Advertisement
E-Paper

‘কৃতিত্ব ওদের, বদলটা হয়েছে মানসিকতায়’

বেঙ্গালুরুতে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই ম্যাকাও-কে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে পৌঁছে গিয়েছে ভারতীয় দল। স্মরণীয় জয়ের পর দিন সুনীল ছেত্রীদের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন ফোনে আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন।শিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে টানা ছ’টি ম্যাচ জিতে ফুটবলাররা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। আসল কৃতিত্ব ওদেরই।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৮
সফল: সুনীলদের নিয়ে ছুটছে স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের রথ। ফাইল চিত্র

সফল: সুনীলদের নিয়ে ছুটছে স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের রথ। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: দশ বছর পরে ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রেখেছিলেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে। এ বার দু’ম্যাচ বাকি থাকতেই এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে চলে গেল দল। কোচ হিসেবে অনুভূতি কী?

স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন: আমি দারুণ খুশি। তার কারণ কিন্তু এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন নয়। অনেকেই ভাবতে পারেনি, ভারতীয় ফুটবল দল এই উচ্চতায় পৌঁছবে। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে টানা ছ’টি ম্যাচ জিতে ফুটবলাররা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। আসল কৃতিত্ব ওদেরই। আমার ভূমিকা সামান্যই। ডাক্তার, ফিজিক্যাল ট্রেনার থেকে কিট বয়— প্রত্যেকের কাছেই আমি কৃতজ্ঞ। ওদের সাহায্য ছাড়া সাফল্য পাওয়া সম্ভব ছিল না।

প্র: জাতীয় দলের ফুটবলাররা কিন্তু বলছেন, আপনি দায়িত্ব নিয়েই সব কিছু বদলে দিয়েছেন।

স্টিভন: আমি শুধু ফুটবলারদের মানসিকতা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। মাঠে নেমে তো ওদেই খেলতে হয়েছে।

প্র: কীভাবে পাল্টালেন মানসিকতা?

স্টিভন: ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বার দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু সিনিয়র ফুটবলারের মানসিকতা আমাকে বিস্মিত করেছিল। ওরা জেতার বিশ্বাসটাই যেন হারিয়ে ফেলেছিল। তাই প্রথম দিন প্রাতঃরাশের সময়েই ওদের বলে দিয়েছিলাম— আমার নাম স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। আমি এখানে জিততেই এসেছি। হার-কে আমি ঘৃণা করি। শুধু তাই নয়। দলের সিনিয়র ফুটবলারদের কাছে সরাসরি জানতে চেয়েছিলাম, রাতে তোমাদের ঘুম হয়? ওরা, হ্যাঁ, বলার পরে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল— ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে দেড়শোরও পিছনে তোমাদের দেশ। এর পরেও কী ভাবে ঘুম হয়?

প্র: এতেই কি বদলে গেল ভারতীয় দলের অন্দরমহলের ছবি?

স্টিভন: একেবারেইই নয়। প্রথম দিন আরও একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম, আমার কাছে পারফরম্যান্সই শেষ কথা হবে। কোনও ফুটবলার যদি মনে করে, সিনিয়র বলে সে দলে থাকবে, তা কিন্তু হবে না। আমার কাছে সিনিয়র-জুনিয়র বলে কিছু নেই। এটাও গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, আই লিগ বা আইএসএলে কারা কোন দলের হয়ে খেলছে। এ রকম ফুটবলারকেও আমি জাতীয় দলে ডেকেছি, যার কোনও ক্লাব নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছত্রিশ জন নতুন ফুটবলারকে জাতীয় দলে সুযোগ দিয়েছি। আমার কাছে সুনীল ছেত্রী ও উদান্ত সিংহ-এর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।

আরও পড়ুন: হারের জ্বালা থেকে ভারতীয় দলকে মুক্তি দিল ৫২ হাজারের গ্যালারি

প্র: দলে পরিবর্তন আনার পথ কতটা কঠিন ছিল?

স্টিভন: একটু কঠিন অবশ্যই ছিল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। ধীরে ধীরে ফুটবলারাও বুঝে গিয়েছিল, এই কোচের কাছে কেউ অপরিহার্য নয়। কারণ, আমি তারকা প্রথায় বিশ্বাস করি না।

প্র: সমালোচকদের উদ্দেশে কী পাল্টা কোনও বার্তা দিতে চাইবেন?

স্টিভন: আমি সমালোচনায় কান দিই না। কারণ, স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন দায়বদ্ধ শুধু ভারতীয় ফুটবলের কাছে। তাই কে কী বলছেন, আমার কাছে অর্থহীন। আমার একমাত্র লক্ষ্য, ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যত দিন দায়িত্বে থাকব, সেটাই করে যেতে চাই।

প্র: আপনার কোচিংয়ে সিনিয়র দল খুব ভাল জিতল। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স কেমন লাগল?

স্টিভন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ভারতের ছেলেরা একটু বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। আসলে প্রথম বার বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে খেলছে ওরা। এ রকম হতেই পারে। তবে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স কিন্তু কখনও হারার মতো ছিল না। দারুণ খেলেছে ওরা।

প্র: অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলারদের কাউকে কি সিনিয়র জাতীয় দলে দেখা যেতে পারে?

স্টিভন: এই মুহূর্তে আমার সে রকম কোনও পরিকল্পনা নেই। ভুলে যাবেন না, ওদের বয়স এখনও মাত্র সতেরো। অভিজ্ঞতা খুব কম। সিনিয়র দলের চাপ সামলানোর মতো তৈরি নয় এখনও। আমি বিশ্বাস করি, উন্নতি ধাপে ধাপে হওয়া উচিত। এখন অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলে খেলছে ওরা। এর পর খেলবে অনূর্ধ্ব-২০ ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলে। তার পরে সিনিয়র দলে আসার প্রশ্ন উঠতে পারে। অনেক প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে অতিরিক্ত চাপ নিতে না পেরে। আমি চাই না এই ছেলেগুলো অকালে হারিয়ে যাক।

প্র: এএফসি এশিয়া কাপের মূল পর্বে পৌঁছে গিয়েছে ভারত। নভেম্বর মাসে মায়ানমারের বিরুদ্ধে খেলা। কবে থেকে প্রস্তুতি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে?

স্টিভন: অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ম্যাচটা দেখেই দিল্লি থেকে সাইপ্রাস উড়ে যাব। আপাতত পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে চাই। ফিরে এসে প্রস্তুতির নকশা তৈরি করব।

Stephen Constantine Indian Football Coach india Football Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy