Advertisement
E-Paper

প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ইমরান, মাঠে সিএবি প্রেসিডেন্ট

ষ্টির বিরুদ্ধে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জীবনের প্রথম ইনিংসে জেতেননি। প্রশাসক সৌরভকে অভিষেকে হার দেখতে হয়েছিল। কিন্তু ক্রিকেটের মতো জীবনও দ্বিতীয় ইনিংস দেয়। সুযোগ দেয় প্রত্যাবর্তনের। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যে ইনিংসে শুধু রান করলেন না, সেঞ্চুরি করে বেরিয়ে গেলেন। গত অক্টোবর যদি তাঁর ‘ওয়ান ডে’ অভিষেক দেখে থাকে, তা হলে মার্চ দেখল ‘টেস্ট’ অভিষেক। দেখল ‘লর্ডস’ অভিষেক।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০৪:০০
ঘরে তখন নেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সিএবি প্রেসিডেন্টের চেম্বারে তারার হাট। রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরিয়ার খান, ইমরান খান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমরা। শনিবার। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য

ঘরে তখন নেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সিএবি প্রেসিডেন্টের চেম্বারে তারার হাট। রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরিয়ার খান, ইমরান খান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমরা। শনিবার। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য

রাত সাড়ে তিনটেতেও হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন।

বৃষ্টির আতঙ্কের মধ্যেও অমিতাভ বচ্চন-ইমরান খানকে নিজের ঘরে এনে আপ্যায়ন করা।

পাক সঙ্গীত তারকা শাফকাত আমানত আলির পোশাক আনতে নিজের গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া।

মিনিটে মিনিটে মাঠে দৌড়। দেখে আসা, কভার ঠিকঠাক আছে কি না।

বৃষ্টির বিরুদ্ধে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জীবনের প্রথম ইনিংসে জেতেননি। প্রশাসক সৌরভকে অভিষেকে হার দেখতে হয়েছিল। কিন্তু ক্রিকেটের মতো জীবনও দ্বিতীয় ইনিংস দেয়। সুযোগ দেয় প্রত্যাবর্তনের। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যে ইনিংসে শুধু রান করলেন না, সেঞ্চুরি করে বেরিয়ে গেলেন। গত অক্টোবর যদি তাঁর ‘ওয়ান ডে’ অভিষেক দেখে থাকে, তা হলে মার্চ দেখল ‘টেস্ট’ অভিষেক। দেখল ‘লর্ডস’ অভিষেক।

অদৃষ্ট তাঁকে এ দিনও সহজ পিচ দেয়নি। উপহার দিয়েছিল সেই প্রেক্ষাপট যা তাঁর জন্য বরাদ্দ ছিল মাসপাঁচেক আগেও। সেই এক ইডেন, সেই এক আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি। ইডেনে গত অক্টোবরে কভার না দেওয়ায় মাত্র আধ ঘণ্টার বৃষ্টি ভেস্তে দিয়েছিল ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি। শনিবার আধ ঘণ্টার জায়গায় দেড় ঘণ্টা চলল। কিন্তু দু’ওভারের বেশি ইনিংস পিছু কাটা গেল না। বৃষ্টি থামার এক ঘণ্টার মধ্যে শুরু হয়ে গেল ম্যাচ।

সৌরভঘনিষ্ঠ একজন সন্ধেয় সিএবিতে বলছিলেন, বৃষ্টির বিরুদ্ধে ম্যাচটা সৌরভ আজ নেমে জেতেননি। ম্যাচটা মনে মনে খেলতে শুরু করেছিলেন গত অক্টোবরের সেই অপমান থেকে। বলা হল, চ্যালেঞ্জ নিতে সৌরভ কোনও দিনই পিছু হঠেননি। তা সে বোলারের নাম বৃষ্টি বা ব্রেট লি, যা-ই হোক না কেন। অক্টোবর-বিপর্যয়ের পর ইডেনের খোলনলচে বদলে ফেলেছিলেন। মাঠে কোরিং করে বালি গুঁজে এমন বন্দোবস্ত করেছিলেন যে, হাজার বৃষ্টিতেও ইডেনে জল দাঁড়াবে না। সঙ্গে আনা হয়েছিল বিদেশি কভার। যা বৃষ্টি শুরু হওয়ার মিনিটকয়েকের মধ্যে ঢেকে ফেলতে পারবে গোটা মাঠ।

শনিবারের সৌরভ অবশ্য বৃষ্টি শুরু হওয়ার অপেক্ষাই করেননি। আগের রাতেই মাঠ ঢেকে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, পুলিশকে বাড়তি নজর রাখতে বলেছিলেন কভারের উপর। তার পর বাড়ি ফিরে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রামের পর আবার ফোনাফুনি শুরু হয়ে যায়। কারণ সকালের দিকেই আকাশ কালো হয়ে নেমেছিল কিছুটা বৃষ্টি। নিজে মাঠকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে থাকেন। বিকেলে মুষলধারে নামার পর নিজেই নেমে যান তদারকিতে। ঝড়ে যাতে কভার না উড়ে যেতে পারে, সে কারণে কভারের উপর সাবধানে ফেলে দেওয়া হয় লোহার পাত। মাঠে নেমে যায় একশো চল্লিশ কর্মী। ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান দেবব্রত দাসকে দেখা যায় অঝোর বৃষ্টি উপেক্ষা করে পা দিয়ে কভার চেপে দাঁড়িয়ে থাকতে।

কিন্তু তখন শুধু বৃষ্টির সঙ্গে লড়লে চলত না। দেখতে হত মেগা অতিথিদের আদর-আপ্যায়নও। ইডেনে তো ততক্ষণে ঢুকে পড়েছেন অমিতাভ বচ্চন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমরান খান। সচিন তেন্ডুলকর। ইমরান-অমিতাভরা সৌরভের ঘরে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে মৃদু রসিকতাও চলতে থাকে। বিনীত হোস্টের নাম অবশ্যই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অমিতাভ থেকে মুখ্যমন্ত্রী, রাজীব শুক্ল থেকে শাফকাত আমানত আলি, ইমরান থেকে তেন্ডুলকর সবার খুঁটিনাটি দেখছেন নিজে। তারই মধ্যে শোনা গেল, অমিতাভ নাকি মজা করে সিএবি প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে পড়ে বলেন, ‘তোমার চেয়ারে বসতে পারি?’ সৌরভও দ্রুত বলে দেন, ‘এনি টাইম স্যর!’ একটু পরে আবার এক সিএবি কর্তা দেখেন, সৌরভের চেয়ারে রাজসিক ভঙ্গিতে বসে ইমরান। হাতে কফির কাপ।

এ সবের মধ্যেই আবার দুটো খবর আসে। সৌরভ জানতে পারেন, তাঁর মা ভুল করে অন্য বক্সে বসে পড়েছেন। দ্রুত তাঁর বক্স পাল্টে দেন সৌরভ। পরে মায়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন অমিতাভদের। ততক্ষণে খবর এসেছে, শাফকাতের ড্রেস হোটেল থেকে আনতে হবে। সৌরভ সঙ্গে সঙ্গে নিজের গাড়িটাই পাঠিয়ে দেন।

রাতের দিকে এক সৌরভঘনিষ্ঠ বলছিলেন, এটাই গাঙ্গুলি। ধাক্কা খেয়ে এমন ভাবে ফিরে আসবে যে, লোকে কোনও দিন ভুলতে পারবে না। সিএবিতে একটা ক্রিকেট ম্যাচে হাজির করিয়ে ফেলবে অমিতাভ থেকে সচিনকে। আশেপাশে তখন ‘ম্যাচ জয়ী’ প্রেসিডেন্টকে দেখা গেল না। তিনি ততক্ষণে রিলায়্যান্স বক্সে। এত দিনের যুদ্ধের পর একটু রিল্যাক্স করছেন। অমিতাভ-সচিনের সঙ্গে বসে ম্যাচটা দেখছেন।

শুক্রবার রাতে হয়নি। কিন্তু শনিবার রাতে নিশ্চিত শান্তির ঘুম ঘুমোবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়!

wt20 sourav ganguly imran khan mamata banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy