Advertisement
E-Paper

ধ্যানচাঁদ যদি হন জাদুকর, বলবীর ছিলেন রাজপুত্র

যতদূর মনে পড়ছে, দুবার ঢুকে পড়ে একটি গোল করে গিয়েছিলেন উনি।

গুরবক্স সিংহ

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০৩:৪১
স্মরণীয়: ১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে ভিকট্রি স্ট্যান্ডে বলবীর।

স্মরণীয়: ১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে ভিকট্রি স্ট্যান্ডে বলবীর।

বলবীর সিংহ (সিনিয়র) ছিলেন আমার ছোটবেলার হিরো। ভারতীয় হকির তখন স্বর্ণযুগ। এক ঝাঁক তারকা ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করছেন অলিম্পিক্স-আকাশে। সবার পকেটেই সোনা। বলবীরজী, কেশব দত্ত, লেসলি ক্লডিয়াস, কে ডি সিংহ বাবু, রঘুবীর সিংহ জেন্টল, উধম সিংহ—কাকে ছেড়ে কার কথা বলব। সেই কিংবদন্তিদের মধ্যে একজন আমার সামনে। যিনি স্টিকে বল ধরে ‘ডি’ বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়লেই গোল করা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ১৯৫৫-র সেই দিনটার কথা ভাবতে গিয়ে আজও কেমন শরীরের মধ্যে শীতল-স্রোত বয়ে যায়। গ্বালিয়র গোল্ড কাপে বলবীরজী খেলতে এসেছেন পঞ্জাব পুলিশের হয়ে। আমি মেরঠের হয়ে। আমার বয়স তখন বড় জোর কুড়ি বছর। নিতান্তই তরুণ উঠতি এক খেলোয়াড়। আর উনি লন্ডন আর হেলসিঙ্কি, পরপর দুটো অলিম্পিক্সের সোনা জিতে নিজের সেরা ফর্মে। শুধু তাই নয়, গোলের রেকর্ডও করে এসেছেন অলিম্পিক্সে। হেলসিঙ্কিতে অলিম্পিক্স ফাইনালে সেবার ভারত ৬-১ হারিয়েছিল হল্যান্ডকে। তার মধ্যে পাঁচটি করেছিলেন বলবীরজী। যে রেকর্ড এখনও অক্ষত। হল্যান্ডের নামী ব্যাকেরা যাঁকে আটকাতে পারেনি, সেই সেন্টার ফরোয়ার্ডকে আটকাব আমি! তা-ও আবার সেন্টার ব্যাকে দাঁড়িয়ে। মনে আছে আগের দিন রাতে ঘুমোতেই পারিনি। শুধু ভেবেছি, কটা গোল যে করবে কে জানে। তখন তো টিভির যুগ ছিল না। বিপক্ষের খেলার ভিডিয়ো দেখে চুলচেরা বিশ্লেষণ করার সুযোগও ছিল না। শুধু সিনিয়রদের মুখে শুনেছিলাম, ‘ডি’-র ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবেন না বলবীরকে। দিলেই গোল করে যাবে। চেষ্টা করেছিলাম তারুণ্যের জীবনীশক্তি দিয়ে। কিন্তু পারিনি। যতদূর মনে পড়ছে, দুবার ঢুকে পড়ে একটি গোল করে গিয়েছিলেন উনি। সেই গোলেই হেরে গিয়েছিলাম আমরা। তারপর ডিসিএমেও ওঁর মুখোমুখি হয়েছি। সেই বছরেই। সেখানেও হেরেছি। তার পরের বছরই মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে গিয়ে সোনা জেতার হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই মহাতারকা। ছিলেন অধিনায়কও। আঙুলে চোট নিয়েও অসাধারণ খেলেছিলেন। সেই সময়ের বেশ কয়েকজন হকি কিংবদন্তির ট্রফি ক্যাবিনেটে তিনটি করে অলিম্পিক্স সোনা ছিল। কারণ স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে হকি ছিল অলিম্পিক্স থেকে সোনা জেতার একমাত্র খেলা। স্বর্ণযুগের নায়কদের আরও একজন বলবীরজী সোমবার সকালে চলে গেলেন। সেই সময়ের আর একজন শুধু স্মৃতির ধারক এবং বাহক হয়ে এখনও আছেন আমাদের মধ্যে। তিনি রয়েছেন এই শহরেই--- কেশব দত্ত।

সর্বকালের সেরা সেন্টার ফরোয়ার্ড বাছতে বললে হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদের পর বলবীরজীকেই রাখব আমি। মূলত তাঁর গোল করার দক্ষতার জন্য। তাঁর গতির জন্য। দু স্টেপ এগিয়ে হিট করে গোল করা ছিল যাঁর সেরা অস্ত্র। উনি মোটামুটি ড্রিবলার ছিলেন। ছিলেন প্রচণ্ড সুযোগসন্ধানী। ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় পৌছে যেতেন। ‘ডি’-র মধ্যে ঢুকে পড়লেই তাঁকে রোখা ছিল কঠিন। পেনাল্টি কর্নার মারায় দক্ষ ছিলেন। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল স্কোরিং দক্ষতা। ওঁর সঙ্গে আমি প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে নানাভাবে যুক্ত থেকেছি। কখনও রাগতে দেখিনি। জুনিয়রদের উদ্বুদ্ধ করতেন ভাল খেলার জন্য। অলিম্পিক্স বা এশিয়ান গেমস খেলতে যাওয়ার আগে প্রতিবার আমাকেও উৎসাহ দিতেন। ১৯৬২-তে আমদাবাদে আন্তর্জাতিক হকি প্রতিযোগিতায় উনি ছিলেন ম্যানেজার। আমি খেলোয়াড়।

আজীবন যুক্ত ছিলেন পঞ্জাব ও ভারতীয় হকির সঙ্গে। ধ্যানচাঁদকে যেমন সবাই হকির জাদুকর বলেন, বলবীরজী ছিলেন হকির রাজপুত্র। নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। লকডাউনের মধ্যেই চলে গেলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামীর মতো ব্যক্তিত্বরা। আজ আরও এক অধ্যায়ের সমাপ্তি হল। তবে ভারতীয় হকি তাঁকে মনে রাখবে।

(সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন)

আরও পড়ুন: স্লিপ সাজানোর কী হবে, প্রশ্ন বেঙ্গসরকরদের

Balbir Singh Sr. Hockey Sports
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy