Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাটিং ও স্পিন শক্তির জন্য এগিয়ে বিরাটরাই

দু’দলের ফাস্ট বোলারদের মধ্যে খুব উপভোগ্য লড়াই হতে চলেছে রবিবারের ওভালে।

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

জেফ থমসন
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ০৪:৩৪
Share: Save:

বিশ্বকাপে এত দেরিতে ভারতের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামাটা বেশ অদ্ভুত। মনে হয় কেউ আশা করেনি। তবে মাঠে নেমে ভক্তদের হতাশ করেনি বিরাট কোহালির দল।

তবু আমি বলব, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নিজেদের দক্ষতার দুই-তৃতীয়াংশ খেলতে পেরেছে ভারত। অবাক হব না যদি দেখি, ওরা নিজেদের সেরা খেলাটা বার করেছে আজ, রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। এটা কিন্তু বিশ্বকাপের বড় ম্যাচ। যারা জিতবে, কাপ অভিযানে অনেক বাড়তি মনোবল পেয়ে যাবে।

দু’দলের ফাস্ট বোলারদের মধ্যে খুব উপভোগ্য লড়াই হতে চলেছে রবিবারের ওভালে। বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলাররা রয়েছে দু’দলে। অস্ট্রেলিয়ার দিকে মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। সঙ্গে নেথান কুল্টার-নাইল। ভারতের হাতে থাকছে যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি। সাউদাম্পটনে প্রথম ম্যাচে শামিকে না খেলিয়ে ভুবনেশ্বরকে নামিয়েছিল ভারত। ওভালে জয়ী দল ভেঙে শামিকে ফেরাতে চাইবে কি না কোহালি, সন্দেহ আছে।

আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানের দিক থেকে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কে এগিয়ে?

আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব, ম্যাচটায় সামান্য হলেও ভারতই এগিয়ে। দু’টো কারণে আমি কোহালিদের এগিয়ে রাখছি। এক) ওদের ব্যাটিং অনেক জমাট। দু’এক জনের উপরে ভরসা করে দাঁড়িয়ে নেই। উপরের দিকের ব্যাটিং বিভাগ খুব শক্তিশালী। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের এক সময় খুব লড়াকু বলা হত। ভারতের বর্তমান প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেই অস্ট্রেলীয় মনোভাব দেখতে পাই আমি। ওরা সহজে হার মানার পাত্র নয়। অধিনায়ক কোহালি নিজে এই আগ্রাসী মনোভাবের নেতৃত্ব দেয়। আর ভুলে গেলে চলবে না, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দারুণ রেকর্ড রয়েছে কোহালির। দুই) ভারতের স্পিন আক্রমণ। পেস বিভাগে দু’দলের মধ্যে তুল্যমূল্য লড়াই হলেও কোনও সন্দেহ নেই, স্পিন-দ্বৈরথে ভারত অনেক এগিয়ে। চহাল আর কুলদীপ মাঝের ওভারগুলোতে যে কোনও প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করে দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সেখানে রয়েছে শুধুই অ্যাডাম জ়াম্পা। তেমন কিছু প্রভাব সৃষ্টি করতে পারছে না। নেথান লায়ন টেস্টে ম্যাচ জেতানো স্পিনার, ওয়ান ডে-র জন্য খুব ভাল নয়।

আমি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের উপরে খুব বেশি ভরসা রাখতে পারছি না। স্টিভ স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নার দলে ফিরেছে। ওরা রানও করেছে। কিন্তু বাকিরা কী করছে? উপরের দিকের ব্যাটিংকে মোটেও জমাট দেখাচ্ছে না অস্ট্রেলিয়ার।

আরও পড়ুন: ‘অস্ট্রেলিয়া শক্তিশালী দল, তবে ভারতই এগিয়ে’

আমার মনে প্রশ্ন জাগছে, স্মিথ-ওয়ার্নার দু’জনে এক সঙ্গে ব্যর্থ হলে বাকিরা যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে তো? বরং বলব, অস্ট্রেলীয় টেলএন্ডারদের মধ্যে একটা নাছোড় মনোভাব আছে। ওরা ব্যাট করতে জানে। কামিন্স ভাল ব্যাট করে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নেথান কুল্টার-নাইল ৯২ করে দিল। কিন্তু রোজ রোজ টেলএন্ডাররা রক্ষা করবে, এমন আশাও করা উচিত নয়।

কোহালিদের নিয়েও বলা হয়েছে ঠিকই যে, ওদের ব্যাটিং বড্ড বেশি দু’তিন জনের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে প্রথম তিন জনের উপরে। রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন, বিরাট কোহালি। কিন্তু আমি এই তত্ত্ব মানি না। আমার মনে হয়, কে এল রাহুল চার নম্বরে যথেষ্ট ভাল নাম। ধোনির অভিজ্ঞতা আছে, হার্দিক পাণ্ড্যর তারুণ্যের স্ফূর্তি আছে। সঙ্গে কেদার যাদবও খেলতে পারে। বিশ্বকাপ কখনও এক জন বা দু’জন তারকার উপর নির্ভর করে জেতা যায় না। সম্পূর্ণ দলগত প্রচেষ্টা চাই। ভারতকে অনেক স্বয়ংসম্পূর্ণ দল মনে হচ্ছে।

আবারও সকলের আলোচনায় যশপ্রীত বুমরা। গত দু’বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজকীয় উত্থান ওর। অ্যাকশনটা অন্য রকম, ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার মতো। চট করে ধরা যায় না, কী বল করতে চলেছে। সঙ্গে এক্সপ্রেস গতি এবং বৈচিত্র। প্রায় সব রকম বল করতে পারে। দুর্দান্ত ইয়র্কার রয়েছে হাতে। ব্যাটসম্যানের মাথা লক্ষ্য করে ছুটে আসা ভয়ঙ্কর বাউন্সার আছে। বুমরা এবং ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই মাথায় রাখবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা শর্ট বলে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কতটা সমস্যায় ফেলছিল। অবাক হব না যদি বুমরাকে দিয়ে কোহালিরও শর্ট বলে আক্রমণ করে অস্ট্রেলিয়ার উপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের।

অস্ট্রেলিয়ার দিক থেকে বুমরার পাল্টা জবাব হতে পারে মিচেল স্টার্ক। গতিতে এগিয়ে স্টার্ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতিয়ে টগবগ করছে। আমি মনে করি, যদি স্টার্ক ফিট থাকে আর নিজের সেরা বোলিংটা করতে পারে, তা হলে ও অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জেতানোর ক্ষমতা ধরে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে বোলারদের বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশের মধ্যে ছিল ভারতের তিন জন। অস্ট্রেলিয়ার শুধু প্যাট কামিন্স। তখন অবশ্য স্টার্ক চোটের জন্য খেলতে পারছিল না। রবিবারের ম্যাচে স্টার্ক শুধু থাকছেই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে অনেক টগবগে অবস্থায় নামবে।

বিশ্বকাপের আগে ভারতে গিয়ে ওয়ান ডে সিরিজ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অনেকে নিশ্চয়ই বলার চেষ্টা করবেন, স্মিথ-ওয়ার্নারকে ছাড়াই যদি ভারতকে তাদের ঘরে গিয়ে হারিয়ে আসা যায়, তা হলে রবিবার কেন হবে না? আমি এই যুক্তি মানছি না। বিশ্বকাপ হল বিশ্বকাপ। এর সঙ্গে আগের দ্বিপাক্ষিক সিরিজের তুলনা করে লাভ নেই। অতীত ইতিহাস এখানে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। এটা নতুন দিন, নতুন ম্যাচ। আরও বড় ব্যাপার, বিশ্বকাপের ম্যাচ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের চেয়ে অনেক বেশি চাপ থাকবে। অস্ট্রেলিয়া দু’টো ম্যাচ জিতেছে, ভারত মাত্র একটিই ম্যাচ খেলেছে, এ সব তথ্যও খুব প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। অস্ট্রেলীয় হলেও বলছি, রবিবার, ওভালে ভারতই এগিয়ে!

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Cricketer Jeff Thomson ICC World Cup 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE