চলতি আইএসএলের প্রথম পর্বে মহমেডানের বিরুদ্ধেই প্রথম পয়েন্ট পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। আধ ঘণ্টার মধ্যে দু’জন ফুটবলার লাল কার্ড দেখলেও বাকি ম্যাচে যে ভাবে ন’জনের ইস্টবেঙ্গল লড়াই করেছিল মহমেডানের সঙ্গে, তা প্রশংসা আদায় করেছিল। ফিরতি পর্বে দুই ক্লাবের পরিস্থিতি হতাশাজনক। ইস্টবেঙ্গল যেখানে প্লে-অফের আশা জাগিয়েও একের পর এক ম্যাচ হেরেছে, সেখানে মহমেডান পয়েন্ট তালিকায় নীচের স্থান প্রায় পাকা করে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার যুবভারতীতে মহমেডানকে হারিয়ে সম্মানরক্ষা করতে চাইছে ইস্টবেঙ্গল।
চেন্নাইয়িনের কাছে হারের পরেই কোচ অস্কার ব্রুজ়ো বলে দিয়েছিলেন, তাঁরা আর প্লে-অফের আশা করছেন না। মহমেডান ম্যাচের আগেও একই কথা বললেন। তবে এ বার পরিস্থিতি আরও খারাপ সমর্থকদের বিক্ষোভের কারণে। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই সেই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় অস্কারকে।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ বললেন, “সমর্থকদের রাগ করার পুরো অধিকার রয়েছে। আমরা সত্যিই ভাল খেলতে পারিনি। এ বার আমাদের উচিত নিজেদের দিকে তাকানো। নিজেদেরই সমালোচনা করা উচিত। বুঝতে হবে, এ ভাবে হারতে থাকলে এই ক্লাবে থাকার যোগ্য নই আমরা। এত বড় ক্লাব কখনওই শেষ স্থানের জন্য লড়াই করতে পারে না। সমর্থকেরা এমন কাজ করেছেন মানে, আমরা নিজেদের কাজটা ঠিক করে করছি না। এই সমালোচনা মেনে নিতেই হবে। আমাদের কাছে বলার মতো কিছু নেই। তবে এটা চাপ নয়, আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। বাস্তব মেনেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
অস্কার আরও বলেছেন, “আমরা এখন যে জায়গায় রয়েছি তাতে আশা করতে পারি না লোকে এসে ফুল উপহার দেবে বা ভাল ভাল কথা বলবে। আমরা এখন সম্মানের জন্য লড়াই করছি। সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। রোজ সকালে উঠে ক্লাবের উন্নতির কথা ভাবি। কিন্তু মাঠের সমস্যাগুলো এড়াতে পারছি না। দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আশা করি এ ভাবেই শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারব। যাঁরা বিনিয়োগ করছেন, যাঁরা সমর্থন করছেন, তাঁদের সবাইকে লজ্জায় ফেলেছি।”
অঙ্কের হিসাবে ইস্টবেঙ্গলের প্লে-অফের আশা বেঁচে থাকলেও অস্কারের নজরে এখন শুধুই সুপার কাপ এবং চ্যালেঞ্জ লিগে ভাল ফল করা। লাল-হলুদ কোচের উত্তর, “এখন প্রথম ছয়ে শেষ করা অসম্ভব। আগের ম্যাচ পর্যন্তও আশা ছিল। আমরা এখন পয়েন্ট তালিকায় উপরের দিকে শেষ করার চেষ্টা করতে পারি। যদিও এটা জানি, প্রথম ছয়ে শেষ না করলে আপনি ১০, ১১, ১২ যেখানেই শেষ করুন তার কোনও অর্থ নেই। এখন আমাদের সামনে সুপার কাপ, চ্যালেঞ্জ লিগ রয়েছে। সেখানে ভাল ফল করতে চাই আমরা। তাই আমাদের আশা এখনও বেঁচে রয়েছে।”
শনিবারও জিকসন সিংহ এবং রিচার্ড সেলিসকে অনুশীলন করতে দেখা যায়নি। সাইডলাইনে বসে রিহ্যাব করলেন। অনুশীলন করেননি নাওরেম মহেশও। তাঁর পায়ে আইস প্যাক বাঁধা ছিল। রবিবার রক্ষণে আনোয়ার আলি এবং হেক্টর ইয়ুস্তেকে রাখতে পারেন অস্কার। লালচুংনুঙ্গা নির্বাসিত থাকায় খেলতে পারেন মহম্মদ রাকিপ। বাঁ দিকে খেলবেন নিশু কুমার।
গোল করার ভার থাকছে দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস এবং রাফায়েল মেসি বোউলির উপরেই। দু’জনকেই শুরু থেকে দেখা যেতে পারে। বাঁ প্রান্তে মহেশের জায়গায় ডেভিড লালানসাঙ্গাকে খেলাতে পারেন অস্কার।
আরও পড়ুন:
চেন্নাইয়িনের কাছে হারের পর দলের একটা বদল হঠাৎ করেই চোখে পড়েছে অস্কারের। নিজেই বললেন, “এখন আমরা অনেক বেশি নিজেদের দিকে নজর দিচ্ছি। প্রতিপক্ষকে নিয়ে বেশি করে ভাবছি, ওদের কৌশল ভেঙে ম্যাচ জেতার পরিকল্পনা তৈরি করছি। তবে আগের ম্যাচে যা হয়েছে তার জন্য আমি লজ্জিত।”
প্রথম বার সাংবাদিকদের সামনে আসা মেসি বোউলির গলায় কিঞ্চিৎ অনুযোগ। তিনি বললেন, “যে কোনও দলে যোগ দেওয়ার পরে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। তবে ইস্টবেঙ্গলে সেই সময়টুকুও পাইনি। তাতে অসুবিধা নেই। আমরা পেশাদার। সব ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দলের কথা মাথায় রেখে পারফর্ম করব। সবার আগে দলের কথা ভাবতে হবে।”