Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
IPL 2020

আইপিএলই দলে ঢোকার চাবিকাঠি, নজরে বাংলার এক ক্রিকেটার-সহ বেশ কয়েক জন

আইপিএল জন্ম দিয়েছে অনেক তারকার। আমিরশাহিতে এ বার কে কেড়ে নেবেন নজর?

ঈশান, শুভমন, পৃথ্বী, যশস্বীরা পারবেন আইপিএলে ধারাবাহিকতা দেখাতে?

ঈশান, শুভমন, পৃথ্বী, যশস্বীরা পারবেন আইপিএলে ধারাবাহিকতা দেখাতে?

সৌরাংশু দেবনাথ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৫৬
Share: Save:

বিরাট কোহালিকে শেষ বার বাইশ গজে দেখা গিয়েছিল মার্চ মাসের ২ তারিখ। রোহিত শর্মাকে তারও এক মাস আগে ফেব্রুয়ারিতে নীল জার্সিতে দেখেছিল ক্রিকেটবিশ্ব।

বিরাট-রোহিতের মতো মহাতারকাদের এত মাস পরে দেখা যেতে চলেছে ব্যাট হাতে। জশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিদের বল হাতে ছুটতেও দেখা যাবে লম্বা বিরতির পর। ভারতীয় ক্রিকেটে এহেন অবসর বিরল। কার্যত নেই। আর সেই কারণেই মরুদেশের আইপিএল হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ।

করোনা অতিমারি, লকডাউন, স্যানিটাইজার, মুখাবরণ, কোয়রান্টিন, আইসোলেশন, জৈব সুরক্ষা বলয়, সামাজিক দূরত্বের ‘নিউ নর্মাল’ জীবনে পুরনো ছন্দ ফিরবে তো!

ক্রিকেটমহল মনে করছে, জীবনের মতো ক্রিকেটেও এই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক। মহাতারকারা গত কয়েক মাসে কাটিয়েছেন একেবারে অন্য জীবন। নেট প্র্যাকটিসের চেনা রুটিনে ফিরে আইপিএলের জন্য তৈরি হতে খুব বেশি দিন কেউই পাচ্ছেন না। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস দলের ক্ষেত্রে কাজটা আরও কঠিন। শিবিরে করোনার হানায় বাকি সব ফ্র্যাঞ্চাইজির থেকে দেরিতে শুরু হয়েছে অনুশীলন। এই পরিস্থিতিতে ব্যাট বা বল হাতে আগের মেজাজে ফেরার সাধনায় ক্রিকেটাররা। কিন্তু, শরীরকে আগের রিফ্লেক্সে ফিরিয়ে আনা তো আর ম্যাজিক নয়। ফলে, আইপিএলের গোড়ার দিকে কাউকে কাউকে অস্বস্তিতে দেখাতেই পারে।

আরও পড়ুন: স্যানিটাইজার দিয়ে বল পালিশ! নির্বাসিত অজি পেসার

বিরাট কোহালির দিকে যেমন অপরিসীম আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। নিউজিল্যান্ডে নিষ্প্রভ দেখিয়েছিল তাঁকে। তিনি নিজে না মানতে চাইলেও স্কোরবোর্ডে তা প্রতিফলিত। আইপিএল তাই আরসিবি অধিনায়কের কাছে বড় রানের রুটিনে ফেরার সুযোগ। তাঁর মতো ক্রিকেটার বেশি দিন রানের বাইরে থাকতে পারেন না, এই জ্বলন্ত বিশ্বাস আরও জোরদার করতে বদ্ধপরিকরও দেখাচ্ছে তাঁকে। নেটে ঘাম ঝরাচ্ছেন, আইস বাথ নিচ্ছেন ড্রেসিংরুমে। পরিবারে নতুন অতিথি আসতে চলাও আনন্দে রাখছে। যা বাইশ গজে আমদানি হলে বাকি সাত অধিনায়কের কপালের ভাঁজ গভীর হতে বাধ্য। রোহিত আবার চোট সারিয়ে ফিরছেন ক্রিকেটে। যদিও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ককে নেটে স্বচ্ছন্দেই দেখিয়েছে।

অবশ্য আগে রান পাননি বলে বিরাট কোহালি বা চোট সারিয়ে ফিরতে চলেছেন বলে রোহিতের পক্ষেই কাজটা কঠিন, এমন ভাবলে বড্ড সরলীকরণ হয়ে পড়বে। বাকিদের পক্ষেও যে ছন্দে ফেরা মোটেই অনায়াস নয়। প্রায় ছয়-সাত মাস ক্রিকেটের বাইরে কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে হওয়া লকডাউন থেকে ধরলে এই কয়েক মাসে ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ থেকেছে। ফলে, কেউই খেলেননি। হাত-পায়ের আড়ষ্টতা কাটিয়ে পুরনো অভ্যাসে আসা কোনও জাদুকাঠির কর্ম নয়। এই অবস্থায় আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা কী ভাবে দল সাজাবেন, তা আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠছে। বর্তমান ফর্মকে কি মূল্যবান মনে করা হবে অভিজ্ঞতার চেয়ে? নাকি সিনিয়রিটিই পাবে প্রাধান্য? চিরন্তন ক্রিকেট প্রবাদ বলছে ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। এটা মানা হতেই পারে। ধরা যাক, আট মাস আগে দুরন্ত ছন্দে থাকা কেউ এখন নেটে টাইমিং করছেন না ঠিকঠাক। দল গড়ার সময় তখন কী দেখা হবে? আগের পারফরম্যান্স, নাকি এখনকার ছন্দে না থাকা? মনে করা হচ্ছে, টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। কোন খেলোয়াড়দের কী ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে, এটা খুব ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে বলে মনে করছেন প্রাক্তনরা।

আইপিএল আবার জন্ম দিয়েছে অনেক তারকার। জশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ড্য, রবীন্দ্র জাডেজাদের উত্থানের মূলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। এখানেই তাঁরা চোখে পড়েছিলেন ক্রিকেটবিশ্বের। কেড়ে নিয়েছিলেন প্রচারের আলো। সেই পারফরম্যান্সই তাঁদের ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছিল। এসেছিল জাতীয় দলে ডাক।

আমিরশাহিতে নজর কেড়ে নেওয়ার মতো প্রতিভা বলতে ক্রিকেটমহলের চোখে প্রথমেই ভেসে উঠছে যশস্বী জয়সওয়ালের চেহারা। মুম্বইয়ে ফুচকা বিক্রি করা বাঁ-হাতি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চারশোর বেশি রান করেছিলেন। লিস্ট এ ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডও রয়েছে তাঁর। নিলামে ২.৪ কোটি টাকায় রাজস্থান রয়্যালসে আসা যশস্বীর প্রতি প্রত্যাশাও অনেক। কোনও সন্দেহ নেই, নিজেকে মেলে ধরতে মরিয়া থাকবেন তিনিও।

আরও পড়ুন: নির্বাসন কাটিয়ে ফিরে অধিনায়কত্ব পাচ্ছেন না সাকিব​

অসম্ভব প্রতিভাবান বলে চিহ্নিত পৃথ্বী শ এ বারও নামবেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি তুলে ধরেছিলেন শর্টপিচ ডেলিভারিতে তাঁর সমস্যার কথা। যা বিশ্বক্রিকেটে এখন প্রচারিত। নেটে তাঁর ব্যাটিংয়ের ভিডিয়ো যতই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হোক, কোচ রিকি পন্টিং যতই তা ‘টপ শট’ বলে প্রশংসায় মাতুন, ম্যাচে বড় রান জরুরি।

আইপিএলের পর বিরাট কোহালিরা যাবেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে চার টেস্ট সিরিজ রয়েছে। তার মধ্যে একটি গোলাপি বলে দিনরাতের। টেস্ট সিরিজের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। দেশে ফিরে থাকছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ। তা শেষ হওয়ার পরই সম্ভবত আবার আইপিএল। আগামী বছরের অক্টোবরে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রবল চাপ নিয়ে নামবে টিম ইন্ডিয়া। মোদ্দা কথা, সামনে টানা ক্রিকেট। আর সেই কারণেই, নতুনদের দিকে থাকবে বাড়তি নজর। বোর্ড সূত্রে যা আভাস মিলছে, তাতে অস্ট্রেলিয়ায় বড়সড় দল নিয়ে যেতে পারে ভারত। নেট বোলারও যাতে বাইরে থেকে না নিতে হয়, এমন ভাবনা ডালপালা মেলছে। সে ক্ষেত্রে আইপিএলের পারফরম্যান্স বিমা হয়ে উঠতেই পারে অনেকের কাছে।

আরও পড়ুন: ছাড়ল না বাংলাদেশ, মুস্তাফিজুরকে চেয়েও পেল না নাইট রাইডার্স​

শোনা যাচ্ছে, কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই মরসুমে রঞ্জি ট্রফি, দলীপ ট্রফি, দেওধর ট্রফি নাও হতে পারে। ঘরোয়া ক্রিকেটে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা কার্যত অসম্ভব। আর বর্তমানে দাঁড়িয়ে তিন-চার মাস পরের কোনও পরিকল্পনা করা যাচ্ছে না। ফলে, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজন না করার কথাও ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। তেমন হলে, নবীন ক্রিকেটারদের কাছে আইপিএলই নিজেদের মেলে ধরার একমাত্র মঞ্চ হতে চলেছে। আর তাতেই বাড়ছে গুরুত্ব।

ঋষভ পন্থ কি নিজেকে ধোনির পরিবর্ত হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন? লোকেশ রাহুল কি উইকেটকিপিং ও ব্যাটিংয়ে সমান মনোযোগ ও ধারাবাহিকতা দেখাতে পারবেন? যুবরাজ সিংয়ের স্নেহধন্য শুভমন গিল কি জাতীয় দলে ঢোকার দাবি আরও জোরালো করবেন? প্রশ্নগুলো ঘোরাফেরা করছে ক্রিকেটীয় বাতাবরণে। শ্রেয়াস আইয়ার, মণীশ পাণ্ডে, ময়াঙ্ক আগরওয়ালরা নিশ্চিত ভাবে চাইবেন জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ আরও জোরদার হোক।

আরও একটা দিক থাকছে। পেস বোলিং আক্রমণ। কিউয়িদের দেশে টেস্ট সিরিজে বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিরাট কোহালির মুখে উঠে এসেছিল পরের প্রজন্মের পেসার খোঁজার ডাক। ইশান্স শর্মা অনেক দিন আগেই পেরিয়ে গিয়েছেন তিরিশের কোঠা। মহম্মদ শামি কয়েক দিন আগেই পড়লেন তিরিশে। বয়স কারওরই কমছে না। আর তাই কমলেশ নাগরকোটি, শিবম মাভির মতো বাংলার ঈশান পোড়েলের কাছেও এ বারের আইপিএল সোনার সুযোগ। অস্ট্রেলিয়ায় গতি-বাউন্স মাইলেজ দিতেই পারে দলকে। আর সুইং চিরাচরিত ভাবেই ব্যাটসম্যানের প্রাণঘাতী অস্ত্র। আবার দীপক চাহার, শার্দুল ঠাকুর, নভদীপ সাইনি, খলিল আহমেদরাও দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে জোর দেবেন বৈচিত্রে।

আইপিএলের প্রথা মেনে জাতীয় নির্বাচকরা এ বারও চোখ রাখবেন টিভির পর্দায়। আগেও আইপিএলের সময় নোটবুক হাতে বাড়ির ড্রয়িংরুমে পাওয়া যেত নির্বাচকদের। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর, সুনীল জোশির টিমকে সেই মেজাজে পাওয়া যাবে। করোনায় অনেক বদলেছে জীবন-জীবিকা, পাল্টেছে বিশ্ব। ব্যতিক্রম শুধু এটাই। মাঠে বসে নয়, অন্যবারের মতো যথারীতি নির্বাচকদের আইপিএল-দর্শন চলবে এলসিডি পর্দাতেই।

নিউ নর্মাল জীবনে স্রেফ এটাই যা নর্মাল ঠেকছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE