সমর্থন: গ্যালারিতে বসেই স্বামীকে উৎসাহ দিয়ে গেলেন দীপিকা। ছবি: টুইটার।
বরাহনগরের প্রামাণিক ঘাট এলাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এখন তিনি বাসিন্দা দক্ষিণ কলকাতার। ভারতের সেই জনপ্রিয় তিরন্দাজ ও নিখাদ বঙ্গসন্তান অতনু দাসের জন্য এখন কেবল গোটা কলকাতা বা বাংলা নয়, তাঁর পদকের জন্য প্রার্থনায় মগ্ন গোটা দেশ।
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে শুরুটা ভাল হয়নি অতনু বা তাঁর তিরন্দাজ স্ত্রী দীপিকা কুমারীর। কিন্তু তার পরে দু’জনেই ছন্দে ফিরেছেন। বুধবার তিরন্দাজির ব্যক্তিগত বিভাগে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিলেন স্ত্রী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অতনুও ছন্দে। বৃহস্পতিবার ইয়ুমেনোশিমা তিরন্দাজ পার্কে অতনু হারালেন ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী দক্ষিণ কোরিয়ার তিরন্দাজ ওহ জিন-হায়েক-কে। পাঁচ সেটের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পরে দু’জনেরই পয়েন্ট ছিল ৫-৫। এই অবস্থা থেকে শুট অফে ৬-৫ জিতে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেলেন অতনুও। প্রথমে ১-৩ পিছিয়ে ছিলেন অতনু। সেখান থেকে ২-৪ পিছোনোর পরে লড়াইয়ে ফেরেন তিনি। আগ্রাসী মেজাজে ছন্দে ফিরে ৪-৪ করে সমতা ফেরান অতনু। পরের সেট শেষ হয় ৫-৫। শুট অফে কোরিয়া ৯ পয়েন্ট পেলে অতনু ‘বুলস আই’ (১০ পয়েন্ট) মেরে ম্যাচ জিতে নেন।
আর রুদ্ধশ্বাস এই ধনুর্যুদ্ধে অতনুকে সমর্থন ও আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে গেলেন স্ত্রী দীপিকা। শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াই রয়েছে তাঁর। পদক-ভাগ্যও ঠিক হয়ে যাবে। পর দিন, অর্থাৎ শনিবার লড়াই অতনুর। শুরুতেই তাঁর প্রতিপক্ষ জাপানের তাকাহারু ফুরুকাওয়া।
গত কয়েক মাসে তিরন্দাজির বিশ্বকাপ থেকে সোনা জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছেন অতনু। কিন্তু এ দিন অলিম্পিক্সের দ্বৈরথে কোনও দর্শক ছিল না। কোরীয়দের হয়ে অনেকেই এসেছিলেন স্বদেশীয় ক্রীড়াবিদকে সমর্থন করতে। সেখানে পিছিয়ে গিয়ে অতনুর লড়াইয়ে ফেরা ও তার পরে ম্যাচ জয়, পুরো সময়টাই তাঁর জন্য গলা ফাটালেন স্ত্রী দীপিকা। টিভিতেও দেখা গিয়েছে, অতনু পিছিয়ে থেকে লড়াইয়ে ফেরার সময়ে একটি করে লক্ষ্যভেদ করছেন আর দর্শকাসনে বসা তাঁর স্ত্রী, ‘‘দারুণ! তুমি পারবে,’’ বলে চিৎকার করছিলেন।
ম্যাচের পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অতনু অবশ্য বেশি কথা বলতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘পদক পেতে গেলে এখনও অনেক পথ যেতে হবে। উচ্ছ্বাসের কিছু হয়নি। অবশ্যই প্রাক্তন অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়নকে হারানো উৎসাহ দেবে। কিন্তু এখন কথা নয়। মনোনিবেশের পালা। পদক পেলে অনেক কথা বলা যাবে। এখন আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন।’’ বোঝা যাচ্ছে, পদকের জন্য মুখিয়ে থাকা অতনু এই অবস্থায় নিজেকে লুকিয়ে রাখছেন প্রচারমাধ্যম থেকে।
দীপিকার সমর্থন প্রসঙ্গে অতনুর মন্তব্য, ‘‘লক্ষ্যভেদ করার সময় চারপাশের কিছুই মাথায় থাকে না। কিন্তু দীপিকার গলা পাচ্ছিলাম। ওর প্রে্রণাতেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।’’ অতনুর হাতের আঙুলে এ দিন বিয়ের আংটি ছাড়াও ছিল অলিম্পিক্সের বলয় থাকা বিশেষ আংটিও।
পরে টোকিয়োয় সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বাঙালি তিরন্দাজ বলেন, ‘‘আশা করেছিলাম দীপিকার সঙ্গে মিক্সড টিম ইভেন্টে নামতে পারব। কিন্তু র্যাঙ্কিং রাউন্ডে ভাল ফল না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy