Advertisement
E-Paper

টুটু’দা মোহনবাগানের সচিব হলে আমি ভোট লড়ব না, কিন্তু ওঁকে লিখিত দিতে হবে: দেবাশিস, উনি জলঘোলা করছেন: সৃঞ্জয়

দেবাশিস দত্তের খোলাখুলি প্রস্তাব, টুটু বসু মোহনবাগানের সচিব হলে তিনি ভোটে লড়বেন না। একটি শর্ত দিয়েছেন তিনি। দেবাশিসের প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন সৃঞ্জয় বসু। ‘শান্তিচুক্তি’ মানতে নারাজ তিনি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ২০:৪৮
Debasish Dutta says he will not contest Mohun Bagan election if Tutu Bose wishes to take charge dgtl

(বাঁ দিক থেকে) টুটু বসু, দেবাশিস দত্ত, সৃঞ্জয় বসু। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

টুটু বসু মোহনবাগানের সচিব হলে তিনি ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়াবেন। বৃহস্পতিবার খোলাখুলি প্রস্তাব দিলেন মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত। তবে সঙ্গে শর্ত জুড়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘টুটু’দা যদি ক্লাবের সচিব পদে আসতে চান, আমি নিজে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব। কিন্তু ছ’মাস পর উনি যদি নিজের ছেলেকে (সৃঞ্জয় বসু) চেয়ারে বসিয়ে দেন, তা হলে হবে না। সেটা ওঁকে লিখিত দিতে হবে।’’

প্রত্যাশিত ভাবেই দেবাশিসের প্রস্তাব সৃঞ্জয় উড়িয়ে দিয়েছেন। উল্টে তাঁর অভিযোগ, ‘‘নির্বাচনের মুখে জলঘোলা করে এটা ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।’’ পাশাপাশি মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বলছেন, ‘‘আমার দল (গ্রুপ) আমাকে সচিব পদে প্রার্থী করেছে। গত দু’মাস ধরে আমরা প্রচার করছি। এখন উনি এ সব বলে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে চাইছেন!’’

সৃঞ্জয়ের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, এই ‘শান্তিচুক্তি’ তিনি মানতে নারাজ। ফলে মোহনবাগান নির্বাচন ঘিরে যে চাপানউতর এবং তরজা চলছে, তা ভোট পর্যন্ত জারি থাকবে।

Debasish Dutta says he will not contest Mohun Bagan election if Tutu Bose wishes to take charge

মোহনবাগানের নির্বাচনে প্রচার-পুস্তিকার প্রকাশে (বাঁ দিক থেকে) মানস ভট্টাচার্য, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস দত্ত, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

আগামী জুন মাসে মোহনবাগানের নির্বাচন ঘিরে ময়দান সরগরম। সচিব পদে লড়ছেন দেবাশিস এবং সৃঞ্জয়। যিনি টুটুর জ্যেষ্ঠ পুত্র। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে দেবাশিস বলেন, ‘‘আমাকে এই ক্লাবে টুটু’দা এনেছিলেন, অঞ্জনদা (আর এক প্রাক্তন সচিব প্রয়াত অঞ্জন মিত্র) গড়ে তুলেছিলেন। দু’জনের আশীর্বাদ ছিল বলেই আজ যতটুকু হওয়ার হতে পেরেছি।’’

দেবাশিসকে প্রশ্ন করা হয়, যদি টুটু-অঞ্জনের নাম এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করতে পারেন, তা হলে নির্বাচনের প্রচারপত্রে শুধু দ্বিতীয় জনের ছবি কেন? টুটুর ছবি নেই কেন? দেবাশিসের জবাব, ‘‘টুটু’দা সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। কোনও এক জনের পক্ষে প্রচার করবেন বলেছেন। তাই ওঁর ছবি ব্যবহার করতে পারিনি। ওঁর অনুমতি না নিয়ে এটা করা যায় না।’’

টুটুর সমালোচনার জবাব

মোহনবাগানের নির্বাচন ঘিরে বসু পরিবারে ভাঙনের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। শাসক দেবাশিসের শিবিরের সঙ্গে রয়েছেন সৃঞ্জয় বসুর ভাই সৌমিক বসু। তিনি মোহনবাগান ক্লাবের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। একটি অনুষ্ঠানে সৌমিক দেবাশিসের হয়ে প্রচারও করেছেন। একেবারে সাংবাদিক সম্মেলন করে যার প্রতিক্রিয়া দিতে হয়েছিল টুটুকে। দেবাশিসের নাম না করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ও মিত্র পরিবারকে (মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব অঞ্জন মিত্র) ধ্বংস করেছে। আমার আর অঞ্জনের সম্পর্ক নষ্ট করেছে। অঞ্জনের মেয়ে সোহিনীকে আমি কো–অপ্ট মেম্বার করেছিলাম। ও আপত্তি তুলেছিল। আমি তা শুনিনি। আমার পরিবারেও ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই চক্রান্ত ধরে ফেলেছি। ও লোভী। আমি এখনও বেঁচে আছি। আমার পরিবারে আমি এখনও বটবৃক্ষ। আমি বেঁচে থাকতে সংসারে ফাটল ধরতে দেব না। নির্বাচনে সৃঞ্জয় বনাম সৌমিক লড়াই হবে না।’’

এর জবাবে দেবাশিস বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমার আর টুটু’দার লড়াই হতে পারে না। উনি অভিভাবক। বাবা-মা তো সন্তানকে বকতেই পারেন। সেই অধিকার আছে। কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস উনি ব্যক্তিগত জায়গা থেকে ওই কথাগুলো বলেননি। কারও চাপে বলেছেন। ওঁর পরিবার যখন ২০১৪ সালে বিপদে পড়েছিল, তখন পাশে আমি আর ওঁর ছোট ছেলে (সৌমিক) ছিল।’’

সেনবাড়ির বিতর্ক

মোহনবাগানের নির্বাচনে আলোচনায় চলে এসেছে উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যশালী সেনবাড়ি। সবুজ-মেরুনের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এই বাড়িতে ক্লাবের দফতর করার ইচ্ছা নির্বাচনে যুযুধান দুই পক্ষেরই। সেই নিয়েই শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর তরজা তুঙ্গে। যার কথা বৃহস্পতিবার সকালেই আনন্দবাজার ডট কমে প্রকাশিত হয়েছিল।

মঙ্গলবার বাগবাজারের একটি প্রচারসভায় দেবাশিস বলেন, তাঁরা সেনবাড়ির একতলায় মোহনবাগান ক্লাবের একটি দফতর করবেন। এই নিয়ে সৃঞ্জয় দাবি করেছেন, এই উদ্যোগ তাঁরা বেশ কয়েক মাস আগেই নিয়েছিলেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। সৃঞ্জয়ের বক্তব্য, একই কারণে দেবাশিসের পক্ষেও এই কাজ করা সম্ভব নয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যে এই কাজ করা সম্ভব নয়, তা বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বীকার করে নেন দেবাশিস। জানান, সৃঞ্জয়ের কাছে প্রোমোটারের যে চিঠি গিয়েছে, তিনিও সেই চিঠি পেয়েছেন। দেবাশিস বলেন, ‘‘রুইয়া গ্রুপ নতুন আবাসন তৈরির কাজ করছে। সংস্থার কর্ণধার এখন বিদেশে। ফিরলে ওঁর সঙ্গে কথা হবে। সেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা হবে। শেষ পর্যন্ত হয়তো কলকাতা পুরসভার কাছেও আমাদের যেতে হবে। সময় লাগতে পারে।’’

এখানেই না থেমে দেবাশিস বলেন, ‘‘সৃঞ্জয়ও একই উদ্যোগ নিয়েছে। ও যদি সচিব নির্বাচিত হয়, তা হলে আমি ওকে সাহায্য করব। আমি যদি সচিব পদে আবার নির্বাচিত হই, চাইব সৃঞ্জয় এই কাজে আমারা পাশে থাকুক। পরিবার তো একটাই— মোহনবাগান।’’

নির্বাচনে রাজনীতি

খাতায়কলমে লড়াই দেবাশিস বনাম সৃঞ্জয়ের। কিন্তু এই দু’জনের লড়াই জেলায়-জেলায়, পাড়ায়-পাড়ায় রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে দিয়েছে। নির্বাচন জুন মাসে। কিন্তু প্রচারসভা হচ্ছে প্রায় সাধারণ নির্বাচনের ঢঙে। দু’পক্ষ নয় নয় করে প্রায় ৬০টি সভা করে ফেলেছে। দুই শিবিরের মঞ্চেই দেখা দিয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে পুরপিতা, বিধায়ক, এমনকি মন্ত্রীরাও!

খেলা এবং রাজনীতির ময়দানে গুঞ্জন, সৃঞ্জয়ের হয়ে আসরে নেমেছেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, প্রয়াত মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মেয়ে শ্রেয়া পাণ্ডে, বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাদা স্বাধীন মল্লিক। দেবাশিসের পক্ষে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, মন্ত্রী অরূপ রায় এবং প্রদীপ মজুমদার, তৃণমূলের সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই বিধায়ক খোকন দাশ, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং সাংসদ তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।

এ সত্ত্বেও এই নির্বাচনে রাজনীতির যোগ আছে মানতে চাননি দেবাশিস। বলেন, ‘‘যাঁদের বিভিন্ন মঞ্চে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা রাজনীতির লোক হতে পারেন, কিন্তু প্রত্যেকের সঙ্গেই মোহনাবাগানের কোনও না কোনও যোগ রয়েছে। কেউ সদস্য, কেউ কার্যকরী সমিতিতে আছেন, কেউ সমর্থক। ফলে ক্লাবের ভোটে তাঁরা যে কোনও একটা পক্ষ নেবেন, এটা তো স্বাভাবিক। এখানে রাজনীতির রং লাগানো উচিত নয়।’’

অনেকেই বলছেন, উপরওয়ালা (বোঝাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী) যা চাইবেন, তাই হবে। এই নিয়ে দেবাশিস বলেন, ‘‘কোনও উপরওয়ালা নেই। অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলছেন। কিন্তু উনি যদি আমাকে না চাইতেন, বলেই দিতেন, তুমি ভোটে দাঁড়িয়ো না। ওঁর সঙ্গে আমার সে রকমই সম্পর্ক। কিন্তু উনি কখনও তা বলেননি। বরং উনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিক বার আমাদের কাজের প্রশংসা করেছেন।’’

দেবাশিসের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য। তিনিও বলেন, ‘‘এই নির্বাচনে রাজনীতির রং লাগাবেন না।’’ অথচ, মানসের পাশে বসে প্রসূন তার কিছু ক্ষণ আগে আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘কেন এই নির্বাচনে এত রাজনীতি হবে? কেন কাউন্সিলরেরা জড়িয়ে পড়বেন? মোহনবাগানের নির্বাচনই বা কেন হবে? সবাই কি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে চলতে পারে না?’’ প্রসূনকে কিছু দিন আগে হাওড়ায় সৃঞ্জয়ের হয়ে প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল। এ দিন তিনি ছিলেন দেবাশিসের পাশে। বলেন, ‘‘দেবাশিস সুন্দর ভাবে ক্লাব চালাচ্ছে। ও বড় বড় কথা বলে না। ওকে ধাক্কা মারবেন না।’’ কয়েক দিনের মধ্যে শিবির বদলানো নিয়ে প্রসূন বলেন, ‘‘আমার কাছে পরিবার একটাই— মোহনবাগান।’’ দেবাশিসের পাশে ছিলেন মোহনবাগানের আর এক প্রাক্তনী সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার টিম দেবাশিস দত্তের পক্ষ থেকে ‘আমরা কী করেছি, কী করতে চাই’ নাম দিয়ে একটি প্রচার-পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে পরিকাঠামো, ক্রীড়া ও ক্লাবের পরিবেশের দিক দিয়ে গত তিন বছরে দেবাশিসের শাসক গোষ্ঠী কী কী করেছে, তার খতিয়ান রয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁরা কী কী করতে চান, সেটাও বলা হয়েছে।

Mohun Bagan Super Giant Tutu Basu Srinjoy Bose Debasish Dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy