Advertisement
E-Paper

ছ’পয়েন্ট আর দ্বিগুণ চিন্তা নিয়ে ফিরে আসছেন মর্গ্যান

বুধ সন্ধ্যায় দুই শহরে ভারতীয় ফুটবলের দুই মাথা। এক জন বেঙ্গালুরুতে সুনীল ছেত্রীদের খেলা দেখতে। অন্য জন গোয়ায় মর্গ্যানের টিমের জন্য। জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনকে কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে দেখা গেল নোটবুকে পয়েন্ট তুলতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩
ডিকা। গোল পেলেন, হলেন ম্যাচের সেরাও।

ডিকা। গোল পেলেন, হলেন ম্যাচের সেরাও।

ইস্টবেঙ্গল-২ : চার্চিল-০

(হাওকিপ, লালরিন্দিকা)

বুধ সন্ধ্যায় দুই শহরে ভারতীয় ফুটবলের দুই মাথা।

এক জন বেঙ্গালুরুতে সুনীল ছেত্রীদের খেলা দেখতে। অন্য জন গোয়ায় মর্গ্যানের টিমের জন্য।

জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনকে কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে দেখা গেল নোটবুকে পয়েন্ট তুলতে। আর ফেডারেশনের টিডি স্কট ও’ডনেল ভাস্কোর তিলক ময়দানে স্যাভিও মেদেইরার পাশে বসে ম্যাচ দেখলেন। নোটবুক খুব বেশি বার উল্টেছেন বলে খবর নেই।

রেফারি শ্রীকৃষ্ণ ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজানোর ঠিক আগের মুহূর্তে টিভি ক্যামেরা ক্লোজ শটে এক লহমা ধরল ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যানকে। সাহেব কোচের মুখ গম্ভীর, আরও যেন লাল। দেখলে কে বলবে তাঁর টিমের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব চার গোলে জেতার পরের দিনই তিনিও গোয়ায় চার্চিল-বধ করে ফিরছেন। সেই চার্চিল, যারা আই লিগে সব সময় ইস্টবেঙ্গলের শক্ত গাঁট। পুণে এবং গোয়া-পর্ব মিলিয়ে লাল-হলুদের পকেটেও তো পুরো ছয় পয়েন্ট!

গোয়ায় ফোন করে যদিও জানা গেল, এ দিন জিতেও মর্গ্যানের মুখের ভূগোল পাল্টে যাওয়ার কারণ মেহতাব-গুরবিন্দরদের ক্লিশে পারফরম্যান্স। ড্রেসিংরুমে ফিরে ফুটবলারদের নাকি বকাঝকা করেছেন ব্রিটিশ কোচ। ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচ জিতেও তাই বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইল ফোন সুইচড অফ ইস্টবেঙ্গল কোচের।

মর্গ্যান কিন্তু ধন্যবাদ দিতে পারেন আই লিগের বর্তমান পরিস্থিতিকে। পিছোতে পিছোতে দেশের জাতীয় ফুটবল লিগের মান এমন জায়গায় এসে ঠেকেছে যে, এ বার কার্যত লড়াই স্রেফ তিন দল—মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, বেঙ্গালুরুর মধ্যে। আগের চার্চিল হলে এ দিনই একগাদা ভুলের মাশুল হয়তো গুণতে হত ইস্টবেঙ্গলকে। কাজের কাজ দু’টো গোল বাদ দিলে এ দিন দল গঠন এবং টিমের স্ট্র্যাটেজিতেও একগাদা ভুল। যার দায় এড়াতে পারেন না কোচও ।

তিলক ময়দানের মাঠ এমনিতেই ছোট। গোয়ানরা এই মাঠে নামলেই আশির দশকে কলকাতা লিগে খেলা রেল দলগুলোর মতো মিডল করিডরে পায়ের জঙ্গল বানিয়ে গোলের দরজা বন্ধ করে দেয় বিপক্ষের। মর্গ্যান সেই ফাঁদেই পা দিয়ে ফেলেন এ দিন।

এই ট্যাকটিক্সের পাল্টা স্ট্র্যাটেজি হল উইংয়ে খেলা ছড়িয়ে দাও। মাঝমাঠের ট্র্যাফিক জ্যাম কাটাও। কিন্তু গোটা ম্যাচে এক বারও দেখা গেল না লাল-হলুদের দুই সাইডব্যাক রাহুল বা নারায়ণ ওভারল্যাপে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে গোয়ার আবহে লাল-হলুদ জার্সিতে গোয়ান রোমিও ফার্নান্ডেজ উইংয়ে বড় ভূমিকা নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি খেলা দেখলেন গ্যালারিতে বসে। মর্গ্যান খেলাননি। আর নিখিল নেমে ডান দিকে হাওকিপকে দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করালেন বটে। তবে অবিনাশের মতো সৃষ্টিশীলতার ছাপ তাঁর খেলায় দেখা গেল না। বজবজের ছেলেও যে ব্রাত্য এ দিন! বাঁ দিকে লালরিন্দিকা গোল করলেন, তবে দেখে মনে হবে উইং ধরে তাঁকে আক্রমণ শানাতে কেউ যেন নিষেধ করে দিয়েছে!

মর্গ্যান তাঁর আগের ইনিংসে সফল হয়েছিলেন পেন ওরজিকে ‘ফ্রি-ম্যান’ বানিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ওরজি হলেন ওয়েডসন। কিন্তু ওয়েডসন কিছুতেই ওরজি নন। আদতে উইঙ্গার। নতুন পজিশনে নেমে তিনি অকারণ ড্রিবল এবং বেশি বল হোল্ড করে লাল-হলুদ আক্রমণকে আরও ভোঁতা বানিয়ে তুলছেন। তাই ম্যাচে ফাইনাল পাসারের অভাবে ভুগল ইস্টবেঙ্গল।

ভাগ্য ভাল, প্রথমার্ধেই ছন্নছাড়া চার্চিল রক্ষণকে পেয়ে দু’গোল করে ফেলেছিল লাল-হলুদ। হেডে হাওকিপের প্রথম গোলের সময় তাঁকে বিপক্ষের কেউ মার্ক করলেন না। দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রে ডিকার কর্নার থেকে বল সরাসরি গোলে ঢোকার সময় ফ্লাইট বুঝতে না পেরে চার্চিল গোলকিপার প্রিয়ন্ত-সহ তিন ডিফেন্ডার দর্শক হয়ে রইলেন।

আনোয়ার আলি এমনিতেই চোটপ্রবণ। বয়স বেড়েছে। এ বার তাঁকে সই করিয়ে ইস্টবেঙ্গল এমন করছিল যেন রক্ষণের ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক’ চলে এসেছে! সেই আনোয়ার কুঁচকিতে চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন তিন মিনিটেই। পরিবর্ত গুরবিন্দর ব্যাক পাস করে ফের গোল খাইয়ে দিচ্ছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। গোলকিপার রেহনেশ শেষবেলায় না বাঁচালে সমস্যা বাড়তেই পারত। আগে এই জায়গাটায় মেহতাব দুই স্টপারের মাঝে এসে নেতৃত্ব দিতেন। কিন্তু এ বারের লাল-হলুদে সেগুলো যেন কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে।

কাউন্টার অ্যাটাক আর সেট পিসের কল্যাণে পুণে ও গোয়া-পর্ব মর্গ্যান সামলে নিলেন বটে। কিন্তু এই ছকে সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরু-গাঁট পেরোনো কঠিন। বারাসতে এর পরের ম্যাচে বুকেনিয়ার দুর্বল টার্নিংয়ের সুযোগ নিতে আজ থেকেই হয়তো প্ল্যান ভাঁজা শুরু করে দিয়েছেন বিনীতরা।

স্কটের নোটবুক এ দিন বেশি খোলেনি কি লাল-হলুদের এত ভুলেই? কে জানে!

ইস্টবেঙ্গল: রেহনেশ, রাহুল, আনোয়ার (গুরবিন্দর), বুকেনিয়া, নারায়ণ, মেহতাব, নিখিল, ওয়েডসন, লালরিন্দিকা, উইলিস (জ্যাকিচন্দ), হাওকিপ (আমিরভ)।

Lalrindika Ralte East Bengal I League Churchill Brothers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy