ব্রাজিলের বিরুদ্ধে গোলের নীচে বার বার পাহাড় হয়ে দাঁড়ালেন লিভাকোভিচ। ছবি: রয়টার্স
জাপানের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দলের ত্রাতা। তিনটি শট বাঁচিয়ে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছিলেন ডমিনিক লিভাকোভিচ। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে আরও এক বার পাহাড় হয়ে দাঁড়ালেন ক্রোয়েশিয়ার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার গোলরক্ষক। ১২০ মিনিটের খেলায় তাঁকে এক বারই মাত্র পরাস্ত করতে পারলেন নেমাররা। টাইব্রেকারে আবার জাপান ম্যাচের ছবি দেখা গেল। আরও এক বার দলকে জেতাতে বড় ভূমিকা নিলেন তিনি। ব্রুনো পেটকোভিচ যদি গোল করে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সমতা ফেরান, তা হলে ক্রোয়েশিয়াকে তত ক্ষণ খেলায় রাখলেন লিভাকোভিচ। নইলে ব্রাজিলের ঝড়ে অনেক আগেই উড়ে যেতেন লুকা মদ্রিচরা।
প্রথমার্ধে ক্রোয়েশিয়ার গোল লক্ষ্য করে পাঁচটি শট মেরেছিল ব্রাজিল। কোনও শট থেকেই গোল হয়নি। বার বার নিজের শরীর ব্যবহার করে সেই সব বল আটকে দিয়েছেন লিভাকোভিচ। ব্রাজিলের ফুটবলারদের দেখে বোঝা যাচ্ছিল, গোল করতে না পেরে কতটা হতাশ হয়ে পড়ছেন তাঁরা। কখনও ডান পায়ে, কখনও হাতে, কখনও বা বুকে। একের পর এক বল আটকেছেন লিভাকোভিচ। দ্বিতীয়ার্ধেও সেই একই ছবি। চারটি গোল করতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু একটিও হয়নি।
অতিরিক্ত সময়ে ক্রোয়েশিয়ার গোল লক্ষ্য করে আরও পাঁচটি শট মারে ব্রাজিল। তার মধ্যে নেমারের গোল ছাড়া বাকি চারটি শটও বাঁচিয়ে দেন তিনি। টাইব্রেকারে মদ্রিচের কাছে সুযোগ ছিল, কারা প্রথম পেনাল্টি মারবে সেটা ঠিক করার। বিশ্বকাপে শেষ সাতটি টাইব্রেকারে যে দল প্রথমে শট মেরেছে তারা হেরেছে ছ’বার। তার পরেও নিজেরা প্রথম শট মারতে যায় ক্রোয়েশিয়া। কারণ, গোলরক্ষকের উপর ভরসা ছিল তাদের। মদ্রিচরা চেয়েছিলেন প্রথম শটে গোল করে এগিয়ে যেতে। সেটাই হয়েছে। রদ্রিগোর শট বাঁচিয়ে দেন লিভাকোভিচ। তাঁর চোখ-মুখ বলে দিচ্ছিল, কতটা আত্মবিশ্বাস আছে তাঁর মধ্যে। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই দলকে সেমিফাইনালে তুললেন লিভাকোভিচ।
পরিবারের সবাই শিক্ষিত। বাবা দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী। ঠাকুরদা চিকিৎসক, ঠাকুমা শিক্ষক। কিন্তু লিভাকোভিচ ছোট থেকেই ফুটবলের ভক্ত। ইকের ক্যাসিয়াস, ড্যানিয়েল সুবাসিচ তাঁর আদর্শ। পরিবার অবশ্য সব সময় পাশে থেকেছেন লিভাকোভিচের। স্বপ্ন পূরণে তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন বাবা, মা।
তবে জাতীয় দলের জার্সিতে কেরিয়ারের শুরুটা ভাল হয়নি লিভাকোভিচের। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রথম ক্রোয়েশিয়া শিবিরে ডাক পান তিনি। পরের বছর চিন কাপে চিলির বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তাঁর। সেই ম্যাচে টাইব্রেকারে বেশ কিছু ভুল করেছিলেন তিনি। তাঁর বগলের তলা দিয়ে বল গোলে চলে গিয়েছিল। লিভাকোভিচের ভুলে ম্যাচ হারে ক্রোয়েশিয়া। সেই গোলরক্ষকই এ বার হয়ে উঠলেন দেশের নায়ক।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপেও দলের সঙ্গে ছিলেন লিভাকোভিচ। কিন্তু নিয়মিত সুযোগ পেতেন না। লভ্রে কালিনিচের খারাপ ফর্মের জন্য ২০২০ সালের ইউরো কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হয়ে যান তিনি। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ছিলেন সুবাসিচ। তিনি সে বার টাইব্রেকারে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল ও কোয়ার্টার ফাইনালে দলকে জিতিয়েছিলেন। সেই কাজ এ বার করলেন তাঁকে আদর্শ মেনে চলা লিভাকোভিচ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy