। ম্যাচে দু’দলই ২০ ওভারে ১৯১ করেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE