আইএসএল নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে গত ৭ নভেম্বরই অনির্দিষ্টকালের জন্য অনুশীলন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও ইন্টার কাশী। এ বার কেরল ব্লাস্টার্স এফসিও একই পথে হাঁটল। তবে তারা অনুশীলনই শুধু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করেনি, ফুটবলারদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই অবস্থায় কেরল ব্লাস্টার্সের অধিনায়ক আদ্রিয়ান লুনা ভারতীয় ফুটবলের দুরবস্থা দেখে ইনস্টাগ্রামে বার্তা দিয়েছেন, “দেশের ফুটবল বর্তমানে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। যে সংকটের ভয়াবহ মাত্রা আমরা হয়তো এখনও ঠিক ভাবে অনুধাবন করতে পারছি না। ধৈর্য্য এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। ভারতের ফুটবল ভক্তদের উদ্দেশে জানাচ্ছি, আমাদের অবিলম্বে এই সংকট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বার করতে হবে।” উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্ঘনও। তিনি সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সন্দেশ বলেছেন, “ফুটবলের কোটি কোটি ভক্ত, ফুটবলার, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ সকলেই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ভারতীয় ফুটবলের সমগ্র পরিকাঠামো ও পরিবেশ ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক ফুটবলারের বেতন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।“
প্রসঙ্গত সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রাক্তন বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাওয়ের পর্যবেক্ষণে আইএসএলের জন্য সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের তরফে দরপত্র প্রকাশ করেছিল একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও সংস্থা দরপত্র জমা না দেওয়ায় সঙ্কটে আইএসএলের ভবিষ্যৎ। চব্বিশ ঘণ্টা আগেই দরপত্র পর্যবেক্ষণ কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন ভারতের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তারা। প্রাক্তন বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাও আইএসএলের জন্য কোনও সংস্থা দরপত্র জমা না দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই তাঁর রিপোর্ট জমা দেবেন সর্বোচ্চ আদালতে। ফেডারেশনও আইনি পরামর্শ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। আইনি জটিলতায় আইএসএল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কী আইনি জটিলতা? ফেডারেশন কর্তাদের দাবি, আইএসএলের জন্য কোনও সংস্থার দরপত্র জমা না দেওয়ার প্রধান কারণ হল সংশোধিত গঠনতন্ত্রের একাধিক নিয়ম। একই মত আইএসএলের আয়োজক ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলেপেন্ট লিমিটেডের (এফএসডিএল) কর্তাদেরও। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাক্তন বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাও রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কি ফের নতুন করে দরপত্র প্রকাশের নির্দেশ দেবে? যদি দেয় তা হলেও কি কোনও সমস্যার সমাধান হবে? ২০১৪ সাল থেকে আইএসএল আয়োজন করে আসা কর্তারা মনে করছেন, ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে সংশোধন না করলে কোনও সংস্থাই দরপত্র জমা দেবে না। কেন? তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘‘সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আইএসএলের আয়োজকদের কোনও ক্ষমতাই থাকবে না। কারণ, যে সংস্থাই আইএসএল আয়োজন করুক না কেন, পরিচালন সমিতিতে তাদের মাত্র এক জন সদস্যই থাকতে পারবেন। অথচ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে থাকবেন দু’জন। কেন কেউ ১৫ বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে করতে রাজি হবে? এত বিপুল অর্থ বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি। কিন্তু ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, পাঁচ বছর অন্তর চুক্তি নবীকরণ করতে হবে।’’
এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ফেডারেশনের কর্তারাও। তাঁরাও মনে করছেন, নিয়ম কিছুটা নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। আইএলএলের ক্লাবগুলির উদাহরণ দিয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, বিনিয়োগকারীদের কাছেই রয়েছে সিংহভাগ শেয়ার। অথচ আইএসএলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো হচ্ছে। ফেডারেশনের কাছেই থাকবে বেশি শেয়ার। ফলে কোনও সংস্থাই আগ্রহী হবে না বিনিয়োগে।
আইএসএলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই সোমবার থেকে সুপার কাপ সেমিফাইনালের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলে। তবে কোচ অস্কার ব্রুসো ও সাউল ক্রেসপোর কলকাতায় ফেরার কথা মঙ্গলবার। শেষ চারে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ পঞ্জাব এফসি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)