Advertisement
E-Paper

ইতিহাসের লর্ডসে আজ থেকে কোহালিদের স্বপ্ন রক্ষার লড়াই

চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকেই ক্রিকেট আকাশে দুরন্ত উত্থান কোহালির। টেস্ট অধিনায়ক হয়েও নতুন শপথ নেন তিনি যে, বিশ্বের সর্বত্র সেরা হবে তাঁর দল। সতীর্থদের বুঝিয়ে চলেছেন, সব পরিবেশে, সব পরিস্থিতিকে বশ করতে না পারলে র‌্যাঙ্কিংই পাবে, হৃদয় জিতবে না। 

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৬
প্রত্যয়ী: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে নামার আগে ভারতীয় দলের অনুশীলনে কড়া নজর কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালির। বুধবার লর্ডসে। ছবি: রয়টার্স।

প্রত্যয়ী: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে নামার আগে ভারতীয় দলের অনুশীলনে কড়া নজর কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালির। বুধবার লর্ডসে। ছবি: রয়টার্স।

তাঁর দলের অন্যরা বলেন, চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে চাই।

বিরাট কোহালি তা বলেন না। তাঁর পছন্দের লাইন, ‘‘চ্যালেঞ্জকে জড়িয়ে ধরতে চাই।’’

তাঁর দলের অন্যদের মনোভাব— আকাশ আমাদের কাছে চূড়ান্ত সীমা।

বিরাট কোহালি তা মানেন না। তাঁর দর্শন হচ্ছে, ‘‘একমাত্র আকাশই হবে আমার লক্ষ্য।’’

মনোভাবে এই পার্থক্যই সমুদ্রের মতো আছড়ে পড়তে শুরু করেছে বিদেশের মাটিতে ভারতীয় দলের স্কোরবোর্ডে। কপিল দেবের বিশ্বকাপ জয়ের ঐতিহাসিক মাঠ উত্তর ভারত থেকে আসা আর এক ডাকাবুকো অধিনায়ককে কি ভাসিয়ে তুলবে? নাকি ফের স্বপ্নভঙ্গ হবে লর্ডসে? টেস্ট সিরিজের ভবিতব্য নির্ধারণে কোহালি এবং সতীর্থদের গুণগত মানে ব্যবধান নিয়েই যত চর্চা।

চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকেই ক্রিকেট আকাশে দুরন্ত উত্থান কোহালির। টেস্ট অধিনায়ক হয়েও নতুন শপথ নেন তিনি যে, বিশ্বের সর্বত্র সেরা হবে তাঁর দল। সতীর্থদের বুঝিয়ে চলেছেন, সব পরিবেশে, সব পরিস্থিতিকে বশ করতে না পারলে র‌্যাঙ্কিংই পাবে, হৃদয় জিতবে না।

এক-এক সময় মনে হচ্ছে, চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় ধোনির টেস্ট অবসরের পর থেকে শুরু হওয়া কোহালি যুগে লর্ডসই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হতে যাচ্ছে। এখানে জিতে প্রত্যাবর্তন ঘটাতে না-পারলে আরও একটা সিরিজ হারের আতঙ্ক তৈরি হবে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ০-২ হওয়া মানে দলের আত্মবিশ্বাস আরও ধাক্কা খাবে। সেই লড়াকু ভারত হয়েই দেশের বিমান ধরতে হবে। বিজয়ী ভারতের গর্বের নীল ব্লেজার পরা হবে না। এ দিন প্রাক-টেস্ট অনুশীলনে দেখা গেল কোহালি স্বয়ং বরাবরের মতোই হার-না-মানা। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য। এমনকি, ব্যাট করার সময়েও বোলারদের চ্যালেঞ্জ করতে থাকলেন। তাঁদের তাতিয়ে দিচ্ছিলেন, নানা ধরনের উত্তেজক কথাবার্তা বলে। অন্য ব্যাটসম্যানদের পরামর্শ দিতেও দেখা গেল।

একে তো চারদিকের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হবে, সার্কাসের আসল মাস্টার তিনি। বাকিরা সব একস্ট্রা। বাঘকে পোষ মানানোর খেলাটা তিনিই দেখান। ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের আলোকচিত্রীদেরও দেখা গেল কোহালি যেখানে যাচ্ছেন, তাঁর দিকে ক্যামেরা তাক করে ছুটছেন। তার পর এমন সব মুহূর্ত তৈরি হচ্ছে যে, আরও রং লাগছে।

ভারত অধিনায়ক আদর্শ সেনাপতির মতোই অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, ‘‘সবাই চেষ্টা করছে। এত দ্রুত উপসংহারে পৌঁছে গেলে ভুল হবে। আমরা টিমের মধ্যে ধৈর্য ধরতে চাই। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যাটা টেকনিক্যাল নয়, মানসিক।’’ জানালেন, ব্যাটিং গ্রুপের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ময়নাতদন্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ বেরিয়েছে যে, ক্রিজে এসে শুরুতেই আগ্রাসী হওয়া যাবে না। ২০-৩০টা বল দেখে খেলা দরকার পরিস্থিতি এবং পরিবেশ বুঝে নেওয়ার জন্য। ‘‘বাইরে থেকে অনেক কিছুই বলা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে, ভুলের মাত্রা কমাতে হবে। তার বাইরে খুব চিন্তা করতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার কোনও কারণ দেখছি না,’’ বলছেন কোহালি। কিন্তু তিনিও কি বুঝছেন না যে, গম্ভীর সন্ধিক্ষণ উপস্থিত! লর্ডসেই তাঁদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ‘নাউ অর নেভার’।

হাতের সামনে পড়ে থাকা ভয়ঙ্কর সব তথ্যও তো রয়েছে সতীর্থদের নিয়ে আতঙ্ক বাড়িয়ে তোলার জন্য। কোহালির নিজের যেখানে বিদেশের মাঠে গত এক বছরে টেস্ট গড় ৫৮-র উপরে, সেখানে বাকিদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। অজিঙ্ক রাহানে এবং চেতেশ্বর পূজারাকে বিদেশের মাঠে সেরা দুই ব্যাটসম্যান ভাবা হয়। প্রথম জনের গত এক বছরে বিদেশের মাটিতে টেস্ট গড় ১৮। দ্বিতীয় জনের ১৫। এ বার খোলা যাক ওপেনারদের খাতা। কে এল রাহুলের গত এক বছরে বিদেশের মাটিতে টেস্ট গড় ১৮। এম বিজয়ের ১৬। শিখর ধওয়নের ৩৮, তবে এমন স্বাস্থ্যকর দেখানোর কারণ শ্রীলঙ্কায় রান করা। অর্থাৎ, বার্মিংহামে নতুন কোনও রোগ ধরা পড়েনি। গত এক বছর ধরেই রক্তাল্পতা দেখা দিয়েছে কোহালির সতীর্থদের মধ্যে। তা তাঁরা সারিয়ে উঠতে পারছেন না।

লর্ডসে যদি হিমোগ্লোবিনে উন্নতি না ঘটাতে পারেন বিজয়-রাহুলরা, কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে পড়ে যেতে পারেন। এই দলের অনেকেই তিরিশের বৃত্তে ঢুকে পড়েছেন বা ঢোকার মুখে। ইংল্যান্ডে সিরিজ জিততে না পারলে কোহালির বিশ্বে সেরা দল হওয়ার স্বপ্ন ধাক্কা তো খাবেই, সতীর্থদের বাতিল ঘোড়া ভাবা হবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠে পড়বে। তখন আরওই জোরাল হবে এম বিজয় বা শিখর ধওয়নদের সরিয়ে পৃথ্বী শ’র মতো তরুণ রক্তকে সুযোগ দেওয়ার দাবি।

কোহালিকে এ দিন সরাসরি সাংবাদিক সম্মেলনে জিজ্ঞেসই করে ফেলা হল, বারবার আপনি নিজে রান করছেন অথচ টিম হারছে। বাকিরা পারছে না। কতটা হতাশজনক এই পরিস্থিতি? কোহালির জবাব, ‘‘এ ভাবে দেখি না কখনও যে, আমি রান পেলাম অথচ দল পারল না। খারাপ লাগার পিছনে একটাই কারণ থাকে যে, আমরা পারলাম না। আমি রান না পেয়েও যে দিন দল জেতে, সে দিন আমার আনন্দ হয়।’’

উপমহাদেশের বাইরে ভারতীয় ব্যাটিং এবং কোহালি মানে এখন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এবং লিয়োনেল মেসি। নিজে দুর্দান্ত হলেও দলগত খেলায় সতীর্থদের ব্যর্থতার ভাগীদার হয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তা-ও ক্লাবের জার্সিতে অবিশ্বাস্য রেকর্ডের ধারেকাছেও নেই বলে দেশের হয়ে খেলা মেসিকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। কোহালির ক্ষেত্রে সেই চোনাটুকুও নেই।

লর্ডস, ঐতিহাসিক লর্ডসে কোহালির স্বপ্নরক্ষার লড়াই। আর তাঁর সতীর্থদের অস্তিত্ব রক্ষার!

Cricket Ravi Shastri Virat Kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy