শনিবার অনুশীলনে ভারতীয় যুব ফুটবল দল। —নিজস্ব চিত্র।
মাঝে মাত্র একটা রাত। শুক্রবারই এই স্টেডিয়াম চত্বর থিকথিক করছিল ফুটবলপ্রেমীদের ভীড়়ে। শনিবার সন্ধেটা ঠিক তার উল্টো। ফাঁকা চত্বরে শুধুই কিছু পুলিশ আর ফিফার লোকের আনাগোনা। গত সন্ধেয় ভারতীয় ফুটবল দল নেমেছিল ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে। আর এই সন্ধেয় ছিল ভুল-ত্রুটি শুধরে নেওয়ার পালা। স্টেডিয়াম জুড়়ে ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ চিৎকারটা যেন কান পাতলে এখনও শোনা যাচ্ছে, দিল্লির আনাচ-কানাচ থেকে। শুক্রবার হয়নি কিন্তু সোমবার সাফল্যের তেরঙা ওড়াতে চান অমরজিৎ, অনিকেতরা।
আরও পড়ুন
‘নামী বাবার ছেলে হওয়ার চাপ নিতে হয় না আমাকে’
ধিরাজই সেরা, ইউএসএ কোচ নম্বর বাড়িয়ে দিলেন
ম্যাচের পরের দিন সাধারণত বিশ্রাম দেওয়া হয় দলকে। কিন্তু, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ইউএসএ-র কাছে হারের পর ছেলেদের সেই বিশ্রাম দিতে চাননি কোচ নর্টন দে মাতোস। বরং লম্বা ট্রেনিং সেশন চলল জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের এক নম্বর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে। সন্ধে ছ’টা থেকে প্রায় রাত আটটা। কোচ মাতোস আসলে ফুটবলারদের হারটা ভুলতে দিতে চান না। ভুলত্রুটিগুলো এই দু’দিনে শুধরে নিয়ে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে নামাটাই লক্ষ্য গোটা দলের। কোচও তেমনটাই চাইছেন। যে কারণে দু’দলে ভাগ করে চলল অনুশীলন। এক দিকে, সহকারি কোচের সঙ্গে দলের রিজার্ভ বেঞ্চ। অন্য দিকে, মাতোসের সঙ্গে মূল দল।
দেখুন ভারতীয় দলের অনুশীলনের ভিডিও
ইউএসএ-এর বিরুদ্ধে খেলা প্রথম এগারোয় যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে তার ইঙ্গিত সকালেই হোটেলের লবিতে বসে দিয়েছিলেন মাতোস। কারও নাম না করে, তি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কলম্বোর দল যেমন সেই মতই ভারতীয় দল তৈরি করা হবে। কাজেই ওই দলের যে এক-দু’জন যে বাইরে যাবেন সেটা স্বাভাবিক। প্রথম ম্যাচে হারের পর তাই দ্বিতীয় ম্যাচে কোমরবেঁধে নামতে চাইছে ভারতীয় দল। তার মধ্যেই চোটের কবলে রাহুল কেপি। মাঠের মধ্যে পায়ে পুরো সময়টাই বরফ বেঁধে থাকতে দেখা গেল তাঁকে। তাঁর চোট নিয়ে এখনও তেমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
পুরো দল নিয়ে সন্ধের মুখে মাঠে নামলেন কোচ মাতোস। প্রথম দিনের চনমনে ভাবে একটা ছোট্ট অস্বস্তির পর্দা। সবার বডি ল্যাঙ্গুয়েজই যেন কিছুটা ধরা পড়়ছে গত কালের ম্যাচের হারের ক্ষত। যদিও অনুশীলন শেষে দলের প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার সুরেশ ওয়াংজ্যামের গলায় যেন ফিরে এসেছে আত্মবিশ্বাস। তাই অতীত ভুলে সামনের দিকেই তাকাতে চায় সে। বলছিল, ‘‘হার-জিতটা খেলার অংশ। ওই স্কোর লাইনটা ভুলে কলম্বিয়া ম্যাচে ফোকাস করতে চাই। ৯ অক্টোবরের ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিতে চাই।’’ হারলেও পুরো দলের মধ্যে রয়েছে বিরাট ৪৬ হাজার দর্শকের সামনে খেলতে পারার একটা অদম্য ভাললাগা। আর সেটাকে মনে নিয়েই কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে অল-আউট ঝাঁপাতে চাইছে সুরেশরা।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি ভারতীয় দলের সুরেশ।
এ দিনের অনুশীলনে প্রথমে হালকা ওয়ার্ম আপ। পরে মাঠ জুড়়ে দৌড়নোর সঙ্গে ছিল নিজেদের মধ্যে পাসিং অনুশীলন। পাশাপাশি বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেওয়া। প্রথম ম্যাচে ইউএসএ-র বিরুদ্ধে এই দুটোরই অভাব দেখা গিয়েছিল। মাঝ মাঠে পাঁচ জন খেলিয়েও সিঙ্গল স্ট্রাইকার অনিকেত যাদব বল তেমন পাচ্ছিলেন না। আবার যা হাফ চান্স তৈরি হচ্ছিল সেটা টার্গেটেও থাকছিল না। সে কারণেই হয়তো এ দিন এই দুটো অনুশীলনের উপরই জোর দিলেন কোচ মাতোস। দলের পাসিং সমস্যা নিয়ে কথা না বললেও নিজের ভূমিকা নিয়ে বলে গেল সুরেশ। তার কথায়, ‘‘সামনে খেলা অনিকেতকে আরও বেশি বল পাস করতে পারাটাই আমার লক্ষ্য থাকবে। সঙ্গে উইথ দ্য বল গতি বাড়ানোটাও।’’
ততক্ষণে খালি স্টেডিয়াম জুড়়ে অন্ধকার নেমেছে। অনুশীলন শেষে যেন এই অন্ধকার কাটিয়েই ৯ অক্টোবরের রাতে রোশনাইয়ের অপেক্ষায় ভারতীয় দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy