Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ

‘বিশ্বকাপে খেলার টিকিট হারালেও নীরজদের লড়াইয়ে গর্বিত’

অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচটা দেখতে দেখতে পুরনো স্মৃতি ফিরে আসছিল। ১৯৮৮ সালে আমি অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের কোচ ছিলাম।

দুরন্ত: দক্ষিণ কোরিয়ার আক্রমণকে এ ভাবেই থামালেন ভারতীয় গোলরক্ষক নীরজ। তবুও কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়ে গেল ভারতের অভিযান। সোমবার কুয়ালা লামপুরে। টুইটার

দুরন্ত: দক্ষিণ কোরিয়ার আক্রমণকে এ ভাবেই থামালেন ভারতীয় গোলরক্ষক নীরজ। তবুও কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়ে গেল ভারতের অভিযান। সোমবার কুয়ালা লামপুরে। টুইটার

শ্যাম থাপা
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৩
Share: Save:

দক্ষিণ কোরিয়া ১ ভারত ০

স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণার মধ্যেও অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে। ভারতীয় ফুটবল সঠিক পথেই এগোচ্ছে।

অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচটা দেখতে দেখতে পুরনো স্মৃতি ফিরে আসছিল। ১৯৮৮ সালে আমি অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের কোচ ছিলাম। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলেন প্রয়াত জার্নেল সিংহ। গোয়ায় মাত্র চার মাস প্রস্তুতি নিয়ে এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে অংশ নিয়েছিলাম। প্রথম ম্যাচে দুর্ধর্ষ চিনের বিরুদ্ধে মাত্র ০-১ হেরেছিলাম। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম, তাতে লিখেছিলাম, এই দলটাকে ধরে রাখতে পারলে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হবে। ছেলেগুলো প্রতিশ্রুতিমান। এরাই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলবে। তাই সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ওদের গড়ে তুলতে হবে। আমার আবেদনে সাড়া দেয়নি ফেডারেশন। সোমবার কুয়ালা লামপুরে অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের ফুটবলারদের দেখে, একই কথা মনে হচ্ছে। এরাই ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ। এদের ধরে রাখতে হবে।

দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে ভারত অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ চারে উঠলে দারুণ আনন্দ হত ঠিকই। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কী ভাবে অস্বীকার করব। গুণগত মানে আমাদের চেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া অনেক এগিয়ে। এই প্রতিযোগিতার জন্য ওরা গত চার বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে। আমাদের সেখানে সবে পথ চলা শুরু হয়েছে।

সাত ও আটের দশকে আমাদের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের পার্থক্য খুব একটা বেশি ছিল না। ১৯৭০ এশিয়ান গেমসে জাপানকে হারিয়ে আমরা ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। কিন্তু তার পরে ওদের ফুটবল উল্কার গতিতে এগিয়েছে। আমরা ক্রমশ পিছিয়েছি। গত কয়েক বছর ধরে ছবিটা বদলাচ্ছে। আগে বিদেশি দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ থাকলেই দেখতাম, আমাদের ডিফেন্ডারেরা ভয়ে কাঁপছে। প্রধান লক্ষ্যই থাকত, কোনও মতে ম্যাচটা শেষ করে মাঠ ছাড়া। এখন আমাদের ছেলেরা লড়াই করছে শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত।

শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সব কোচই রক্ষণাত্মক রণনীতি তৈরি করে। অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্দেসও তাই করেছিল। একেবারেই সঠিক ভাবনা। দক্ষিণ কোরিয়ার এই দলটা প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। এ দিনও দেখলাম, পুরো ম্যাচে মোট তেরোটা কর্নার আদায় করেছে ওরা। আমরা পেয়েছি মাত্র দুটো। তাই এ রকম অসম লড়াইয়ে সব সময় আগে নিজেদের রক্ষণ মজবুত করে প্রতিআক্রমণে গোল করার চেষ্টা করা উচিত। অপেক্ষা করতে হয়, প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের ভুলের। শুরুটা সে ভাবেই করেছিল ভারত। এ ভাবে খেলতে খেলতেই প্রথমার্ধের একেবারে শেষ পর্বে আমরা গোল করার সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু রবি রানার দুরন্ত সাইডভলি কোনও মতে ফিস্ট করে বাঁচায় দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক।

প্রথমার্ধ গোলশূন্য শেষ হওয়ার পরে একটু আশা জেগেছিল। মনে হচ্ছিল, বাকি ৪৫ মিনিটও যদি এ ভাবে ওদের আটকে রাখা যায়, তা হলে টাইব্রেকারে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। কারণ, এই প্রতিযোগিতায় দুরন্তে ছন্দে রয়েছে গোলরক্ষক নীরজ কুমার। কার্যত ওর জন্যই এ দিন ৬৮ মিনিট পর্যন্ত আটকে ছিল ২০০২ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা দক্ষিণ কোরিয়া। একটা সময় তো আমার মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা ভারত বনাম দক্ষিণ কোরিয়া নয়। ভারতের গোলরক্ষক নীরজ কুমারের বিরুদ্ধে খেলছে ওরা! চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা নীরজ এই প্রতিযোগিতার অন্যতম সেরা আবিষ্কার। এই বয়সে এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে খুব কম গোলরক্ষককে দেখেছি।

কেউ কেউ হয়তো বলবেন, নীরজের ভুলেই তো গোল খেয়েছে ভারত। কারণ, চোই মিনসেরো শট নীরজের হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই গোলে ঠেলে দেয় জেয়ং সাংবিন। আমি মনে করি, গোলের জন্য নীরজকে দায়ী করার কোনও যুক্তি নেই। পেনাল্টি বক্সের ভিতর থেকে চোই যখন শট নিয়েছিল, নীরজের সামনে একাধিক ফুটবলার। শেষ মুহূর্তে ও বলটা দেখতে পেয়ে শরীর ছুড়ে বাঁচায়। ওই পরিস্থিতিতে বল তালুবন্দি করা সহজ নয়। প্রশংসা করব, পরিবর্ত হিসেবে নামা কোরিয়ার জেয়ংকে। বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে এসে বলটা গোলে ঠেলে দিল। আমিও এ রকম গোল অনেক করেছি। এই ধরনের গোলের আনন্দই আলাদা।

তবে আমার মনে হয়, গোল খাওয়ার পরে বিবিয়ানোর উচিত ছিল রণনীতি বদলানো। এই ম্যাচের উপরেই নির্ভর করছিল আগামী বছর পেরুতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতের ভবিষ্যৎ। তাই গোল খাওয়ার পরে বিবিয়ানোর উচিত ছিল আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ানোর জন্য ফুটবলারদের নির্দেশ দেওয়া। একবার শেষ চেষ্টা করা। এমনিতেই আমরা গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের নতুন করে হারানোর কিছু নেই। জয় নিশ্চিত ধরে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলারেরাও কিছুটা আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিল। তাই গোল শোধ করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানো উচিত ছিল। হয়তো আরও বেশি গোল খাওয়ার ভয়ে বিবিয়ানো সেই ঝুকিটা নেয়নি।

বিবিয়ানোকে অবশ্য দোষ দিতে চাই না। দুর্দান্ত কোচিং করাচ্ছে। ওর হাত ধরেই এগোবে ভারতের ফুটবল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE