Advertisement
E-Paper

বিরাট সংসারে বেজে চলেছে মহেন্দ্র ধ্বনি

তবু এর নাম যে ক্রিকেট! মহান অনিশ্চয়তার খেলা! টেস্টেই যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ব্যর্থ হয়েছেন ধোনির জনপ্রিয় উত্তরসূরি। দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে যে কারণে ঋদ্ধিমান সাহাকে ফেরানোর প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কে বলতে পারে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একই পরিস্থিতি তৈরি হবে না?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫০
কোহালি-রাবাডা দ্বৈরথের দিকেই তাকিয়ে সকলে। টুইটার, এএফপি

কোহালি-রাবাডা দ্বৈরথের দিকেই তাকিয়ে সকলে। টুইটার, এএফপি

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কি ভারতের রঙিন জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন? কেউ জানে না।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে কি অদূর ভবিষ্যতে আবার দেশের নীল জার্সিতে দেখা যেতে পারে? কেউ নিশ্চিত নন।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কি অবসর ঘোষণা করে দেবেন? কারও কাছে সঠিক উত্তর নেই।

কয়েক দিন আগে যাঁর টুইট ঘিরে দাবানলের মতো জল্পনার আগুন ছড়িয়ে পড়ল, সেই বিরাট কোহালি যা বলে গেলেন শনিবার, তাতে ধোঁয়াশা কমেনি। বরং আরও বেড়ে গিয়েছে। ‘‘অভিজ্ঞতার কোনও বিকল্প নেই। সে আপনাদের ভাল লাগুক বা না লাগুক,’’ ধর্মশালায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে বসে যখন বলছেন কোহালি, কে বলবে ধোনি ভারতীয় ড্রেসিংরুমে নেই! বরং মনে হবে, এই তো মাহি তাঁর মহীরুহের মতো উপস্থিতি নিয়ে এখনও বসে আছেন বিরাট সংসারে। স্বয়ং অধিনায়ক তখন বলে চলেছেন, ‘‘বহু বার চ্যাম্পিয়ন ক্রীড়াবিদের উপরে আস্থা হারিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে অনেকে। আর তারা মানুষকে ভুল প্রমাণ করেছে। এম এস-ও বারবার একই ভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছে।’’

এর পরেই কোহালির আসল সংলাপ, যার নানা ব্যাখ্যা হতেই পারে। ‘‘এম এস শুধুই ভারতীয় ক্রিকেটের ভাল নিয়ে ভাবে। এবং, আমরা যে ভাবে চিন্তা করি, ও ঠিক সেভাবেই চিন্তা করে। উঠতিদের তৈরি করার মানসিকতা রয়েছে ওর। নতুনদের সুযোগ দিতে আগ্রহী। তার পরেও মানুষটা একই রকম থাকে।’’ কোহালির কথায় পরিষ্কার ইঙ্গিত, বিশ্বকাপ পরবর্তী অধ্যায়ে ঋষভ পন্থের মতো তরুণদের যে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে অবহিত কিংবদন্তি ধোনি। সম্ভবত তাঁকে জানিয়েই পরের প্রজন্ম গড়ে তোলার কাজ চলছে। যে প্রক্রিয়া তিনি দলের সঙ্গে থাকাকালীনই শুরু হয়ে গিয়েছিল। পন্থ নিজেও একাধিক বার স্বীকার করেছেন, ধোনির কাছে থেকে অমূল্য সব পরামর্শ পেয়েছেন।

কী দাঁড়াল? না, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ভারতীয় দলের সঙ্গে নেই। আবার না-থেকেও আছেন। বিশ্বকাপ পরবর্তী অধ্যায়ে তাঁর উত্তরসূরি গড়ে তোলার প্রয়োজন তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কেউ জানে না সেই প্রক্রিয়া হিট হবে না ফ্লপ। ঋষভ পন্থ আপাতত উত্তরসূরির লাইনে দাঁড়ানো এক নম্বর নাম। আরও কয়েক জন আছেন। সঞ্জু স্যামসন বা ঈশান কিসান।

একই সঙ্গে এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, পন্থের ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে সকলে উচ্ছ্বসিত থাকলেও সংশয় রয়েছে তাঁর মানসিকতা এবং উইকেটকিপিং দক্ষতা নিয়ে। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে ২৭টি কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন কোহালিরা। হাতে যথেষ্ট সময় রয়েছে পন্থকে দেখে নেওয়ার এবং জনপ্রিয় মত হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যেই প্রতিভাবান পন্থ তাঁর জায়গা পোক্ত করে ফেলবেন। টেস্টে যাঁর ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরি রয়েছে, তিনি নিশ্চয়ই হারিয়ে যেতে আসেননি।

তবু এর নাম যে ক্রিকেট! মহান অনিশ্চয়তার খেলা! টেস্টেই যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ব্যর্থ হয়েছেন ধোনির জনপ্রিয় উত্তরসূরি। দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে যে কারণে ঋদ্ধিমান সাহাকে ফেরানোর প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কে বলতে পারে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একই পরিস্থিতি তৈরি হবে না? আসন্ন তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ পন্থের বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। জনপ্রিয় জনশ্রুতি হচ্ছে, আগামী দু’তিন মাস তাঁকে ছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট কেমন যায়, তা দেখে না নিয়ে অবসরের পথে যাবেন না ধোনি।

পূর্বসূরির অবসর নিয়ে কোহালি এ দিন বলে গেলেন, ‘‘কখন অবসর নেবে সেটা একান্তই ওর ব্যাপার। কারও মতামত দেওয়ার অধিকারই নেই। আমি এটুকু বলতে পারি, যত দিন ও খেলবে, খুবই মূল্যবান ক্রিকেটার থেকে যাবে।’’ কোহালিরই একটি টুইটকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে রটে যায়, ধোনি সে দিনই অবসর ঘোষণা করছেন। অধিনায়কের বক্তব্য, ‘‘বড় শিক্ষা পেয়েছি সে দিন। বাড়িতে বসে একটা টুইট করেছিলাম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ওই ম্যাচটা আমার খুব প্রিয়। কিন্তু জোর শিক্ষা হল, আমি যে ভাবি, অন্যরা সে ভাবে না-ও ভাবতে পারে।’’

সেটা ছিল ২০১৬-তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ। মোহালিতে সেই রাতে কোহালি-ধোনি জুটি ভারতকে জেতায়। আর ক্রিজে আসার পর থেকে কোহালিকে খুচরো রান নেওয়ার জন্য দৌড় করিয়ে হাঁফিয়ে তুলেছিলেন ধোনি। টুইটের হয়তো অপব্যাখ্যা হয়েছিল। কিন্তু এটাও তো পরিষ্কার যে, ধোনির চিন্তা পুরোপুরি মাথা থেকে বেরিয়ে যায়নি কোহালির। কঠিনতম পরিস্থিতিতেও সকলকে আশ্বস্ত করা সেই হাত নাড়া। চরম সঙ্কটের মধ্যেও সেই শান্ত, স্থিতধী পুরুষ। উইকেটের পিছনে মহীরুহ মাহির অভাব অনুভব করছেন কি অধিনায়ক? না হলে বাড়িতে বসে হঠাৎ পুরনো ম্যাচ আর প্রাক্তন অধিনায়কের মুখ ভেসে উঠবে কেন?

দেখেশুনে মনে হচ্ছে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এখনও আছেন। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে আছেন। কোহালিদের মনে আছেন, মগজে আছেন। না-থেকেও আছেন! যে কোনও দিন, যে কোনও মাঠে আবার ভেসে উঠবেন। তা সে তিনি সশরীরে সেখানে উপস্থিত থাকুন বা না থাকুন!

MS Dhoni Cricket Virat Kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy