Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সনি নিয়ে চ্যালেঞ্জ লাল-হলুদ কোচের, শান্ত খালিদ

লেখা ওই পোস্টার দেখলেও স্প্যানিশ কোচের তার মর্মার্থ বোঝা সম্ভব ছিল না। তবুও কলকাতায় কোচিং করাতে এসে প্রথম বার চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের লনে বসেই ‘ওভার বাউন্ডারি’ হাঁকিয়ে দিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।

সৌজন্য: বাগ্‌যুদ্ধের পরে হাতে হাত দুই কোচের। নিজস্ব চিত্র

সৌজন্য: বাগ্‌যুদ্ধের পরে হাতে হাত দুই কোচের। নিজস্ব চিত্র

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০০
Share: Save:

জনি আকোস্তাকে কটাক্ষ করে পোস্টার লাগানো ছিল মোহনবাগান তাঁবুতে ঢোকার রাস্তায়।

রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলে আসা কোস্তা রিকার স্টপারকে সঙ্গে নিয়ে সেই রাস্তা দিয়েই সবুজ-মেরুন তাঁবুতে ঢুকলেন আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস। বাংলায় লেখা ওই পোস্টার দেখলেও স্প্যানিশ কোচের তার মর্মার্থ বোঝা সম্ভব ছিল না। তবুও কলকাতায় কোচিং করাতে এসে প্রথম বার চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের লনে বসেই ‘ওভার বাউন্ডারি’ হাঁকিয়ে দিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। বলে দিলেন, ‘‘রবিবার বিকেলে দেখব সনি নর্দে কে?’’ চ্যালেঞ্জ, গুরুত্ব না দেওয়া, না কি নেহাতই চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব, বোঝা গেল না। তবে জবি জাস্টিনদের কোচের এর পরের উক্তি আরও ইঙ্গিতপূর্ণ। ‘‘সনিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে যাব কেন? ওকে আটকানোর আলাদা পরিকল্পনাও নেই। সবাইকে আটকানোর কথাই ভাবছি।’’

বাঙালির চিরকালীন দু’ভাগ হয়ে যাওয়া ঘটি বনাম বাঙাল ম্যাচের বয়স হয়ে গেল চুরানব্বই বছর। সব মিলিয়ে দু’দল খেলেছে ৩৬৬টি ম্যাচ। কত যে গল্প কথা ছড়িয়ে আছে ডার্বিকে ঘিরে! আস্ত একটা ‘ময়দানি মহাভারত’ হয়ে যেতে পারে। কোচেদের একে অন্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগাটাও নতুন কিছু নয়। একুশ বছর আগে অমল দত্ত বনাম পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ বাক-যুদ্বের তাপ সমর্থকদের এমন তাতিয়ে দিয়েছিল যে, ১৯৯৭-এর ১৩ জুলাই যুবভারতীতে দর্শক সংখ্যার সর্বকালীন রেকর্ড হয়েছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ শিবিরে বসে তাঁদের তৈরি মঞ্চে বসে সেই দলেরই সেরা অস্ত্রকে কার্যত ‘বুঝে নেব’ স্টাইলে হুঙ্কার দিচ্ছেন, এটা সম্ভবত কখনও দেখেনি কলকাতার ফুটবল। যা হল শুক্রবার দুপুরে।

ভাবা গিয়েছিল আলেসান্দ্রোর চেয়ারে বসে পাল্টা কিছু বলবেন খালিদ জামিল। কিছু বলবেন হয়তো স্বয়ং মোহনবাগান জনতার হার্ট থ্রবও। কিন্তু সবুজ-মেরুন কোচ অত্যন্ত শান্তভাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া দিলেন। ‘‘সনি আমার দলের সেরা অস্ত্র। বহু ম্যাচ জিতিয়েছে। ও জানে কখন, কী ভাবে নিজেকে তাতাতে হবে।’’ যা থেকে স্পষ্ট কোনওদিন ডার্বি না জেতা খালিদ প্রতিপক্ষ কোচের কটাক্ষের জবাবটা সনির কাছ থেকেই পেতে চাইছেন। এবং সেটা মাঠে। দীর্ঘ দিন পরে ডার্বি খেলতে নামা সনি এ দিন কথা বলেননি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। তবে বিকেলে অনুশীলন শেষ হওয়ার পরেও ওমর এলহুসেইনিকে নিয়ে বেশ কিছু সময় একাই বল মেরে গিয়েছেন গোল লক্ষ্য করে। ফ্রি-কিকও মেরেছেন। যা থেকে স্পষ্ট, নিজের ডার্বি রেকর্ড ধরে রাখতে মরিয়া তিনি। ‘সনি খেললে মোহনবাগান হারে না’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হওয়া সদস্য সমর্থকদের এই বিশ্বাসের মর্যাদা রবিবারও দিতে চান তিনি।

কিন্তু খেতাবের লড়াইতে টিকে থাকতে হলে যে এই ম্যাচ জিততেই হবে আলেসান্দ্রোর ইস্টবেঙ্গলকে। শুধু তাই নয়, আই লিগে পরপর দুটো ডার্বি মশালবাহিনী জেতে না, এই মিথটাও ভাঙতে হবে তাঁকে। খালিদ বলে দিয়েছেন, ‘‘ব্যক্তিগত কোনও চ্যালেঞ্জ নেই এই ম্যাচে। তবে এটা বলছি আমাদের দল প্রতিটি বলের জন্য লড়াই করবে।’’ কোচ বদলের পরে মোহনবাগান হারেনি। পরপর দু’ম্যাচ শুধু জেতাই নয়, গোলও খায়নি মোহনবাগান। দিপান্দা ডিকারা কী বদলে গিয়েছেন? প্রশ্ন শুনে আলেসান্দ্রো দোভাষীর মাধ্যমে বলে দিলেন, ‘‘আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী। খেতাব জেতার জন্য খেলছি আমরা। সেটা পেতে হলে এই ম্যাচটা জিততে হবে। উল্টোদিকে কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে এটা ঠিক, অনেক সময় ডার্বির মতো ম্যাচে ছোট খাটো ঘটনাও ফ্যাক্টর হয়ে যায়।’’ বোঝাই যায়, আই লিগের প্রথম ডার্বিতে জিতলেও কোচ বদলের পরবর্তী মোহনবাগানকে সমীহ করছেন রিয়াল মাদ্রিদ রিজার্ভ দলের প্রাক্তন কোচ। দুই কোচই প্রথম একাদশে কাদের নামাবেন তা খোলসা করে বলতে চাননি। নিজের ‘টেক্কা’ কে-ই বা দেখাতে চায়! মগজাস্ত্রে শান দেওয়ার জন্য দুই কোচের হাতেই যে এখনও চব্বিশ ঘণ্টা সময় আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE