Advertisement
E-Paper

ক্রিকেট খেলছ কেন? বিদ্রুপের জবাব বিশ্বমঞ্চে ম্যাচ জিতিয়ে

উত্তর প্রদেশের আগরায় ছেলেদের সঙ্গে একটি মেয়ে খেলবে, তা ভাবতেই পারতেন না প্রতিবেশীরা। কিন্তু পুনম নাছোড়।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:০২
 সেরা: চার উইকেটের একটি। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে আগ্রাসনের নাম পুনম যাদব। হলেন ম্যাচের সেরাও। গেটি ইমেজেস

সেরা: চার উইকেটের একটি। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে আগ্রাসনের নাম পুনম যাদব। হলেন ম্যাচের সেরাও। গেটি ইমেজেস

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চার উইকেট পেয়েছেন তাঁদের পাড়ার মেয়ে। ভারতকে জিতিয়েছেন। শুক্রবার মধুনগরে তাঁদের বাড়িতে এসে প্রতিবেশীরা বাড়িতে এসে মা মুন্নি দেবীকে মিষ্টিমুখ করিয়ে গেলেন। অথচ এই প্রতিবেশীদের জন্যই এক সময় খেলা বন্ধ হয়ে যেতে চলেছিল পুনম যাদবের। ছেলেদের সঙ্গে একমাত্র মেয়ে হিসেবে তাঁর মেলামেশা পছন্দ করতেন না পাড়ার বড়রা।

কিন্তু পুনম শোনেননি। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল তাঁর। পাড়ার ছেলেরাই ছিল খেলার সঙ্গী। তাই কটু মন্তব্যের পরোয়া না করে নিয়মিত মাঠে যেতেন খেলতে। বন্ধুরা তাঁকে খেলতে না নিলেও রাগ করতেন না। মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে একাই বল করে যেতেন। যখন সুযোগ আসত, প্রমাণ করে দিতেন, বাকিদের চেয়ে তিনি আলাদা। তাই পুনমের বাড়িতে এসে তাঁর মাকে পাড়ার এক দাদা বলেছিলেন, ‘‘আপনার মেয়ে যেন আমাদের সঙ্গে খেলতে না আসে।’’ ভয় পেয়ে মা বলেছিলেন, ‘‘থাক মা, তোকে আর খেলতে হবে না।’’ পুনম তখন বলেছিলেন, ‘‘ছাড়ো তো। ও আমার বলে আউট হয়ে গিয়েছে। তাই তোমাকে এসে এই সব বলেছে।’’

উত্তর প্রদেশের আগরায় ছেলেদের সঙ্গে একটি মেয়ে খেলবে, তা ভাবতেই পারতেন না প্রতিবেশীরা। কিন্তু পুনম নাছোড়। তাঁর বাবা রঘুবীর সিংহ যাদব প্রাক্তন সেনা। বাবার থেকেই শিখেছেন জীবনে হারতে নেই। তাই একাধিক মন্তব্য ধেয়ে এলেও তিনি কান দিতেন না। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মেয়ের সাফল্যের পরে আনন্দবাজারকে পুনমের মা মুন্নি দেবী বলছিলেন, ‘‘ওকে অনেক বারণ করেছি ক্রিকেট খেলিস না। এক বারও কথা শোনেনি। ওর বাবা এখানে থাকত না। তাই ওর দিদি আর আমি পুনমকে সামলাতে পারতাম না।’’

আগরার স্টেডিয়ামের মাঠে একা একাই এক দিন চলে যান পুনম। গিয়ে দেখেন মেয়েরা ক্রিকেট অনুশীলন করছেন। বাড়িতে এসে বাবার কাছে বায়না জুড়ে দেন, তাঁকে সেখানে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু বাবা রাজি ছিলেন না। রঘুবীর সিংহ বলছিলেন, ‘‘আমাদের এখানে মেয়েরা খেলবে, তা প্রতিবেশীরা মানতে পারতেন না। কী করে সবার নির্দেশ এড়িয়ে মেয়েকে ক্রিকেটে ভর্তি করার সাহস পাই বলুন। আমি এখানে থাকতাম না। কর্মসূত্রে বাইরে থাকতে হত।’’ যোগ করেন, ‘‘কিন্তু মেয়ে কিছুতেই শুনবে না। তাই ওকে নিয়ে গেলাম স্টেডিয়াম মাঠে। প্রাক্তন ক্রিকেটার হেমলতা কলা তখন ভারতীয় দলের হয়ে খেলতেন। তিনি আমার মেয়েকে দেখে অবাক। হেমলতার কোচই তখন আমাকে আশ্বাস দেন, ওর মধ্যে ভারতীয় দলের হয়ে খেলার মতো প্রতিভা রয়েছে।’’

এই স্বপ্নই সাহস বাড়ায় পুনমের বাবার। সে দিন যদি কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি না করাতেন মেয়েকে, তা হলে এই দিন হয়তো দেখতে পেতেন না। পুনমের বাবার গলা ভারী হয়ে আসে। বলেন, ‘‘এখন বুঝতে পারি, মেয়েকে যদি ক্রিকেট খেলার অনুমতি না দিতাম, তা হলে আজ এত গর্বিত হতে পারতাম না।’’

এক সময় বিষণ্ণতা গ্রাস করেছিল পুনমকে। জেলার হয়ে খেলার পরে উত্তরপ্রদেশের রাজ্য দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। খেলা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু রঘুবীর মেয়েকে খেলা ছাড়তে দেননি। বলছিলেন, ‘‘ওকে বলেছিলাম, এক বার যখন ক্রিকেট খেলবি ঠিক করেছিস, তখন আর ফিরে আসিস না। ওর কোচ বলেছিলেন মেয়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। তিনি তখন বেঁচে ছিলেন না। তখন মেয়েকে ওর কোচের প্রত্যাশার কথা জানাই। আর ফিরে তাকাতে হয়নি।’’

উত্তরপ্রদেশের হয়ে দুরন্ত পারফর্ম করার পরে তিনি সুযোগ পান মধ্যাঞ্চল দলে। তার পরে রেলওয়েজের হয়েও খেলেন। সেখান থেকেই ডাক পান ভারতীয় দলে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সুযোগ পান তরুণ লেগস্পিনার। সেখান থেকে শুরু নতুন অধ্যায়ের। রঘুবীর বললেন, ‘‘ভারতীয় সমর্থকদের অনুরোধ করব, ওদের আশীর্বাদ করুন। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ নিয়েই যেন অস্ট্রেলিয়া থেকে ওরা ফিরতে পারে।’’

স্কোরকার্ড
ভারত ১৩২-৪(২০)
অস্ট্রেলিয়া ১১৫ (১৯.৫)

ভারত
শেফালি ক সাদারল্যান্ড বো পেরি ২৯•১৫
মন্ধানা এলবিডব্লিউ বো জোনাসেন ১০•১১
জেমাইমা এলবিডব্লিউ বো কিম্মিন্স ২৬•৩৩
হরমনপ্রীত স্টা. হিলি বো জোনাসেন ২•৫
দীপ্তি ন. আ. ৪৯•৪৬
বেদা ন. আ. ৯•১১
অতিরিক্ত ৭
মোট ১৩২-৪ (২০)
পতন: ১-৪১ (মন্ধানা, ৪.১), ২-৪৩ (শেফালি, ৫.৩), ৩-৪৭ (হরমনপ্রীত, ৬.৪), ৪-১০০ (জেমাইমা, ১৫.৬)।
বোলিং: মোিল স্ট্রানো ২-০-১৫-০, এলিস পেরি ৩-০-১৫-১, মেগান সুট ৪-০-৩৫-০, জেস জোনাসেন ৪-০-২৪-২, ডেলিসা কিম্মিন্স ৪-০-২৪-১, অ্যাশলে গার্ডনার ৩-০-১৯-০।

অস্ট্রেলিয়া
হিলি ক ও বো পুনম ৫১•৩৫
মুনি ক রাজেশ্বরী বো শিখা ৬•১২
ল্যানিং ক ভাটিয়া বো রাজেশ্বরী ৫•৮
হেইনস স্টা. ভাটিয়া বো পুনম ৬•৮
গার্ডনার ক ও বো শিখা ৩৪•৩৬
পেরি বো পুনম ০•১
জোনাসেন ক ভাটিয়া বো পুনম ২•৬
সাদারল্যান্ড স্টা. ভাটিয়া বো শিখা ২•৫
কিম্মিন্স রান আউট ৪•৫
স্ট্রানো রান আউট ২•৩
সুট ন. আ. ১•১
অতিরিক্ত ২
মোট ১১৫ (১৯.৫)
পতন: ১-৩২ (মুনি, ৫.৪), ২-৫৫ (ল্যানি‌‌ং, ৮.৩), ৩-৬৭ (হিলি, ৯.৫), ৪-৭৬ (হেইনস, ১১.৩), ৫-৭৬ (পেরি, ১১.৪), ৬-৮২ (জোনাসেন, ১৩.৫), ৭-১০১ (সাদারল্যান্ড, ১৬.৩), ৮-১০৮ (কিম্মিন্স, ১৮.৪), ৯-১১৩ (গার্ডনার, ১৯.২), ১০-১১৫ (স্ট্রানো, ১৯.৫)।
বোলিং: দীপ্তি শর্মা ৪-০-১৭-০, রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় ৪-০-৩১-১, শিখা পাণ্ডে ৩.৫-০-১৪-৩, অরুন্ধতী রেড্ডি ৪-০-৩৩-০, পুনম যাদব ৪-০-১৯-৪।

Poonam Yadav India Australia ICC Women's T20 World Cup Shikha Pandey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy