গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মোহনবাগানের নির্বাচন ঘিরে যে উত্তাপ চড়ছিল, তা সমাপ্ত হল সোমবার। সচিব পদে মনোনয়ন জমা দিলেন সৃঞ্জয় বসু। এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ তিনি সচিব পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার আগেই ক্লাবে চলে এসেছিলেন দেবাশিস দত্ত। তিনি মনোনয়ন দেননি। মনে করা হচ্ছে, তিনি সভাপতি হবেন।
দুই শিবিরের মধ্যে যে সমঝোতা হতে পারে, এটা কয়েক দিন ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। নিজেদের সমর্থনে সৃঞ্জয় এবং দেবাশিস যে সব নির্বাচনী সভা করছিলেন, সেখানে একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ চলে যাচ্ছিল ব্যক্তিগত পর্যায়ে। অনেকের বক্তব্য, রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের পরামর্শেই দু’জনের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। যদিও পরে সাংবাদিক বৈঠকে দেবাশিস এই প্রসঙ্গে বলেন, “একেবারেই নয়। মোহনবাগান ক্লাব সমাজের সবচেয়ে বড় প্রতিচ্ছবি। এই ক্লাবের সঙ্গে প্রচুর রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যুক্ত রয়েছেন। কাউকে রাজনৈতিক- অরাজনৈতিক হিসাবে দেখতে চাই না। আমাদের কাছে সবাই মোহনবাগানি।”
সমঝোতার তত্ত্ব অনেকেই মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, কিসের সমঝোতা? দেবাশিস সচিব পদে ছিলেন, তিনি সচিব পদেই থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সেই পদ হারাতে হল। উল্টে যিনি কোথাও ছিলেন না, সেই সৃঞ্জয় সচিব হয়ে গেলেন।
সৃঞ্জয় বলেন, “আমার মনে হয় সব জায়গায় গণতন্ত্র থাকা দরকার। এ বার প্রচুর সদস্যের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা জানতে পেরেছি। সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এখন গণতন্ত্র না থাকলে সদস্যদের সঙ্গে যোগসূত্রটাই থাকে না। অনেকেই বলছেন কেন নির্বাচন হল না। কিন্তু সদস্যদের সঙ্গে সংযোগটা তো থাকতে হবে। আমরা বুঝেছিলাম লড়াই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কোথাও সেটায় লাগাম দেওয়া উচিত। আগেও একসঙ্গে কাজ করেছি। আলাপ-আলোচনা করেই সমস্যা মিটেছে।”
সোমবার দেবাশিসকে হাসতে হাসতে মোহনবাগান ক্লাবে ঢুকতে দেখা যায়। সাংবাদিক এবং সদস্য-সমর্থকদের সঙ্গে মজাও করেন। ২০ মিনিট পরে ক্লাবে ঢোকেন সৃঞ্জয়। তিনি মনোনয়ন দিতে যাওয়ার সময় পাশেই ছিলেন দেবাশিস। দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয়। মজা করে হাসতেও দেখা যায়।
মোহনবাগানে এ দিনই ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ দিন। সমঝোতা আগেই হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ক্লাবে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তাঁরা ক্লাবের আশপাশেই ছিলেন।
মোহনবাগান ক্লাবে সভাপতি পদে নির্বাচন হওয়ার রীতি নেই। তাই দেবাশিসকে কোনও মনোনয়ন জমা দিতে দেখা যায়নি। সৃঞ্জয় যদি সচিব পদে নির্বাচিত হন তা হলে তাঁর নেতৃত্বে একটি কার্যকরী কমিটি তৈরি হবে। সেই কমিটি দেবাশিসকে নতুন সভাপতি হিসাবে বেছে নেবে। অর্থাৎ স্বপনসাধন (টুটু) বসু আর সভাপতি হচ্ছেন না। নতুন কার্যকরী কমিটি বেছে নেবে সহ-সভাপতিদেরও।
সোমবার মোট ২২টি পদের জন্য মনোনয়ন দাখিল করেন সদস্যেরা। জমা পড়া মনোনয়নপত্রগুলি খতিয়ে দেখা হবে ১০ এবং ১১ জুন। কোনও প্রার্থী যদি মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চান তা হলে ১২ এবং ১৩ জুন সেটা করতে পারবেন। তার পরেও একটি পদের জন্য একাধিক প্রার্থী থাকলে ভোট হবে।
এ দিন যে যে পদে মনোনয়ন জমা পড়েছে তা হল: সচিব পদে সৃঞ্জয়, সহ-সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কোষাধ্যক্ষ সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্থ-সচিব সুরজিৎ বসু, মাঠ-সচিব শাশ্বত বসু, ফুটবল-সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রিকেট-সচিব সম্রাট ভৌমিক, হকি-সচিব শ্যামল মিত্র, টেনিস-সচিব সিদ্ধার্থ রায়, যুব ফুটবল-সচিব শিল্টন পাল। কর্মসমিতির পদে মনোনয়ন দিয়েছেন মুকুল সিন্হা, সোহিনী মিত্র চৌবে, সোমেশ্বর বাগুই, কাশীনাথ দাস, দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্ত ঘোষ, দেবজ্যোতি বসু, রঞ্জন বসু, পার্থজিৎ দাস, সঞ্জয় মজুমদার এবং অনুপম সাহু।
আরও পড়ুন:
-
টুটু’দা মোহনবাগানের সচিব হলে আমি ভোট লড়ব না, কিন্তু ওঁকে লিখিত দিতে হবে: দেবাশিস, উনি জলঘোলা করছেন: সৃঞ্জয়
-
বাগানে ফিরছে ‘বসু পরিবার’, নবান্ন-সঙ্কেতে সচিবের পদে সৃঞ্জয়ের প্রত্যাবর্তন কার্যত নিশ্চিত
-
সবুজ-মেরুন ভোটে ‘দুয়ারে মোহনবাগান’ নিয়ে হাজির দেবাশিস! ‘শ্রী’যুক্ত প্রতিশ্রুতিতে মুখ্যমন্ত্রীর নামকরণের ছোঁয়া
-
মোহন-ঐতিহ্যের দখল নিতে চায় দু’পক্ষই, বাগানের ভোটে তরজা শুরু শ্যামপুকুরের সেনবাড়ি নিয়ে
-
বাগানে শুধু জোড়াফুলেরই চাষ, শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের নির্বাচনে যুযুধান শাসক তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠী, দ্বন্দ্ব-আঁচে তপ্ত বসুবাড়ি!
পরে সৃঞ্জয়ের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন দেবাশিস। সেখানে তিনি বলেন, “মোহনবাগান ক্লাবের ভালর জন্যই দুই পক্ষ নিজেদের মতো করে লড়াইয়ে নেমেছিল। তবে এমন কিছু ঘটনা হয়েছে যা মোহনবাগানের ঐতিহ্যের সঙ্গে মেলে না। দু’পক্ষের ক্ষেত্রেই হয়েছে। সৃঞ্জয় আমার অত্যন্ত ভাল বন্ধু। একসঙ্গে বহু কাল কাজ করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে দু’জনে বৈঠকে বসেছি। আমি সৃঞ্জয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। ও-ও মোহনবাগানের স্বার্থের কথা ভেবেছে, আমিও তাই। নতুন কমিটি মোহনবাগানকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।”
তাঁর সংযোজন, “আজকের পর থেকে এই পক্ষ-ওই পক্ষ বলে কিছু থাকল না। আমরা একটাই দল, মোহনবাগান। সকলে একসঙ্গে মিলে কাজ করব।”