Advertisement
E-Paper

যাতায়াত, গরম, উচ্চতা! ফুটবল বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ হতেই চিন্তায় অনেক বড় দেশ, কারা বেশি চাপে?

শুক্রবার হয়েছিল বিশ্বকাপের গ্রুপবিন্যাস। অনেক বড় দেশই হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল নিজেদের গ্রুপে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল পড়ায়। শনিবার সূচি প্রকাশ্যে আসতেই তাদের অনেকে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। কেন?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:২২
football

ফিফা বিশ্বকাপের ট্রফি। ছবি: সমাজমাধ্যম।

শুক্রবার হয়েছিল বিশ্বকাপের গ্রুপবিন্যাস। অনেক বড় দেশই হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল নিজেদের গ্রুপে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল পড়ায়। তবে শনিবার সূচি প্রকাশ্যে আসতেই তাদের অনেকে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। পরের বছর ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলা বেশির ভাগ দলের কাছে এখন প্রধান চিন্তা— ম্যাচের মাঝে যাতায়াত, আমেরিকার গরম এবং মেক্সিকোর উচ্চতা। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, সহজ গ্রুপ মানেই কাজ সহজ হবে, এমন নয়।

শুক্রবার গ্রুপবিন্যাসের পর হাসিমুখে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল স্পেনের কোচ লুই দে লা ফুয়েন্তেকে। তাদের গ্রুপে উরুগুয়ে এবং কিছুটা সৌদি আরব বাদে অপর প্রতিপক্ষ কেপ ভার্দে। অর্থাৎ খুব একটা চাপ নেই। ক্যামেরা ঘোরাতেই ধরা পড়ছিল তাঁর হাসিমুখ। তবে বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করতে বসলে নিঃসন্দেহে তাঁর হাসি উবে যাবে। তারা দু’টি ম্যাচ খেলবে হবে আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বে আটালান্টায়, আপ্পালাচিয়ান পর্বের কোলে। তাপমাত্রা থাকবে ৩৩-৩৫ ডিগ্রি। ঘন ঘন বৃষ্টি হতে পারে। তবে স্টেডিয়ামে ছাদ ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় কিছুটা সুবিধা হতে পারে।

সমস্যা হবে তার পরে। আটালান্টায় এক সপ্তাহ থাকার পর স্পেন যাবে মেক্সিকোর গুয়াদালারারাতে, যা ২৮০০ কিলোমিটার দূর এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের থেকে ১৭০০ মিটার উঁচুতে। আলাদা টাইম জ়োন, হালকা বাতাস এবং পুরোপুরি উপক্রান্তীয় জলবায়ু। সেটা ভেবেই ফুয়েন্তে বলেছেন, “আমার সবচেয়ে চিন্তা ম্যাচের মাঝে যাতায়াত নিয়ে। তিন-চার দিন অন্তর হাজার হাজার কিলোমিটার যাত্রা করতে হবে আমাদের।”

সৌদি আরব ম্যাচ খেলার পরই মেক্সিকো যেতে হবে স্পেনকে। যাতায়াতের সময় বাদ দিয়েও অনুশীলনের জন্য মাত্র তিন দিন থাকবে তাদের হাতে। মার্সেলো বিয়েলসার প্রশিক্ষণাধীন উরুগুয়ের বিরুদ্ধে গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ খেলতে হবে তাদের। সন্ধ্যায় ম্যাচ হওয়ায় গরম থেকে বাঁচবে তারা। তবে এই সময়ই বাতাস হালকা হয়ে যায়। যারা হারবে, তাদের রাউন্ড অফ ৩২-এর ম্যাচ খেলতে আবার আমেরিকার মায়ামিতে যেতে হবে।

বোঝাই গিয়েছে, বিশ্বকাপ জিততে গেলে শুধু মাঠের নয়, মাঠের বাইরের সমস্যাগুলিকেও হারাতে হবে। যে সব দেশগুলিকে মেক্সিকোয় খেলতে হবে তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মেক্সিকোর তিনটি মাঠে খেলা হবে। তিনটি মাঠেরই আলাদা আলাদা চরিত্র। সবচেয়ে কঠিন রাজধানীর অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে খেলা। এই মাঠেই ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল করেছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। এই মাঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ মিটার উচ্চতায়। নতুন করে সাজানোর আগে মেক্সিকো সব হোম ম্যাচ খেলত এই মাঠেই। গত পাঁচ দশকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে এই মাঠে মাত্র দু’টি ম্যাচ হেরেছে মেক্সিকো। বাতাস হালকা হওয়ার কারণে বল মাঝেসাঝেই অস্বাভাবিক বাঁক নেয়। আমেরিকার গোলকিপার টিম হাওয়ার্ড এই মাঠে ফুটবলকে তুলনা করেছিলেন ‘সসার’-এর সঙ্গে। তাঁর কথায়, “যে কোনও গোলকিপারের পক্ষে এ ধরনের মাঠে খেলা কঠিন।” পরিবেশও উত্তপ্ত থাকে।

মেক্সিকোর তৃতীয় মাঠ মন্টেরে অতটা উঁচুতে নয়। তবে সেই মাঠ আমেরিকা-মেক্সিকোর সীমান্তে অবস্থিত। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গরম এই মাঠেই থাকবে। মন্টেরেতে খুব একটা বৃষ্টি হয় না। বিশ্বকাপের সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছতে পারে। তাপপ্রবাহও দেখা যেতে পারে।

সবচেয়ে সুবিধা পাওয়া যাবে কানাডায়। সে দেশের দু’টি মাঠ ভ্যাঙ্কুভার এবং টরন্টো কম উচ্চতায় অবস্থিত। খুব গরম বা বৃষ্টি কোনওটিই হয় না। আমেরিকার ১২টির মধ্যে ১১টি মাঠেই ছাদ ঢাকার ব্যবস্থা আছে। ফলে সেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বাকি মাঠগুলিতে গরম নির্ভর করছে কোন সময়ে খেলা হচ্ছে তার উপর। যদি দুপুরে খেলা হয় এবং সেখানে ইউরোপের কোনও দেশ খেলে, তা হলে কাজ সবচেয়ে কঠিন। আমেরিকার পশ্চিম সান ফ্রান্সিসকোতে গরম হলেও আর্দ্রতা কম থাকবে। ক্লাব বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখে যদি আন্দাজ পাওয়া যায়, তা হলে কোচেদের চিন্তা বাড়তে বাধ্য। ইংল্যান্ডের কোচ টমাস টুখেল তো বলেই দিয়েছেন, পরিবর্ত খেলোয়াড়দের ডাগআউটে বসতেই দেবেন না। তাদের স্টেডিয়ামের ভেতরে রাখা হবে, যাতে ঘেমেনেয়ে আগেই ক্লান্ত না হয়ে যান কেউ। ইংল্যান্ড অবশ্য বস্টন এবং নিউ ইয়র্কের মতো আরামপ্রদ শহরে খেলবে।

বিশ্বকাপে ব্রাজিল প্রথম ম্যাচ খেলবে নিউ ইয়র্কের। সেখান থেকে যাবে ১৩০ কিলোমিটার দূরের ফিলাডেলফিয়ায়। শেষ ম্যাচ খেলবে আরও ১,৯২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যাবে মায়ামিতে। আর্জেন্টিনা গ্রুপে প্রথম ম্যাচটি খেলবে কানসাসে। পরের দু’টি ম্যাচ খেলবে ডালাসে। ফলে মাত্র ৭৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে কেপ ভার্দেকে (৪,৭০০ কিলোমিটার)। এর পরেই রয়েছে উরুগুয়ে (৪,৫০০) এবং স্কটল্যান্ড (৪,২০০)। ভাগ্যবান নরওয়ে। তারা তিনটি ম্যাচ খেলতে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। ফ্রান্সও ফিলাডেলফিয়া, নিউ ইয়র্ক এবং বস্টনের মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে।

অর্থাৎ, সূচি মানেই শুধু প্রতিপক্ষের নাম আর স্টেডিয়াম নয়, দেশগুলিকে ভাবতে হবে আরও অনেক কিছু নিয়ে।

FIFA World Cup 2026 Brazil Football Argentina Football Spain Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy