Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দেশঁর ওয়ান ম্যান শো থামানোর অস্ত্র আছে

ওয়ান ম্যান টিম কথাটা আমি বিশ্বাস করি না। দলে দু’একজন প্রতিভা থাকতেই পারে যাদের বল কন্ট্রোল বা ফার্স্ট টাচের মধ্যে ঈশ্বরপ্রদত্ত ব্যাপার আছে। কঠিন জিনিসগুলোকে যারা অনেক সহজ করে দেয়।

পেশি শক্তির আস্ফালন না পায়ের জাদু, রবিবার জিতবে কে? ছবি: এএফপি, রয়টার্স

পেশি শক্তির আস্ফালন না পায়ের জাদু, রবিবার জিতবে কে? ছবি: এএফপি, রয়টার্স

সঞ্জয় সেন
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৬
Share: Save:

ওয়ান ম্যান টিম কথাটা আমি বিশ্বাস করি না। দলে দু’একজন প্রতিভা থাকতেই পারে যাদের বল কন্ট্রোল বা ফার্স্ট টাচের মধ্যে ঈশ্বরপ্রদত্ত ব্যাপার আছে। কঠিন জিনিসগুলোকে যারা অনেক সহজ করে দেয়। কিন্তু ফুটবলের মতো টিমগেমে ব্যক্তিগত পুজোর কোনও জায়গা নেই। ফুটবল এমন একটা খেলা যেখানে এগারো জনকে সমানতালে লড়াই করতে হয়।

কিন্তু পর্তুগাল আর রোনাল্ডোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। রোনাল্ডোর মতো প্রতিভা যখন কোনও দলে থাকে স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যাশার সমস্ত চাপ তার ঘাড়েই পড়ে। ভক্তরা আশায় থাকে, আজ কী দেখতে পাব। দল জেতার থেকেও সবার বেশি আগ্রহ থাকে রোনাল্ডো গোল পেল তো। নিজের পারফরম্যান্স এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে রোনাল্ডো যে গোল না পেলেই ব্যর্থ ধরা হয়। টিম জিতুক কি না জিতুক তাতে কিছু যায় আসে না। এ বারও ইউরোয় তাই দেখলাম। সবাই পর্তুগালের জেতার থেকেও বেশি চিন্তিত ছিল রোনাল্ডো কেমন খেলবে। রোনাল্ডো মানেই একটা ওয়ান ম্যান টিম ব্যাপার চলে এসেছে। যেখানে পাশে প্রতিভাবান ফুটবলাররা থাকলেও সব দায়িত্ব পড়ে রোনাল্ডোর উপরেই।

ওয়েলস-পর্তুগাল সেমিফাইনালে যে রোনাল্ডোকে দেখেছিলাম তার সঙ্গে রিয়ালের রোনাল্ডোর বেশি পার্থক্য নেই। উইংয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে সেন্ট্রাল পজিশনে ড্রিফ্ট করা। সঠিক সময় সঠিক জায়গায় থাকা। বলটা পেয়ে বারবার শট মারা। আর সঙ্গে ক্রস পেলেই স্পটজাম্প দিয়ে সেই হেড। রোনাল্ডো সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর যখন ও বলের আশেপাশে বেশি যায়। ফের্নান্দো স্যান্টোস এমন স্ট্র্যাটেজিটা তৈরি করেছেন যে রোনাল্ডো-কেন্দ্রিক প্রতিটা আক্রমণ গড়া হবে। ও ফ্রি খেলবে। কোনও একটা নির্দিষ্ট পজিশনের চাপ নিতে হবে না। তাই পর্তুগালে ওয়ান ম্যান ব্যাপার একটা চলে এসেছে। রোনাল্ডো যদি গোল না পায় মুশকিল হচ্ছে দলের।

পর্তুগালের রোনাল্ডো-ফ্যাক্টর থাকলেও ফ্রান্সের আছে ব্যালান্সড একটা দল। যেখানে প্রতিটা পজিশনেই প্রতিভাবান ফুটবলার আছে। পোগবা থেকে উমতিতি। পায়েত থেকে মাতুইদি। বিভিন্ন ধাঁচের ফুটবলার। গ্রুপ পর্ব থেকে নকআউটে উঠে খেলার স্টাইলটাও পুরো পাল্টে দিয়েছে ফ্রান্স। গ্রুপে খেলা দেখে মনে হয়েছে, প্ল্যানিংয়ের অভাব ছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে দেখলাম ৪-২-৩-১ ছকে দলকে সাজালেন দেশঁ। অনেক বেশি ট্যাকটিকাল ফুটবল খেলেছিলেন। কঁতের মতো বক্স টু বক্স মিডফিল্ডারকে প্রথম দলের বাইরে রাখতেও দ্বিধাবোধ করেননি। কারণ মাঝমাঠে দরকার ছিল সিসোকোর ধার। জার্মানিকে এক ইঞ্চিও জায়গা দেয়নি ফ্রান্স। পরিসংখ্যানে তুমি এগিয়ে থাকতে পারো কিন্তু গোল না হলে কেউ মনে রাখবে না। উমতিতি আর কসিয়েলনির ডিফেন্সের জুটিটা ছিল দুর্দান্ত। প্রতি মুহূর্তে সতর্ক ছিল। প্রতিআক্রমণকে হাতিয়ার করে ট্যাকটিকাল খেলায় ম্যাচ বের করেন দেশঁ। তার উপর দেশঁর হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র গ্রিজম্যান। যে প্রতিটা মুভ শেষ করছে। ও যা ফর্মে আছে, স্যান্টোস নিশ্চয়ই আলাদা কিছু প্ল্যান কষবেন ওর জন্য।

ভয়ঙ্কর রোনাল্ডোকে আটকানোর মশলাও আছে ফ্রান্সের। সেটা আরও কার্যকর হবে যদি সেমিফাইনালের পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে পারে ফ্রান্স। উমতিতি আর কসিয়েলনি জুটি এখন সেট হয়ে গিয়েছে। বল প্লেয়ারদের কোনও কম্বিনেশন তৈরি করতে দেয় না। খুব ফিজিকাল ফুটবল খেলে। বলের উপর ফরোয়ার্ডদের সময় দেয় না। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে সব সময় মাঝমাঠের ডাবল পিভট খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়। পোগবা-মাতুইদির উপর ভরসা করা যেতে পারে। ওরা কিন্তু মাঝে মাঝেই নীচে নেমে রক্ষণকে সাহায্য করে। লোক বাড়িয়ে দেয় যাতে বিপক্ষ ফরোয়ার্ডের মুশকিল হয়। ডাবল কভারিংও করে। জোনাল মার্কিংয়ে খেলে। পর্তুগালে নানি, রেনাতো স্যাঞ্চেজরা থাকলেও রোনাল্ডোর ধারেকাছে এরা নয়। স্বভাবতই সমস্ত কিছু নির্ভর করবে রোনাল্ডোর উপরেই।

রোনাল্ডোর বিশেষত্ব হচ্ছে ফর্ম খারাপের দিনেও ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দিতে পারে। আসলে রোনাল্ডোর মতো গোলস্কোরার একটা সামান্য ওপেনিংকেও গোলে বদলাতে পারে। আর তাই ফ্রান্সের একটা ছোট ভুল বা পেনাল্টি বক্সের আশেপাশে একটা অযথা ফাউলও রোনাল্ডোর জন্য গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারে। যতই হোক রোনাল্ডো তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ronaldo euro2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE