Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
আইপিএল টেবলের এক ও দুই নম্বর দলের লড়াই আজ ইডেনে
IPL 2024

শাহরুখ খান নাইট্‌স, আন্দ্রে রাসেলের নাচ, পুরস্কৃত সুনীল নারাইন

নাইটদের পুরস্কার বিতরণী: প্রত্যেক ম্যাচের শেষে কেকেআর ড্রেসিংরুমে নিজেদের পুরস্কার বিতরণী চলে। আজকাল অনেক দলই এটা করে।

অস্ত্র: অভিজ্ঞ নারাইনে আস্থাশীল শাহরুখ। 

অস্ত্র: অভিজ্ঞ নারাইনে আস্থাশীল শাহরুখ।  ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৪৬
Share: Save:

এক বনাম দুই: জনতার দরবারে সব চেয়ে মূল্যবান ম্যাচ হতে পারে কেকেআর বনাম আরসিবি। ইডেনে বিরাট কোহলিকে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না কেউ। সব চেয়ে বেশি টিকিটের চাহিদা এই ম্যাচের। একদম বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতো। কিন্তু ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের দিক থেকে কেকেআরের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ মঙ্গলবার। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে। টেবলের এক ও দুই নম্বরের লড়াই এবং কেকেআর কিন্তু এক নয়, দুইয়ে। কেকেআর ব্যাটিং দারুণ গতিতে ছুটছে। সুনীল নারাইন, ফিল সল্ট দুই ওপেনার ঝোড়ো শুরু দিচ্ছেন। আন্দ্রে রাসেল স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন। ও দিকে রাজস্থানের বোলিং এ বারের আইপিএলে কৃপণতম। ট্রেন্ট বোল্ট, আবেশ খান, কুলদীপ সেনের মতো পেসার রয়েছে। যুজ়বেন্দ্র চহাল রয়েছেন। অশ্বিন চোটের জন্য আগের ম্যাচে খেলতে পারেননি। মঙ্গলবার ফিরছেন।

নাইটদের পুরস্কার বিতরণী: প্রত্যেক ম্যাচের শেষে কেকেআর ড্রেসিংরুমে নিজেদের পুরস্কার বিতরণী চলে। আজকাল অনেক দলই এটা করে। মাঠে মাত্র একজনই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়। কিন্তু আরও অনেকের তো মূল্যবান অবদান থাকে ম্যাচ জেতানোর নেপথ্যে। যে ছেলেটা সর্বোচ্চ রান করল না অথচ মোক্ষম সময়ে নিজের উইকেটের তোয়াক্কা না করে দু’টো ছক্কা মেরে এল, সে যদি স্বীকৃতি পায় তা হলে দলগত খেলায় একটা অন্য রকম আবহ তৈরি হয় ড্রেসিংরুমে যে, আমার অবদান ছোট হতে পারে কিন্তু দল ভুলল না।

বিশ্বকাপের সময় যেমন রাহুল দ্রাবিড়দের উদ্যোগে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে সেরা ফিল্ডারকে পুরস্কৃত করার রেওয়াজ খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। পয়লা বৈশাখে লখনউ সুপার জায়ান্টসকে হারিয়ে কেকেআর পুরস্কৃত করল তিন জনকে। সর্বোচ্চ রান করা ফিল সল্ট এবং তিন উইকেট নেওয়া মিচেল স্টার্কের পাশাপাশি স্বীকৃতি পেল সুনীল নারাইনের বোলিং। মাত্র এক উইকেট পেলেও নারাইন চার ওভারে একটাও বাউন্ডারি খাননি। টি-টোয়েন্টির মতো খেলা যেখানে বোলারদের উপরে পাশবিক অত্যচার চলে। সোমবারের ম্যাচে শুধু সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদই মেরেছে ২২টি ছক্কা। সেখানে ইডেনে রানের উইকেটে নারাইনের এমন কৃপণ বোলিং জাদুঘরে স্থান পাওয়ার মতো।

শাহরুখ নাইট: আইপিএল শুরুর সময়ে অলিখিত স্লোগান ছিল— খাও, পিয়ো, ক্রিকেট খেলো, পার্টি করো। ম্যাচের শেষে হোটেলে ফিরে ভোর পর্যন্ত লেগে থাকত পার্টি। তার উপরে দলের মালিক যদি হন বলিউডের বাদশা, তা হলে তারকা উপস্থিতির সংখ্যা ব্লকবাস্টার ছবির মতোই হয়ে ওঠে। অদৃশ্য ক্যাপশন তৈরি হয়ে যায়— যেখানে ক্রিকেট মিলেছে বলিউডের সঙ্গে। শাহরুখ খানের সঙ্গী হয়ে কখনও আসতেন হৃতিক রোশন, কখনও ক্যাটরিনা কাইফ বা দীপিকা পাড়ুকোন। হালফিলে পার্টির মেজাজটাই উড়ে গিয়েছিল। তার এক নম্বর কারণ কেকেআর জিততেই ভুলে গিয়েছিল। শাহরুখও কোনও রকমে বুড়ি ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটা-দু’টো ম্যাচে আসতেন।

এ বারে পুরনো কেকেআর গৌরব ফেরানোর জন্য ঝাঁপিয়েছেন স্বয়ং টিম মালিক। গৌতম গম্ভীরকে ফিরিয়ে এনেছেন। দল পাঁচটার মধ্যে চারটে জিতেছে। বেগুনি ঘোড়া আবার ছুটছে। ইডেনে দু’টি ম্যাচের দু’টিতেই ছিলেন শাহরুখ। বিশাখাপত্তনমে দিল্লি ম্যাচে গিয়েছিলেন। রবিবার সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন কন্যা সুহানা, পুত্র আব্রাম এবং উঠতি নায়িকা চাঙ্কি পাণ্ডের কন্যা অনন্যা পাণ্ডে। বাংলা নববর্ষের দিনে লখনউকে উড়িয়ে হোটেলে ফেরার পরে পার্টির ব্যবস্থা করেন শাহরুখ। সেখানে আন্দ্রে রাসেলকে দেখে কারও কারও মনে পড়ে যাচ্ছিল পুরনো দিনের ক্রিস গেলকে। ‘ছম্মক ছলো’-র সঙ্গে নাকি এমন নেচেছেন যে, বলিউড থেকে অফার আসতেই পারে। ক্যালিপসো পরম্পরা শুধু ব্যাট হাতে নয়, ডান্স ফ্লোরেও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দ্রে রাস।

ম্যাচের পরে ড্রেসিংরুমে যখন নাইটদের পুরস্কার বিতরণী চলছিল, সিইও বেঙ্কি মাইসোর বলেন, ‘‘লখনউকে নিয়ে একটা হিসাব সকলের মুখে মুখে ঘুরছিল। তিন বারে আমরা তিন বারই হেরেছি। এ বার সেই হিসাব উল্টে দিতে পেরেছি আমরা। তার কারণ এই লোকটা।’’ গৌতম গম্ভীরকে দেখিয়ে মাইসোর যোগ করেন, ‘‘এই লোকটাকে লখনউয়ের নয়, এখন আমাদের দিকে।’’ শুনে তৃপ্তির হাসি হাসছিলেন শাহরুখ। সোমবারও কলকাতা ছেড়ে যাননি শাহরুখ। দলের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। তবে মঙ্গলবার রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে মাঠে থাকবেনই, জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। শোনা গেল, জরুরি কাজে মঙ্গলবার সকাল বা দুপুরের দিকে বেরিয়েও যেতে পারেন। তবে যে ভাবে আগের মতো সেই আবেগ নিয়ে বেগুনি জার্সির সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন, তাতে সমস্ত কাজ ফেলে ইডেনে মঙ্গলবার উপস্থিত হলেও অবাক হওয়ার থাকবে না।

স্টার্কের প্রত্যাবর্তন: নাইট শিবিরে বৈশাখী হাওয়া এনে দিচ্ছে মিচেল স্টার্কের তিন উইকেট। এই প্রথম তাঁর ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা নিয়ে কথা কম হচ্ছে, বোলিং নিয়ে চর্চা বেশি। স্টার্ক রবিবার ম্যাচের পরে টিভিতে পাল্টা বাউন্সার দিয়েছেন আকাশ চোপড়াকে। অস্ট্রেলীয় পেসারের নিলাম মূল্য নিয়ে একের পর এক কটাক্ষ করে যাচ্ছিলেন আকাশ। তিন উইকেট নিয়ে স্টার্কের পাল্টা তির— ‘‘আকাশ চোপড়া কে আমি চিনি না। তবে বিনীত ভাবে জানিয়ে দিতে চাই, আমাকে ২৫ কোটি তো উনি দেননি। তাই আমার মূল্য নিয়ে কান্নাকাটি বন্ধ করুন। আশা করি আজকের ম্যাচে আমার বোলিংটা দেখেছেন।’’ বোঝাই যাচ্ছে, অবশেষে ছন্দ খুঁজে পাওয়া চলনে-বলনেও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে। তবে স্টার্কের জন্য অনেক কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করবে মঙ্গলবার। লখনউ আর রাজস্থান রয়্যালস কিন্তু এক নয়। সঞ্জু স্যামসন রান পাচ্ছেন। জস বাটলার ঝোড়ো সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহলিদের আরসিবি-কে হারিয়েছেন। রিয়ান পরাগ অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে রয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন উদিত তারা যশস্বী জয়সওয়াল এখনও পর্যন্ত নিষ্প্রভ। কিন্তু ইডেন পা রাখলে নিশ্চয়ই তাঁর মনে পড়ে যাবে, গত বছরই তো এখানে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে গিয়েছি। তা হলে আজ পারব না কেন? শিমরন হেটমায়ার, রভম্যান পাওয়েলরদের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানও রয়েছে তাদের।

জিতেও আত্মতুষ্টি নয়: গৌতম গম্ভীর মেন্টর মানে হেলায় ম্যাচ জিতেও নিশ্চিন্তে ঘুমনোর বিলাসিতা ভুলে যাও। পার্টি করো, নাচগান করো সবই ঠিক আছে। কিন্তু দারুণ করেছি, ফাটিয়ে দিয়েছি মনোভাব নিয়ে আরাম করার কোনও সুযোগ নেই। গম্ভীরের নিশ্চয়ই চোখ এড়ায়নি যে, লখনউয়ের এই নিরামিষ বোলিংকে সামনে পেয়েও আরও তাড়াতাড়ি রানটা তোলা গেল না কেন? শ্রেয়স আয়ারের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে এসেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ১২০-১২৫ স্ট্রাইক রেট? কেকেআর অধিনায়ক বোর্ড ও নির্বাচকদের কড়কানি খেয়ে চাপে আছেন। নিজের উইকেট বাঁচানোর জন্য খেলছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে কত ক্ষণ? হার্দিক পাণ্ড্যর উদাহরণ তো হাতের সামনেই রয়েছে। গুরু গম্ভীরের মন্ত্র ব্যক্তির আগে দল। স্বার্থপর ব্যাটিং দেখলে অধিনায়ককেও কি ছেড়ে কথা বলবেন? সময় বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE