Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ঘরের মাঠের চাপ ছাড়া ক্লার্কদের সামনে আর চ্যালেঞ্জ দেখছি না

এ বার লড়াইয়ে নামার পালা অস্ট্রেলিয়া আর পাকিস্তানের। অ্যাডিলেডে আজকের ম্যাচটা কিন্তু গোটা বিশ্বকাপের পরিপ্রেক্ষিতে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। আর জানবেন, ম্যাচটার দিকে তীক্ষ্ন নজর থাকবে গোটা ভারতীয় দলের।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৬
Share: Save:

এ বার লড়াইয়ে নামার পালা অস্ট্রেলিয়া আর পাকিস্তানের। অ্যাডিলেডে আজকের ম্যাচটা কিন্তু গোটা বিশ্বকাপের পরিপ্রেক্ষিতে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। আর জানবেন, ম্যাচটার দিকে তীক্ষ্ন নজর থাকবে গোটা ভারতীয় দলের।

অ্যাডিলেডেই ভারতের কাছে হেরে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল পাকিস্তান। তবে শুরুটা হার দিয়ে হলেও তার পর ক্রমশ উন্নতি করে টুর্নামেন্টে এত দূর চলে এসেছে। আসলে উপমহাদেশের অন্য দলগুলোর মতোই পাকিস্তানিদেরও বিশ্বের এই প্রান্তের আবহাওয়া আর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগল। তবে এখানকার পিচের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার পর ওদের কিন্তু অনেক বেশি জমাট দেখাচ্ছে। অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো প্রথম সারির টিমকে হারানোর পর নিজেদের উপর আস্থা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে মিসবা-উল-হকদের। আর টিমের মধ্যে এই বিশ্বাসটা চারিয়ে গিয়েছে যে, টুর্নামেন্টের সেরা টিমগুলোকে আমরাও হারাতে পারি!

কিন্তু প্রশ্ন হল, অস্ট্রেলিয়ার মতো চ্যাম্পিয়নদের ধরাশায়ী করার গোলাবারুদ কি পাকিস্তানিদের আছে?

অস্ট্রেলিয়া ভয়াবহ প্রতিপক্ষ। টিমটার ভারসাম্য অসাধারণ। যে কারণে ক্রিকেটের সব বিভাগেই ওরা অবিশ্বাস্য রকমের শক্তিশালী। বল হাতেই হোক বা ব্যাট হাতে, টিমে ম্যাচ উইনারদের ছড়াছড়ি। এবং অসম্ভব লড়াকু। তবে আমার মতে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় সম্পদের নাম জেমস ফকনার। আট নম্বরে নামে এবং ম্যাচ জেতানোর আলাদা একটা ক্ষমতা আছে ছেলেটার। চোটের কারণে বিশ্বকাপের আগে কিছু দিন টিমের বাইরে ছিল। ফেরার পর থেকে ওর পারফরম্যান্সে সামান্য ধারের অভাব দেখছি ঠিকই কিন্তু আমি নিশ্চিত, সামনের বড় ম্যাচগুলোয় ও আগের মতোই জ্বলে উঠে খেলার মোড় ঘোরানোয় বড় ভূমিকা নেবে।

অস্ট্রেলিয়ার বোলিংটাও সমান বিপজ্জনক। গভীরতার কোনও অভাব নেই। আমার কাছে মিচেল স্টার্ক এই টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার। নতুন বলে ওর সঙ্গে জনসনের কম্বিনেশনটা পাকিস্তানি ব্যাটিংয়ের টপ-অর্ডারকে বিপদে ফেলতে পারে। তবে আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়াকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতেই হবে-- টিমে ডোহার্টিকে স্পিনার রাখবে না এক জন অতিরিক্ত পেসার নামাবে? আমি মাইকেল ক্লার্ক হলে একজন পেসারকে খেলাতাম। আর মাঝের দশটা ওভার নিজেকে এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে দিয়ে করাতাম। পাকিস্তানিরা স্পিন খেলায় ওস্তাদ। কিন্তু এক জন বাড়তি পেসার খেলালে ওদের লাগাতার চাপে রাখা যাবে।

পাকিস্তানের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা নিজেদের দক্ষতায় আস্থা রাখতে পারার। ডাকসাইটে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ক্ষমতা কি ওরা রাখে? এই টিমটা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ঠিকই। কিন্তু নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়া একেবারে অন্য জাতের বিস্ফোরক টিম। যাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ভাগ্য কিন্তু ঠিক করে দেবে ওদের ব্যাটসম্যানরা। ওরা সরফরাজকে ওপেনিংয়ে তুলে এনে একেবারে ঠিক কাজ করেছে। ছেলেটাও পরিস্থিতি অনুযায়ী দারুণ ভাবে এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিচ্ছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো মশলা কি এই পাকিস্তানি ব্যাটিংয়ে আছে?

গত বছর আবু ধাবি, দুবাই আর শারজার মাঠে টেস্ট সিরিজে ওরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল। কিন্তু এটা পঞ্চাশ ওভারের খেলা। তায় আমিরশাহির মরুশহরগুলোর তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার পিচে খেলা একেবারে অন্য ব্যাপার। ব্যাটিং কন্ডিশন পুরোপুরি আলাদা। সবচেয়ে বড় কথা নকআউট ম্যাচের চাপ। এই অবস্থায় মিসবা-উল-হক, ইউনিস খান, উমর আকমলের মতো ব্যাটসম্যানরা দেশের হয়ে জ্বলে উঠতে পারবে কি?

টিমটা পাকিস্তান বলেই এর উত্তর কারও জানা নেই!

অস্ট্রেলিয়াকে অন্য দিকে কাপের অন্যতম দাবিদার বলেই মনে হচ্ছে। ওদের টিমে সেই গভীরতা আছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলার প্রত্যাশার চাপ মাইকেল ক্লার্করা শেষ পর্যন্ত কতটা সামলাতে পারবে? শেষ যে বার অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ হয়েছিল, সেই ১৯৯২-এ ওরা নকআউট পর্বে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। সেমিফাইনালের আগেই ছিটকে যায়। সেটা ওদের মাথায় ঘুরতে বাধ্য। এই দুশ্চিন্তাটা ঝেড়ে ফেলে খোলা মনে খেলাই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ঘরের মাঠে যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ওরা অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু বিশ্বকাপ একেবারে অন্য মঞ্চ। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলার চাপটা একমাত্র ভারত সফল ভাবে সামলেছিল চার বছর আগে। এ বারের দুই হোম টিমের কেউ সেটা পারবে কি?

জানার জন্য আরও দশটা দিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE